Web bengali.cri.cn   
পাঠ ১৫ বানররাজ সুন উখোং'র-এর জম্মকথা
  2011-05-17 19:21:02  cri

আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, কাঠুরিয়া বানররাজকে বলল, "এই পর্বতের গভীরে একটি অর্ধচন্দ্র আর ত্রিতারকা গুহা আছে। সেখানে আচার্য বোধি নামে একজন মহর্ষি বাস করেন। সু উখোং ওখানে গেল। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে দরজায় টোকা দিতে তার সাহস হল না। সেখানে বসে অপেক্ষা করতে করতে তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটল। তখন সে একটা পাইন গাছে উঠে পাইন-ফল খেতে লাগল।...

আরোও বহুক্ষণ কেটে যাওয়ার পর গুহার প্রবেশ পথ আস্তে আস্তে খুলল, আর ভেতর থেকে বেরিয়ে এল ঋষিবেশী এক কিশোর। বানররাজ গাছ থেকে লাফিয়ে নিচে নেমে এল। কিশোর তাকে দেখে জিজ্ঞেস করল,"তুমি কি আচার্যের কাছে বিদ্যা শিখতে এসেছ?" বানররাজ তাড়াতাড়ি তাকে অভিবাদন করে বলল," হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। কিশোর বললো, "আচার্য এখন বেদীতে বসে ধর্মোপদেশ দিচ্ছেন। তিনি তোমাকে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন, চলো আমার সংগে!"

নিজের জামাপোষাক আর টুপি ঠিক করে নিয়ে বানররাজ কিশোরকে অনুসরণ করে গুহার মধ্যে ঢুকলো। গুহার দৃশ্য দেখে সে অবাক হয়ে গেল। ছোট মন্দিরের মতো একটার পর একটা ঘর আর তার সংগে লাগোয়া লম্বা বারান্দা। এমনি কতগুলো কক্ষ এবং কক্ষের ভেতরের নিভৃত কক্ষ পার হয়ে তারা এসে দাঁড়াল জেড পাথরের তৈরি একটি বেদীর সামনে।

বানররাজ দেখলো, আচার্য বোধি বসে আছেন পদ্মাসনে, তাঁর দু'পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে অনেক কিশোর। বানর তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করতে করতে প্রার্থনা করলো, "গুরুদেব, আমি সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে বছর দশেক ধরে মহাগুরুর সন্ধান করতে করতে এখানে এসে পৌঁছেছি, দয়া করে আমাকে আপনার শিষ্য করে নিন।"

আচার্য মৃদু হেসে বললেন, "তুমি কোথা থেকে এসেছ? বাড়ী কোথায়? তোমার নামই বা কী?" বানররাজ সংগে সংগে উত্তর দিল "আমার বাড়ী মহাদেশের আওলাই রাজ্যের ফল-পুষ্প পর্বত গুহায়। আমার না আছে পদবী, না আছে কোন নাম; না আছে বাবা, না আছে মা। আমার জন্ম হয়েছে পাথরের একটি চাঁই থেকে। তাই দয়া করে গুরুদেব আমাকে একটা পদবী দিন, আর নাম দিন।"

আচার্য বোধি বললেন, "ঠিক আছে, তুমি উঠে দাঁড়িয়ে একটু হাঁটো তো দেখি।" বানররাজ এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে দুপাক হেঁটে দেখাল। আচার্য হেসে বললেন, "তোমার দেহ কিম্ভূতকিমাকার হলেও দেখতে তুমি পাইনফল প্রিয় হুসুন বানরের মত। তাই তোমার পদবী হোক সুন, আর তোমার নাম রাখলাম উখোং বা ব্যোমজ্ঞানী, কেমন?" নাম পেয়ে বানররাজ বেজায় খুশী, সে হাতজোড় করে গুরুকে ধন্যবাদ জানাল।

তারপর সুন উখোং গুরুভাইদের অভিবাদন জানাল। সেদিন থেকে সে গুরুভাইদের সংগে একত্রে মনোযোগের সংগে ভাষা আর শিষ্টাচার শিখতে লাগল এবং শাস্ত্রচর্চা শুরু করল। খুব ভোরে সে বিছানা ছেড়ে উঠত, আর রাত্রে অনেক দেরীতে ঘুমোতো। এমনি করে সে অধ্যবসায়ের সংগে সঙ্গে তার বিদ্যাচর্চা আর তপস্যাও চালিয়ে যেতে লাগল।

সুন উখোং বিদ্যাচর্চা আর তপস্যা করা ছাড়াও গুরুভাইদের সংগে মণ্ডপ আর প্রাঙ্গণ ঝাঁট দিত, ফুলগাছ লাগাতো, আর গাছের ডালগুলো ছাঁটাই করতো, সবজির বাগান করতো, বাঁকে করে পানি নিয়ে আসতো আর পাহাড় থেকে, কাঠ জোগড়ে করে আনতো। সে ছিল খুবই পরিশ্রমী।

মাঝেমাঝে সুন উখোং তার গুরুভাইদের সংগে সমরবিদ্যার কৌশল অনুশীলন করতো। ধীরে ধীরে সে বর্শা, খড়গ আর তলোয়ার চালাতে এতো নিপুণ হয়ে উঠল যে যখন সে তলোয়ার ঘোরাত তখন তা ঝলসে উঠে চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দিত। এইভাবে ঐ গুহাতে তার আরও কয়েক বছর কেটে গেল।

একদিন আচার্য বেদীতে বসে ধর্মোপদেশ দিচ্ছিলেন। উখোং পাশে বসে শুনতে শুনতে হঠাত্ কান আর গাল চুলকোতে লাগল। আচার্য দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "উখোং তোমার মন বসছে না কেন?" উখোং উত্তর দিল, "গুরুদেবের এমন চমত্কার ব্যাখ্যা শুনে আমার মন হঠাত্ খুশিতে ভরে হয়ে উঠেছিল। অধমের ধৃষ্টতার জন্য ক্ষমা করুন।"

আচার্য জিজ্ঞেস করলেন, " উখোং কতদিন হল তুমি এই গুহাতে এসেছ?" উখোং বললো, " শিষ্যের শুধু এটুকু মনে আছে পাহাড়ে কাঠ জোগাড় করতে গিয়ে সে শুধু সাতবার মাত্র পেট ভরে পিচ খেয়েছিল।" আচার্য বললেন, "তার অর্থ তুমি এখানে সাত বছর কাটিয়েছ, জানি না তুমি কি বিদ্যা শিখতে চাও।" উখোং বলল: "আমি অজ্ঞ, গুরুদেবের উপদেশ আমি মাথায় করে নেব।"

আচার্য তখন সুন উখোংকে বললেন, "আমি তোমাকে জ্যোতির্বিদ্যা আর জ্যোতিষশান্ত্র শেখাব।" উখোং বলল, "অমর না হওয়া গেলে আমি ও বিদ্যা শিখব না।" আচার্য আবার বললেন,"তাহলে তোমাকে ধ্যানজ্ঞান দেব।" মাথা নেড়ে উখোং বললো: "ও বিদ্যা শিখলেও অমর হওয়া যাবে না, তাই আমি ওসব শিখব না!"

সুন উখোং বারবার 'না' বলাতে আচার্য ভীষণ রেগে গেলেন। তিনি বেদী থেকে নেমে এসে তাকে বকুনী দিয়ে বললেন," বেয়াদব বানর, এটাও শিখবে না, ওটাও শিখতে চাও না, তাহলে শিখবে কি?" বলেই তিনি উখোংয়ের মাথার উপর তিনবার ঘা মেরে পেছন দিকে হাত মুড়ে মাঝখানকার দরজা বন্ধ করে দিয়ে হনহন করে অন্যঘরে চলে গেলেন।

আচার্যকে এভাবে রেগে চলে যেতে দেখে অন্যেরা ভয় পেয়ে গেল এবং সবাই উখোংকে দোষ দিতে লাগল। সু উখোং কিন্তু একটুও রাগ করল না, সে শুধু চুপচাপ বসে বসে মিটমিট করে হাসতে থাকল।

নির্জন ঘরে ফিরে এসে সুন উখোং ধ্যান করতে বসল। কিন্তু সে কিছুতেই মন বসাতে পারল না। সে বারবার জালালার বাইরে তাকাতে লাগল। কখন অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে তার প্রতীক্ষায়। রাত্রি যখন তিন প্রহর, সু উখোং নিঃশব্দে উঠে চুপিচুপি পিছন দিকের দরজার কাছে গেল। দরজাটি আধা ভেজানো রয়েছে দেখে সে খুশি হল।

আচ্ছা বন্ধুরা, অনুষ্ঠান আজ এ পর্যন্তই। পরের অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় থাকার অনুরোধ জানিয়ে বাংলা বিভাগের স্টুডিও থেকে আমি আকাশ এবারের মত আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। জাই চিয়ান!

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040