|
যিনি কথা বললেন, তার নাম হলো লুও শাং হুয়া। সি ছুয়ান প্রদেশের উত্তরাঞ্চলের কুয়াং ইয়ান শহরের মা কৌ গ্রামে তিনি বসবাস করেন। গত বছরের ১২ মে'র ওয়েন ছুয়ান ভূমিকম্পে তার বাড়ি সব পতন পড়েছে। তিনি পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ীতে বসবাস করেন। তার কোন আয়ও নেই।
মা কৌ গ্রামের আয়তন পাঁচ বর্গকিলোমিটার। সেখানকার জনসংখ্যা প্রায় আটশো। ভয়াবহ ভূমিকম্প এ গ্রামের ওপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। মা কৌ গ্রামের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা ওয়াং সিয়ান লিয়ে আমাদের সংবাদদাতাকে বলেছেন, '১২ মে'র ভুমিকম্পের পর আমাদের গ্রামের অবকাঠামোর ৮০ শতাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। ৬২টি বাড়ি একেবারে ধ্বংস হয়ে যায় এবং ১০১টি বাড়ি সববাসের উপযোগী নয়।
তিনি বলেন, ভূমিকম্পের আগে এ গ্রামের গড়পড়তা আয়ের পরিমাণ ৩৫ হাজার ইউয়ান ছিল। পরে এ পরিমাণ কমে ১৮ হাজার ইউয়ানে দাঁড়িয়েছে। তিনটি অংশের একটি অংশ গ্রামবাসীদের ভূমিকম্পের জন্য দারিদ্রতায় নিপতিত হয়েছে।
ওয়েন ছুয়ান ভূমিকম্প কবলিত অঞ্চলের মধ্যে ৮০ শতাংশ চীন সরকারের ত্রাণসাহায্য প্রদান তালিকায় রয়েছে। সেখানে গরিব লোকের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। ৪৮শটিরও বেশি গ্রাম মা কৌ গ্রামের মত দুর্ঘটনার জন্য আরও গরিব হয়েছে। এ অঞ্চলের লোকজন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চীনের রাষ্ট্রীয় পরিষদের দারিদ্র বিমোচন বিষয়ক কার্যালয় ও জাতিসংঘের উন্নয়ন দপ্তর যৌথভাবে মা কৌ ছুন গ্রামসহ সিছুয়ান, শান সি এবং কান স্যু প্রদেশের ১৯টি গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে দু'বছরব্যাপী দুর্যোগের ঝুঁকি কমানো পরিকল্পনা প্রবর্তন করবে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিটি গ্রাম ১০ লাখ ইউয়ান আর্থিক সাহায্য পাবে।
সরকারের সঠিক সমর্থনে ও সহায়তায় মা কৌ গ্রাম এখন দারিদ্র্য বিমোচনের পথে এগুচ্ছে। চীন সরকারের আর্থিক বরাদ্দ ও নিজের চেষ্টায় লুও শাং হুয়া পরিবার এখন স্থায়ী বাড়িতে উঠতে পেরেছেন। তিনি বলেন, 'গত ফেব্রুয়ারী মাসে বাড়ি নির্মাণের সব কাজ সম্পন্ন হয়। ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ দিকে আমরা নতুন বাড়িতে উঠতে পেরেছি।
মা কৌ গ্রামে আরও কিছু অধিবাসী এখনো নতুন বাড়িতে উঠতে পারে নি। ওয়াং সিয়ান লিয়ে আমাদের সংবাদদাতাকে জানিয়েছেন, কৃষকদের পরিবারের পরিস্থিতি অভিন্ন বলে বাড়ির পুনর্গঠনের কাজের প্রক্রিয়ারও পার্থক্য রয়েছে। চীন সরকার কৃষকদের নির্দিষ্ট ভতুর্ক দেয়। কিন্তু কিছু কিছু কৃষকের নতুন বাড়ি নির্মাণের যথেষ্ট পয়সা নেই। তাদের সাহায্যের জন্য চীন সরকারের রাষ্ট্রীয় পরিষদের দারিদ্র্য বিমোচন কার্যালয় ১ লাখ ৫০ হাজার ইউয়ান, জাতিসংঘের উন্নয়ন দপ্তর ৫০ হাজার ইউয়ান বরাদ্দ করেছে এবং প্রতিটি কৃষকের কাছ থেকে তিনশ ইউয়ান নিয়ে গ্রামীন পর্যায়ের পরস্পরের প্রতি আর্থিক সাহায্য তহবিল স্থাপন করা হবে। কৃষকরা এ তহবিল থেকে পুনর্গঠনের জন্য ঋণ নিতে পারবে। ওয়াং সিয়ান লিয়ে বলেন, পুনর্গঠনের জন্য আমরা গ্রামাঞ্চলে পরস্পরের প্রতি আর্থিক সাহায্য তহবিল স্থাপন করেছি। এর মাধ্যমে যারা বাড়ি নির্মান করতে পারেন না, তাদেরকে নতুন বাড়ি নির্মানে সাহায্য করবে।
স্থায়ী বাড়িতে স্থানাস্তর হওয়া মানে সুখ জীবন শুরু করা। কিন্তু আরও সুখী জীবন-যাপনের জন্য কীভাবে সমৃদ্ধ হওয়া যায়, তা ছিল মা কৌ গ্রামের কৃষকদের আলোচ্য বিষয়। তারা এ নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছেন। অবশেষে স্থানীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা মুরগী লালন-পালন, সবজি এবং ফল চাষসহ বিভিন্ন কৃষি শিল্পের উন্নয়ন করবেন। ওয়াং সিয়ান লিয়ে এ সম্পর্কে বলেন, স্থানীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা তিনটি নতুন কৃষি অঞ্চলের উন্নয়ন করছি। শুকর লালন-পালনের পাশাপাশি আমরা বন সম্পদের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ২০ হাজার মুরগী লালন-পালন করেছি।
মা কৌ গ্রামের সবার মত লুও শাং হুয়ার পরিবারও জীবন-যাপনের মান উন্নয়নের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। লু শাং হুয়া বলেন, 'অন্যদের চেয়ে আমরা সবচেয়ে বেশি শুকর লালন-পালন করেছি। তাছাড়া আমরা এক একর জমিতে হাই চিয়াও চাষ করেছি। তা থেকে প্রতি বছর ৬ থেকে ৭ হাজার ইউয়ান আয় করতে পারি।
বর্তমানে মা কৌ গ্রামের অবকাঠামোগত নির্মাণ শেষ হয়েছে। ওয়াং সিয়ান লিয়ে বলেছেন, তিন দিনের মধ্যে ঋণ ফেরত দেয়া হবে এবং তিন বছর পর পুরো গ্রামে কৃষকদের আয় ভূমিকম্পের আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে বলে তারা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। অর্থাত্ তিন বছর পর এ গ্রামের কৃষকদের গড়পড়তা আয়ের পরিমাণ আগের ৩৫ হাজার ইউয়ানের চেয়ে দ্বিগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |