Web bengali.cri.cn   
দুবাইয়ের ঋণ সংকট
  2009-12-03 19:11:13  cri
গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান---দুবাই বিশ্ব গোষ্ঠী তার কাঠামোতে রদবদলের কাজ শুরু এবং ঋণ পরিশোধনে তারিখ পিছিয়ে দেয়ার কথা ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে ব্যাংকিং বাজারে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বিশ্বজুড়ে প্রধান প্রধান সেয়ার বাজার , মুদ্রা বিনিময় বাজার, অশোধিত তেল ও স্বর্ণের ফিউজারস দাম রাতরাতি পড়ে গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থবিনিযোগকারীরা আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তাহলে দুবাইয়ের ঋণ সংকটের দরুণ কি সত্যিই বিশ্বব্যাপী আর্থিক সুনামির সৃষ্টি হতে পারে? কোন কোন অর্থনীতিবিদরা কিন্ত তা মনে করেন না ।

গত ২৫ নভেম্বর দুবাই বিশ্ব গোষ্ঠী তার কাঠামোর রববদল এবং ঋণ পরিশোধের তারিখ ৬ মাসের জন্য পিছিয়ে দেয়ার খবর প্রকাশ করে। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পরপরই দুবাইয়ের ঋণ সংকটের খবর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিশ্বের শেয়ার বাজারে তীব্র আলোড়নের সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক আস্থা নির্ণয় সংস্থা দুবাই সরকারের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোর ঋণ সংক্রান্ত যাচাই শ্রেণী কমিয়ে দিয়েছে। আগের বেশ কয়েকটি" বিনিয়োগ শ্রেণী" সংস্থা এখন " আবর্জনা শ্রেণী" সংস্থায় পরিণত হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর দুবাইয়ের ঋণদাদা হিসেবে ইউরোপের বিভিন্ন বড় বড় ব্যাংকের সেয়ার গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইউরোপের তিনটি বড় শেয়ারের সূচী পড়েছে ৩ শতাংশেরও বেশী। ২৬ নভেম্বর ধন্যবাদ দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারগুলো বন্ধ ছিল। ২৭ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শেয়ার বাজার একই ঝামেলায় পড়ে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ার বাজারের সূচীও অনেক পড়ে যায়। চীনের শেয়ার বাজারের কোন পরিবর্তন হয়নি। তা ছাড়া, কয়েকটি বড় ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে প্রকাশ করেছে যে, তারা " দুবাই বিশ্ব" প্রকাশিত ঋণধারী নয়। কোন কোন ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এমন কি ঘোষণা করেছে যে, " দুবাই বিশ্বের" সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। উপরন্তু দুবাইয়ের ঋণ সংকট দ্বিতীয় দফা বিশ্ব মন্দা ঘটবে কি না তা নিয়ে আলোচনার জন্য বিশ্বের গণ মাধ্যমে বিশেষ কলাম লিখানো শুরু হয়েছে।

এক সময় বিশ্বজুড়ে আতংকি অর্থবিনিয়োগকারীতে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু অনেক অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন, দুবাইয়ের ঋণ সংকট কেবল মাত্র একটি আঞ্চলিক সংকট। বতর্মান পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় , এই সংকট দ্বিতীয় দফা বিশ্ব মন্দা সৃষ্টি করতে পারবে। তা ছাড়া, এই সংকট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।

বিশ্লেষকগণ বলেছেন, প্রথমত: বতর্মানে আন্তর্জাতিক বাজারে শেয়ার, তেল , স্বর্ণের দাম পড়ার কারনের জন্য পুরোপুরিভাবে দুবাইয়ের ঋণ সংটক নয়। আসলে অর্থবিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস না থাকা এর প্রধানতম কারন। বতর্মানে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষণ দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভবিষ্যত অস্পষ্ট। অর্থবিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস সম্পূর্ণভাবে ফিরে আসেনি। এ ধরনের পরিবেশে যে কোন প্রতিকূল খবর অর্থবিনিয়োগকারীদের ওপর আঘাত হানতে পারে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, গত ২৭ নভেম্বর ইউরোপীয় শেয়ার বাজারে সূচী কিছুটা উঠা থেকে বোঝা যায় যে, অর্থবিনিয়োগকারীরা দুবাইয়ের ঋণ সংকট নিষ্ঠার সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। সুতরাং এ কথাও বলা যায় যে, দুবাইয়ের ঋণ সংকট বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই।

দ্বিতীয়ত: দুবাইয়ের ঋণ সংকট কেবল মাত্র আঞ্চলিক সংকট। এই সংকট বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ওপর বেশী প্রভাব ফেলবে না। দীর্ঘকাল ধরে দুবাই নিজেকে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং কেন্দ্র হিসেবে তৈরী করতে চায় । কিন্তু এখন পযর্ন্ত দুবাই আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং কেন্দ্র নয়। দুবাইয়ের ঋণ সংকট ঘটার পর ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন সাংবাদিকদের বলেছেন, অতীতের তুলনায় বিশ্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থা অনেক শক্তিশালী। সুতরাং বিশ্ব ব্যাংকিং ব্যবস্থা এই সংকট সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম। উপরন্তু, দুবাইয়ের ঋণ সংকট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, দুবাইয়ের ঋণ সংকট কেবল ব্যাংকিং বাজারের একটি ছোট সমস্যা। এই সংকট বিশ্ব মন্দার সঙ্গে তুলনা করা যায় না। অন্য দিকে দুবাই সরকারের কর্মকর্তারাও বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, কোম্পানির নিজস্ব তহবিলের কারনে দুবাই বিশ্ব গোষ্ঠি ঋণ পরিশোধের তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, দুবাই বিশ্ব গোষ্ঠীর এ সব ঋণ পরিশোধন করার ক্ষমতা নেই। মধ্য প্রাচ্য অঞ্চলের কোন কোন গণ মাধ্যমে বলা হয়েছে, বিশ্ব সম্প্রদায় দুবাইয়ের ঋণ সংকট বাড়াবাড়ি করেছে। এমন কি বিশ্বের কোন কোন সংগঠন মূনাফা অর্জনের লক্ষ্যে এই ঘটনা বাড়াবাড়ি করে তুলেছে।

তৃতীয়ত: এই সংকট মোকাবিলা করতে দুবাই যুক্ত আরব আমিরাত সরকারের ওপর নির্ভর করতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, উপ সাগরীয় অঞ্চলের তের সম্পদে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে যুক্ত আরব আমিরাতের অর্থনীতি শক্তিশালী। যুক্ত আরব আমিরাত সরকার নি:সন্দেহে দুবাইয়ের ঋণ সংকটকে অবহেলা করবে না। এই সংকট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাটিয়ে উঠার জন্য যুক্ত আরব আমিরাত অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। বতর্মানে যুক্ত আরব আমিরাতের আবজাবি ব্যাংক মহল জানিয়েছে, আবজাবির বিভিন্ন বড় বড় ব্যাংক দুবাই শিল্প প্রতিষ্ঠাকে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ ঋণ দেবে। অন্য দিকে যুক্ত আরব আমিরাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দু'টো ব্যক্তিগত ব্যাংক দুবাই শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ১৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের সহায়তা দিয়েছে। স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, এই ঘটনা অব্যাহত থাকার সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত আরব আমিরাত সরকার আরও বেশী সহায়তা দেবে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিশ্বাস , অদুর ভবিষ্যতে দুবাইয়ের ঋণ সংকট সঠিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040