Web bengali.cri.cn   
চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা গভীরের উপায় খুঁজে বের করা
  2009-12-10 16:45:27  cri
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম বারের মত চীন সফর করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট পদ নিযুক্ত হবার প্রথম বছরে চীন সফর করেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস প্রথম বারের মত। চীন-মার্কিন বহু দৃষ্টি-আকর্ষী প্রশ্নের মধ্যে আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানের আর্থিক সংকটের পটভূমিতে বিশ্বের বৃহত্তম উন্নত দেশ ও বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশ আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা গভীরের উপায় খুঁজে বের করা দরকার। যাতে সংকট যৌথভাবে মোকাবিলা করা যায়।

বর্তমানের বিশ্বের প্রথম ও তৃতীয় অর্থনৈতিক সপ্তা হিসেবে গত ৩০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক লেনদেন ১৩০গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৭৯ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক লেনদেন শুধু ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ সালে ৩৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বর্তমানে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদারে পরিণত হয়েছে। সফরকালে বারাক ওবামা চীনা যুবকযুবতীদেরকে বলেছেন, বাণিজ্যিক উন্নয়ন চীন-মার্কিন সম্পর্ক অব্যাহতভাবে গভীরের জন্য ত্বরান্বিত করেছে। ওবামা বলেছেন, (১)

বাণিজ্য বহু ক্ষেত্রে জনগণের জীবনের ওপর প্রভাব ফেলেছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটারের ভেতরে রওয়ার অনেক খুচরা যন্ত্রাংশ ও মার্কিনী পড়ার বেশি কাপড় চীন থেকে আমদানি করেছে। আমরা চীনের শিল্প উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় ব্যবহারের সাজ-সরঞ্জাম রপ্তানি করেছি। এ ধরণের বাণিজ্য বহু কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক উন্নয়নের ভিত্তিতে মার্কিন-চীন আরো ভালো সমৃদ্ধ হতে পারবে। বর্তমানে দু'দেশের সহযোগিতা ইতিবাচক ও গঠনমূলক। এতে দু'দেশ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর অংশীদারিত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য কল্যাণ সৃষ্টি করেছে। এসব বিষয় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে যে, আর্থ পুনরুদ্ধার, দূষণ-বিহীন জ্বালানি সম্পদের উন্নয়ন, পরমাণু অস্ত্র অবিস্তার এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ত্বরান্বিত করা ইত্যাদি ইত্যাদি।

তবুও বিশ্বের আর্থিক সংকটে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও নেতিবাচক প্রভাব ফেলানো হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক লেনদেন ২১১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে।

এর পাশাপাশি চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সংঘাত আবার ঘটেছে। এর জন্য চীনের আধুনিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ক গবেষণা বিভাগের পরিচালক ইউয়ান ফেং মনে করেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক লেনদেন খুব বড়। বাণিজ্যিক সংঘাত হবার পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিক। তবে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক সংঘাত আবার ঘটানোর প্রধান কারণ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বাজার অর্থনীতির মর্যাদা অস্বীকার করে। তিনি বলেছেন, (২)

যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেন ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। এতো বেশি বাণিজ্যিক লেনদেনে সংঘাত ও মতভেদ রওয়া আজগুবী নয়। চীন সংস্কার ও উন্মুক্তকরণের নীতি বাস্তবায়নের ত্রিশ বছরে চীন অবাধ বাণিজ্যের দৃঢ় সমর্থনকারীয় পরিণত হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বাজার অর্থনীতির মর্যাদা স্বীকার না হলে বাণিজ্য সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে পারে না।

তাছাড়া, এবার ওবামার চীন সফরকালে দু'পক্ষ আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা বিষয় সম্পর্কে গভীর ও সরল আলোচনা করেছে। দু'দেশের নেতৃবৃন্দ বৈঠকের আগে দু'দেশের বাণিজ্য মন্ত্রীরা বৈঠক করেছেন। তারা বলেছেন, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা জোরদার করবে এবং আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দু'দেশ প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, দু'পক্ষ জানিয়েছে যে, বাণিজ্য উন্মক্ত ও পুঁজি বিনিয়োগ স্বদেশের অর্থনীতি এবং বিশ্বের অর্থনীতির ওপর গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে। দু'পক্ষ গঠনমূলক, সহযোগিতামূলক ও পরস্পরের উপকারিতামূলক মনোভাব নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও পুঁজি বিনিয়োগের বিবাদ ইতিবাচকভাবে নিরসণ করা এবং নানা ধরণের সংরক্ষণবাদ যৌথভাবে বিরোধীতা করার ব্যাপারে রাজি হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট হু চিন থাওও এ কথা জোর দিয়ে বলেছেন। তিনি বলেছেন, (৩)

আমরা বর্তমানের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ে মত বিনিময় করেছি। আমরা মনে করি, বর্তমানে বিশ্বের অর্থনীতি স্থিতিশীল ও উন্নয়নের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। তবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ভিত্তি দৃঢ় নয়। দু'পক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি ক্ষেত্রে সংলাপ ও সহযোগিতা অব্যাহতভাবে জোরদার, সমান আলোচনার মাধ্যমে দু'দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সংঘাত সংক্রান্ত সমস্যা যথোচিতভাবে সমাধান এবং দু'পক্ষের আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক সুষ্ঠু ও স্থিতিশীল উন্নয়ন যৌথভাবে সুরক্ষার কথা আরেক বার ঘোষণা করেছে। আমি প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে জোর দিয়ে বলেছি, বর্তমানের পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত আরো দৃঢ় মনোভাবের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সংরক্ষণবাদ বিরোধীতা করা।

দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল রেন মিন পি'র বিনিময় হার। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চীনের ব্যাপক বাণিজ্যিক অনুকূল উদ্ধৃত্ত বজায় রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু শিল্প ও রাজনৈতিক মহলের ব্যক্তিগণ মনে করেন, এতো ব্যাপক বাণিজ্যিক অনুকূল উদ্ধৃত্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে রেন মিন পি'র বিনিময় হার নিম্ন। যার ফলে চীন রপ্তানির দ্রব্যের উত্পাদনের ব্যয় উচুঁ নয়। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প খাতে হুমকি দিয়েছে। তবে চীন সরকার বরাবরই জোর দিয়ে বলেছে, রেন মিন পি'র বিনিময় হার অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া বাণিজ্য অসামাল হওয়ার সমস্যা সমাধানের জন্য হিতকর নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চীন সফরকালে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইয়াও চিয়েন এ প্রস্তাব আরেক বার ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেছেন, (৪)

চলতি বছর থেকে চীনের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চীনের বাণিজ্যিক অনুকূল উদ্ধৃত্ত ১৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যানে চীনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ঘাটতি ১৫ শতাংশ কমে গেছে। দু'পক্ষের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, চীনের বাণিজ্যের ভারসাম্য পরিস্থিতি স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চীনের বাণিজ্যিক অনুকূল উদ্ধৃত্ত হ্রাস পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040