|
এই কাহিনী খৃষ্টীয় নবম শতাব্দীতে সংঘটিত হয় । সেই আমলে উত্তর চীনে শক্তিশালী সুই রাজবংশ , আর দক্ষিণ চীনে কয়েকটি ছোট রাজ্য । ছেন রাজ্য এই কয়েকটি রাজ্যের অন্যতম , ছেন রাজ্যের রাজধানী চিয়েন খান , অর্থাত আজকের নানচিং শহর । উত্তর চীনের সুই রাজবংশ দক্ষিণের কয়েকটি ক্ষুদ্র রাজ্য নিশ্চিহৃ করে গোটা চীন একত্রিত করতে চায় ।
সুই তে ইয়েন ছেন রাজ্যের রাজা ছেন সু পাওয়ের দেহরক্ষী । তিনি রাজার বোন রাজকুমারী লেছানের সঙ্গে বিয়ে করেন । বিয়ের পর তাদের দাম্পত্য জীবন সুখী । কিন্তু তখনকারছেন রাজ্যে দুনীর্তির সমস্যা গুরুতর , তাই সুই দে ইয়েন মনে করেন একদিন না একদিনছেন রাজ্যের পতন হবে , এর জন্য তিনি চিন্তিত ।
একদিন তিনি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে স্ত্রীকে বললেন , বড় বিশৃঙ্খলার ঘটনা খুব সম্ভবতঃ কিছু দিন পরই ঘটবে । তখন আমাকে রাজাকে রক্ষা করতে হবে , তাই আমরা একসঙ্গে থাকতে পারবো না । কিন্তু আমরা যদি জীবিত থাকি , তাহলে একদিন না একদিন আমাদের মিলন হবে । তাই আমাদের আগে থেকে একটি জিনিস পুনর্মিলনের প্রমাণ হিসেবে দুজনের হাতে রাখতে হবে ।
রাজকুমারী লে ছান স্বামীর প্রস্তাবে রাজী হলেন ।সুই দে ইয়েন এক গোল আকারের পিতের তৈরী আয়নাবের করেন । তিনি এই পিতের আয়নাকে দুই ভাগ করলেন , অধের্ক স্ত্রীকে দিলেন , অধের্ক নিজের কাছে রাখলেন । তিনি স্ত্রীকে বললেন , বিশৃঙ্খলায় আমরা দুজন যদি ছাড়াছাড়ি হয় , তাহলে প্রতি বছরের চান্দ্র বর্ষের প্রথম মাসের পনেরতম দিনে তুমি এই আয়না নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে যান ,জীবীত থাকলে আমি অবশ্যই আমার অধের্ক আয়না নিয়ে তোমার খোজখবর নিতে যাবো , সেখানে আমাদের পুনর্মিলন হবে ।
কিছু দিন পর সুই রাজবংশের রাজা ইয়ান চিয়েন ছেন রাজ্যের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে ছেন রাজ্যকে নিশ্চিহৃ করেন এবংছেন রাজ্যের রাজাকে হত্যা করেন । দেহরক্ষী সুই দে ইয়েন পালালেন । সুই রাজ্যের রাজা পুরস্কার হিসেবে বন্দী করা রাজকুমারী লেছানকে সুই রাজ্যের মন্ত্রী ইয়াং সুকে উপপত্নী হিসেবে দিলেন ।
পলাতন সুই তে ইয়েন শুনেছেন স্ত্রী সুই রাজ্যের রাজধানী তাসিং অর্থাত আজকের সান সি প্রদেশের সিআন শহরে গিয়েছেন , তাই তিনি চিয়েন খান থেকে সিআনে গেলেন । প্রতিদিন তিনি অধের্ক আয়না বের করে স্ত্রীর সঙ্গে সুখী জীবনের কথা স্মরণ করেন । তার স্ত্রী রাজকুমারী লেছান ইয়াং সুর বাসায় আরামে জীবনযাপন করেন , কিন্তু তিনি প্রায়ই অধের্ক আয়না বের করে মনে মনে স্বামীর কথা স্মরণ করেন ।
চান্দ্র বর্ষের প্রথম মাসের পনেরোতম দিন আসলো । সুই তে ইয়েন বাজারে গিয়ে দেখলেন একজন বৃদ্ধ উচ্চদামে অধের্ক পিতলের আয়না বিক্রি করছেন । আয়নার দাম বেশী বলে কেউ এই অধের্ক আয়না কিনছেন না , তাই এই বৃদ্ধ বাজারে আসা-যাওয়া করছে । সুই দে ইয়েন এই আয়না কেনার ভান করেএই অধের্ক আয়না দেখেই জানতে পেরেছে এটা স্ত্রীর হাতের সেই অধের্ক আয়না । আসলে সেই বৃদ্ধ ইয়াং সুর বাসার একজন চাকর । তিনি রাজকুমারী লেছানের অনুরোধে তার স্বামী খুঁজতে আসেন । সুই তে ইয়েন সেখানে একটি কবিতা লিখে কবিতাটি রাজকুমারী লেছানকে দিতেবৃদ্ধকেঅনুরোধ করেন । তার এই কবিতার অর্থ হলোআয়না ও স্ত্রীআমি দুটিই হারিয়েছি , এখন আয়না ফিরে পেয়েছি , কিন্তু স্ত্রী ফিরে আসেন নি । ঠিক যেন চাঁদে ছান উওকে দেখতে পাই না , শুধু চাঁদের উজ্জ্বল রশ্মি দেখতে পাই ।
রাজকুমারী লেছান স্বামীর লেখা কবিতা পড়ে সারা দিন কাঁদেন এবং খাওয়া দাওয়াও বন্ধ করে দিলেন । ইয়াং সু স্ত্রীর দুঃখের কারণ জেনে মুগ্ধ হলেন । তিনি সুই তে ইয়েনকে ডেকে পাঠালেন এবং তাকে অনেক উপহার দিয়েরাজকুমারী লে খানকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলেন । সুই তে ইয়েন ও রাজকুমারী লে ছানের পুনমির্লন হলো ।
পরবর্তীকালের সাহিত্যিকদেররচনায় ব্যবহার করা প্রবাদ-- ভাঙ্গা আয়না আবার গোল হওয়ার অর্থ বিচ্ছেদ দম্পতি আবার মিলন । প্রবাদ--ভাঙ্গা আয়না আবার গোল হওয়া কঠিন—এর অর্থ হলো নানা কারণে স্বামী-স্ত্রী আলাদা হতে বাধ্য হওয়া ।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |