|
২০০৮ সালের জুলাই মাস থেকে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংকটের কারণে বিশ্বের বাণিজ্যিক চাহিদা স্পষ্টভাবে হ্রাস পেয়েছে। এটি ইউরোপ ও এশিয়ার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। বর্তমানে বিশ্বের অর্থনীতি বিভিন্ন দেশের যৌথ সহযোগিতায় ইতিবাচকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে সার্বিক পুনরুদ্ধার সম্পন্ন হওয়ার কাজ হবে একটি বন্ধুর প্রক্রিয়া। ইউরোপ ও এশিয়ার তৃতীয় অর্থনৈতিক ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বলেছেন, চীন ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও সহযোগিতা আরো জোরদার করতে আগ্রহী। যাতে বিশ্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার যৌথভাবে ত্বরান্বিত করা যায়। তিনি বলেন, (১)
চীন ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগ ক্ষেত্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা, বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির পরস্পরের অনুপুরক প্রাধান্য পুরোপুরি পরিস্ফুর্ত এবং বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী। এর পাশাপাশি টেলিযোগাযোগ, পরিবহন ও জ্বালানি সম্পদসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের পুঁজি বিনিয়োগ অব্যাহতভাবে সম্প্রসারণ করা এবং বাণিজ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়ার সেবা সমর্থন করা।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপ ও এশিয়ার অর্থনৈতিক বিনিময় ও সহযোগিতা ধাপে ধাপে বাড়ছে। ইতোমধ্যেই চীন এবং কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও তুর্কমেনিস্তান মধ্য এশিয়ার এ পাঁচটি দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা খুব দৃষ্টি আকর্ষণী। ১৯৯২ সালে চীন ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল শুধু ৫২ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার । ২০০৮ সালে তাদের মধ্যে লেনদেনের পরিমাণ হয়েছে ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার । ১৭ বছরে দু'পক্ষের বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ৫০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে জুন মাস পর্যন্ত চীন ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ইউরোপ ও এশিয়ার তৃতীয় অর্থনৈতিক ফোরামে যোগদানকারী কাজাখস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সের্গেই টেরেকছশেনকো বলেছেন, রাশিয়া, বেলারুশ ও কাজাখস্তানের মধ্যে শুল্ক মিত্রতা ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এটি চীনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান জ্বালানি সম্পদ, কৃষি ও ওষুধসহ বিভিন্ন প্রযুক্তির প্রাধান্য ব্যবহার করে অন্যান্য দেশকে ভালো সুযোগ দেবে এবং চীন ও কাজাখস্তানের অর্থনীতি পরস্পরের উপকারিতা ও উভয় পক্ষের জন্যই কল্যাণ বাস্তবায়ণের ক্ষেত্রে অনুকূল হবে। তিনি বলেন, (২)
আমি বোধ করছি যে, আন্তঃদেশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরস্পরের উপকারিতামূলক সহযোগিতা জোরদারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে পরিণত হচ্ছে।
অংশগ্রহণকারীরা বলেছেন, বর্তমান বিশ্বের বাণিজ্য বিন্যাস গভীরভাবে সুবিন্যস্ত হওয়ার পটভূমিতে ইউরোপ ও এশিয়ার দেশগুলোর উচিত বাণিজ্যিক সহযোগিতা আরো গভীর করা, বাণিজ্যিক উন্নয়নের মান ও আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দ্বীশক্তি বৃদ্ধি করার প্রয়াস চালানো। যাতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রাণশক্তি যোগাতে পারে।
চীনের বৈদেশিক আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার বাণিজ্যিক নিশ্চয়তা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে চীনের আমদানি ও রপ্তানি ব্যাংক ইউরোপ ও এশিয়ায় গভীর ও ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করেছে। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে যে, জ্বালানি সম্পদ, বিদ্যুত্ ও পরিবহন ইত্যাদি। এসব কাজ এ অঞ্চলের বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগের উপায় ফলপ্রসূভাবে সম্প্রসারণ এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা, কর্মসংস্থান বাড়ানো ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। চীনের আমদানি ও রপ্তানি ব্যাংকের পরিচালক লিউ লিয়ন কো বলেছেন, (৩)
চীনের আমদানি ও রপ্তানি ব্যাংক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার বাণিজ্যিক সংস্থা হিসেবে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতাকে বরাবরই গুরুত্ব দেয়। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ চীন থেকে ৪০ বিলিয়ন রেন মিন পি ঋণ পেয়েছে। এসব ঋণের বেশির ভাগ বুনিয়াদী ব্যবস্থা ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের উন্নয়ন প্রাধান্য রয়েছে এমন প্রকল্পে ব্যবহৃত হয়েছে। চীন মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য অবদান রেখেছে। ভবিষ্যতে চীনের আমদানি ও রপ্তানি ব্যাংক চীন এবং মধ্য এশিয়ার আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করার জন্য অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালাবে।
ইউরোপ ও এশিয়ার জ্বালানি সম্পদ ভোক্তার বাজার খুব বড়। এর পাশাপাশি এ অঞ্চলের জ্বালানি সম্পদ প্রচুর। জানা গেছে, রাশিয়ার তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার মজুদের পরিমাণ যথাক্রমে বিশ্বের মোট মজুদের পরিমাণের ১৩ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ১২ শতাংশ। কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তানেও বেশ কিছু তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। বর্তমানে কাজাখস্তান, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া ও চীনের জ্বালানি সম্পদের সহযোগিতা দ্রুততর হচ্ছে। চলতি বছরে ইতোমধ্যেই চালু হওয়া চীন-মধ্য এশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপ লাইন প্রতি বছর চীনে ৭০ বিলিয়ন ঘনমিটার প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, প্রাকৃতিক শর্ত ও দেশের নীতির পরিবেশসহ বিভিন্ন উপায়ে ইউরোপ ও এশিয়ার আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার ব্যাপক সুপ্ত শক্তি খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণের উন্নয়ন ও বিনিময় ধাপে ধাপে সম্প্রসারণের পাশাপাশি ইউরোপ ও এশিয়ার সহযোগিতা বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহতভাবে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |