|
পার্কে প্রবেশ করতেই পুরনো শিল্প যুগের ছাপ সবার চোখে পড়বে। অল্প সময়ের মধ্যেই আশেপাশের সংগীতের আকর্ষণ এবং নানা ধরনের উদ্ভাবন ধারণা উপলব্ধি করা যায়।
পুরনো কারখানার বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা এবং নতুনভাবে পুরনো কারখানা ব্যবহার করা হলো এ সংগীত পার্ক স্থাপত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য। চমত্কারভাবে সংরক্ষিত এ কারখানায় আপনারা সহজে দেখতে পাবেন গত পঞ্চাশের দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় নির্মিত অফিস ভবন, শিল্পের প্রতীক চিমনি পাইপলাইন, লাল ইট দেয়াল এবং কয়েক দশকের ইতিহাসের সাক্ষী গাছগুলো। এসব দৃশ্যে চীনের পরিকল্পিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিল্পের ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে।
বিরাট চিমনি, দেয়ালে স্মরণীয় স্লোগান, উত্তমরূপে সংরক্ষিত পুরনো কারখানা আধুনিকালের কফি, সংগীত ও পাবের উপাদানের সঙ্গে সংমিশ্রিত হয়েছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকালের সংমিশ্রণের কারণে এ কারখানায় স্থাপনার উপাদান রয়েছে এবং দর্শনার্থীরাআ পুরনো শিল্পকলায় আধুনিক শিল্পকলার প্রভাব উপলব্ধি করতে পারেন এখানে। হুংকুয়াং ইলেকট্রোন ডিউব কারাখানার সাবেক মহাপরিচালক নতুনভাবে সাজানো কারখানা দেখে অভিভূত হয়েছেন। তিনি বলেন, "এখানে পুরপুরি নতুন দৃশ্য তৈরি হয়েছে। যদিও এ কারখানার কাঠামো পুরনো, তবে তার দৃশ্য সম্পূর্ণ নতুন হয়েছে।"
আসলে এ শিল্পায়ন কারখানাস্থলে সংগীত ব্যবসা এলাকা, সংগীত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সংগীত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মিলন স্থান প্রতিষ্ঠা করা হলো সংগীত পার্কের উদ্দেশ্য। হোটেল, পাব, ছেংতু মঞ্চ, সংগীত ডিআইওয়াই উদ্ভাবন বাজার ও তারকা কারখানাসহ বিভিন্ন বিষয় এ পুরনো ভবনটিতে সংগীতের প্রতিপাদ্যে নতুন প্রাণশক্তি প্রতিফলিত হয়েছে এবং সংগীত পার্কের প্রধান বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
গত নব্বইয়ের দশকে ছেংতু বেতারের বিখ্যাত উপস্থাপক উ ইয়ান সংগীত পাব প্রতিষ্ঠা করেন। পূর্বাঞ্চলের সংগীত পার্কে এ পাব পুনরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এখানে পাব স্যালনছাড়াও শাস্ত্রীয় সংগীত বাজানোর স্যালন রয়েছে। শাস্ত্রীয় সংগীত সাধারণের মধ্যে প্রচার করায় এ রুচিশীল শিল্প প্রত্যেক শ্রোতার রক্তে সংমিশ্রিত হয় এবং সম্পূর্ণভাবে সংগীতের মনোহর উপাদান উপভোগ করা যায়।
সংগীত ছাড়া এখানে রয়েছে সবচেয়ে পেশাগত ছবি তোলার শিল্প গ্যালারি ও উন্মুক্ত সিনেমা হল। এদের মধ্যে '১৮৯৯ ব্যক্তিগত ফিল্ম স্টুডিও' নিজের ফিল্ম ধারণ করার যে কারোর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারে।
পূর্বাঞ্চলের সংগীত পার্কের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে চাইলে পর্যটক ম্যাডাম ওয়াং 'ফ্যাশন' দিয়ে তা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, "আমার বিবেচনায় এ পুরনো কারখানা খুব হাল ফ্যাশনের। এখানে এসে এক কাপ কফি খাই, বই পড়ি কিংবা সিটি খুঁজে বের করি। এখানে আসলে খুবই আরাম বোধ হয়।"
পূর্বাঞ্চলের সংগীত পার্কে এলে চার পাশের ফ্যাশনেবল পরিবেশ ছাড়াও বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিল্পায়নের পরিবেশ আপনাদেরকে লাল ইট দেয়াল ও উঁচু চিমনির শিল্প যুগের উপলব্ধি এনে দেবে। পার্কের মধ্যে ট্রেন হেড চত্বর একটি স্মরণীয় জায়গা।
ট্রেন হেড চত্বরে একটি ১৫১৯ নম্বর ট্রেন রয়েছে, যেটি সিছুয়ান প্রদেশে নির্মিত প্রথম বাষ্প-ইঞ্জিন ট্রেন হেড ও দুটি সবুজ রঙয়ের ট্রেনের বগি। পূর্বাঞ্চল সংগীত পার্কে বেড়াতে এলে এ স্থানটি অবশ্যই দেখা উচিত। অনেক পর্যটক এখানে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন।
"আজকে ক্যামেরা নিয়ে আসা উচিত ছিল। তবে ভুলে গেছি। আগামীবার আসলে অবশ্যই ক্যামেরা নিয়ে আসতে হবে। এসব পুরনো দৃশ্য ধারণ করা উচিত। নইলে ভবিষ্যতে খুব সম্ভবত আর দেখা যাবে না।"
ট্রেন হেড চত্বরে প্রাচীনকালের দৃশ্য পুনরুদ্ধার করার জন্য পার্কের প্রশাসনিক ব্যুরো পার্কে ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানিক পোষাক পরা কর্মীদের নিয়োজিত করেছে।
অতীতাশক্তি শিল্পকর্ম সম্পর্কে পূর্বাঞ্চলের সংগীত পার্কে অনেক জায়গা রয়েছে। যেমন পূর্ব উপকন্ঠ ডাইনিং হল। ডাইনিং হলের দরজা দিয়ে প্রবেশ করার আগে এ সংগীত শোনা যায়। মনে হয়, আমরা হঠাত্ পুরনো শিল্প যুগে ফিরে এসেছি। এ ডাইনিং হলের সাজানোর স্টাইল গত পঞ্চাশের দশকের স্টাইল অনুযায়ী করা হয়েছে। যেমন দেয়ালের স্লোগান, টেবিল ও চেয়ারের ডিজাইন ইত্যাদি। লোকজন এ ডাইনিং হলে প্রবেশ করার পর শিল্পায়ন যুগের সভ্যতা উপলব্ধি করতে পারে। ম্যাডাম লি বলেন, "এখানে স্মরণীয় অনুভব খুঁজে পাওয়া যায়। এ পূর্ব উপকণ্ঠ ডাইনিং হলে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন ছোটবেলায় ফিরে গেছি।"
এ পার্ক খোলার পর চলতি বছরের চীনের জাতীয় উত্সবের সোনালী সপ্তাহ পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলের সংগীত পার্ক আরও বেশি জনপ্রিয়তা হয়েছে। পার্ক খোলার ৯ দিনের মধ্যে পর্যটকের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। অনেক পর্যটক এখানে আধুনিকাল থেকে অতীতাশক্তি যুগে ফিরে যাওয়ার' অনুভূতি অনুভব করেন। এর সঙ্গে সঙ্গে এ পার্ক অনেক যুবক ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ করেছে। পর্যটক ম্যাডাম হুয়াং বলেন, "পরিদর্শন করার পর আমি এখানে একটি ছোট দোকান খুলতে চাই। কারণ আমার মনে হয় এখানকার পরিবেশ খুবই ভালো। আমি পেইচিংয়ের ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকায় গিয়েছিলাম। আমি মনে করি এখানকার পরিবেশ ৭৯৮'র মতো এবং ভবিষ্যতে তা ছেংতু শহরের নেমকার্ডে পরিণত হবে।"
এটা সত্যি কথা - অনেক পর্যটক পূর্বাঞ্চলের সংগীত পার্কে বেড়ানোর সময় পেইচিংয়ের পুরনো কারখানা থেকে নির্মিত ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকাকে স্মরণ করেন। পেইচিংয়ের ৭৯৮ শিল্পকলা এলাকা ও শেনচেন প্রবাসী চীনাদের সংস্কৃতি উদ্ভাবন পার্কের পর এ পার্ক হল আরেকটি শিল্পকলা এলাকা। পূর্বাঞ্চলের কারখানার প্রতি গভীর অনুভূতি রয়েছে জনাব লির। নতুনকরে সাজানো কারখানা দেখে কল্পনায় তিনি কয়েক দশক আগে ফিরে যান। তিনি বলেন, "প্রাচীনকালে এটা ছিল ১০৬ কারখানা এলাকা। লোকজন এখানে প্রাচীনকালের কাহিনী পুনরায় স্মরণ করতে এবং বর্তমানে ফ্যাশনেবল উপাদান অনুভব করতে পারে।"
অধিকাংশ পর্যটক ছেংতু'র চা দোকান ও ছোট গলির ওপর বিশেষ মনোযোগ দেয়; খুব কম লোক ছেংতু শহরের ফ্যাশন উপাদানের ওপর দৃষ্টি রাখে। তবে ছেংতু পূর্বাঞ্চল সংগীত পার্কের নির্মাণ ছেংতু শহরের সংস্কৃতিতে নতুন ও পুরনো উপাদানের দারুণ সংমিশ্রণ ঘটিয়েছে; একাকার হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও আধুনিক শিল্পকর্ম। এখানে কোনো ব্যবধান না থাকে। দুটি যুগ যেন চমত্কারভাবে সংমিশ্রিত হয়েছে।(সুবর্ণা/এসআর)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |