|
বিশ্বের ছাদ ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে সুদীর্ঘকালীন ঐতিহাসিক তিব্বতী জাতি বসবাস করে। প্রত্নতত্ত্ব অনুযায়ী ৪০০০ বছরের আগে তিব্বতী জাতির পূর্বপুরুষ এখানে বসবাস করতো। দীর্ঘকাল ধরে মালভূমিতে বসবাস করা তিব্বতী জাতির জনগণ নৃত্য, সংগীত, নাট্ক, শিল্পকলা ও রীতিনীতি অনুষ্ঠানসহ নানা ধরনের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও পুষ্টিকর সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তুলে ধরেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সরকারের সমর্থনে পুরোনো তিব্বতী জাতির সংস্কৃতি তথ্যায়ন যুগে তার প্রাণশক্তির প্রতিফলন করেছে এবং ভালভাবে প্রচারের পাশাপাশি উন্নত হয়েছে।আজকের অনুষ্ঠানে আমরা তিব্বতী জাতির পুরনো ইতিহাস ও সংস্কৃতি লিপিবদ্ধ হওয়া আধুনিক তিব্বতী সংস্কৃতি প্রদর্শনী জাদুঘরে বেড়াতে যাবো।
এ জাদুঘর ছিংহাই প্রদেশের বিখ্যাত তিব্বতে প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্মীয় মন্দির-তায়ের মন্দিরের কাছে অবস্থিত। এ মন্দির হল তিব্বতে প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্মের গেলুগপা'র সৃষ্টিকারী সোংখাবার জন্মস্থান। জাদুঘরে প্রবেশ করার পর আপনারা স্বপ্নের মতো মনোহরণীয় মহাকাশ ও মহাকাশের তুষারাচ্ছন্ন ছিংহাই তিব্বত মালভূমি'র ছবি দেখতে পাবেন। বিস্তৃত স্ক্রিনের মাধ্যমে 'ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি'র সৃষ্টি' নামক যে ডিজিটল সিনেমা প্রদর্শন করা হয়, তাতে বিশ্বের ছাদের সৃষ্টির প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এবং আপনাদের চোখে দৃঢ় অনুভব গড়ে তুলেছে। জাদুঘরের উদ্ভাবনী স্থাপতি ও পরিচালক ই চি কাং পরিচয় করিয়ে বলেছেন, এক নম্বর স্টেডিয়ামে দুই তলা আছে, প্রথম তলায় ইহিতাস সম্পর্কে মালভূমির সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া প্রদর্শন করা হয়, দ্বিতীয় তলায় তিব্বতী জাতির বিভিন্ন ধরনের শিল্পকলার ধারণা প্রদর্শন করা হয়, যেমন বৌদ্ধ ধর্মের দেবতা, পাহাড়, মাস্ক, তাংকার ছবি ও তিব্বতী নাট্ক ইত্যাদি। দুই নম্বর স্টেডিয়ামে তিব্বতে প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্মের মৃত্যু ও জন্মের তত্ত্ব আর মহাকাশের তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়। এ বিষয় পেশাগত দর্শনশাস্ত্র ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে এবং বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ছিংহাই তিব্বতী সাংস্কৃতিক জাদুঘরের বৈশিষ্ট্য অসাধারণ, এর স্থাপত্য আকার তিব্বতী জাতির ঐতিহ্যবাহী ধারণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় বৈশিষ্ট্য ও আধুনিক স্টাইলের সাথে মিশে রয়েছে, তার সাথে রয়েছে বৌদ্ধ ধর্মীয় পবিত্র স্থান তায়ের মন্দিরের বৈশিষ্ট্য ভালভাবে মিল। তায়ের মন্দিরের বৈশিষ্ট্য এ জাদুঘরে দীর্ঘায়িত ও সম্প্রসারিত এবং তিব্বতের সংস্কৃতিকে এখানে পুনরায় সারিবদ্ধভাবে একীকরণ করা হয়েছে।
এ জাদুঘরের দু'জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ইয়াং চিন রোং আর ই চি কাং'র ১০ বছর আগে মালভূমিতে পরস্পরের সঙ্গে দেখা হয় এবং তখন থেকে গভীর মৈত্রী স্থাপন করা হয়েছে। ই চি কাং একজন সাংস্কৃতিক পন্ডিত হিসেবে এ জাদুঘরের ডিজাইনে মৌলিক জীবনের তত্ত্ব, মূল্যবোধ ও দর্শনশাস্ত্র সম্পর্কে মতামতকে মিশিয়েছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, আমাদের জাদুঘর বেসামরিক পুঁজি বিনিয়োগে নির্মিত হয়েছে। আমরা আশা করি তা সংস্কৃতি ক্ষেত্রে মৌলিক মতামত প্রকাশ করতে পারে। একটি বিস্তীর্ণ দৃষ্টান্তে তা মানবজাতির সংস্কৃতি হিসেবে বিশেষ করে আমাদের চীনা জাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সংস্কৃতির শাখা হিসেবে দেখা যায়। এভাবে তার ইতিহাস, ধর্ম, শিল্পকলা ও রীতিনীতির পরিচয় পাওয়া যায়। এ বহুমুখী সংস্কৃতি আধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তির পদ্ধতিতে বর্তমানকালের লোকজনের কাছে প্রতিফলিত হয়েছে এবং তা সহজভাবে গ্রহণ করা যায়।
এ জাদুঘরের প্রদর্শনী মানুষের দৃষ্টান্ত হিসেবে তিব্বতের সংস্কৃতি ব্যাখ্যা করতে চায়। তা চীনা জাতির বৈশিষ্ট্যময় সংস্কৃতির অন্যতম এবং মানবজাতির বহুমুখী সংস্কৃতির ওপর ধারণার অন্যতম। ইয়াং চিন রোং হলেন জাদুঘরের পুঁজি বিনিয়োগকারী। তিনি বলেছেন, আমি ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির সংস্কৃতি খুবই পছন্দ করি, এ জাদুঘর স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের নেতৃবৃন্দ ও বন্ধুদের সমর্থন পেয়েছি। এ জন্য আমি এ যাদুঘরকে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির সংস্কৃতি প্রতিফলনের একটি দৃশ্য হিসেবে তৈরী করতে চাই। এ প্রকল্প চালু হওয়ার পর বিভিন্ন বিভাগের উচ্চপর্যায়ের মনোযোগ ও সমর্থন পেয়েছি এবং আমাদের জন্য অনেক সুবিধাজনক নীতি চালু হয়েছে, তা আমার পুঁজি বিনিয়োগের বিশ্বাসকে জোরদার করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে ।
যদি আপনারা এ জাদুঘরে বেড়াতে আসেন, তাহলে এর ভিতরে অনেক জায়গায় আশ্চর্য্য দৃশ্য দেখতে পাবেন।
সমৃদ্ধ ও চমত্কার তাংকার ছবি এলাকায় সার্বিকভাবে তাংকার ছবির ধারণা ও তৈরীর পদক্ষেপ পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, পালাক্রমিকভাবে প্রচারিত সিনেমায় তাংকার শিল্পীদের ব্যাখ্যা সংগ্রহ করা হয়, যাতে প্রত্যেক দর্শক তাংকার শিল্পের প্রতি বাস্তব অনুভূতি পেতে পারে। ওয়েনছেং কুমারী তিব্বতে এসে সোংস্টেন গাম্বোর রানীতে পরিণত হয়েছেন, তা হান জাতি ও তিব্বতী জাতির সুষম সহাবস্থান ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কাহিনী গড়ে তুলেছে। জাদুঘরে ওয়েনছেং কুমারী তিব্বতে প্রবেশ করার রোডম্যাপ এঁকেছে, বৌদ্ধ দেবতা ও পবিত্র দেবীর প্রদর্শনী এলাকায় পাথরের দোয়ালে সুশৃঙ্খলভাবে ঝুলিয়ে রাখা বৌদ্ধের কুলুঙ্গি অন্ধ্কার বাতির আলোতে থাকে, বিভিন্ন ধরনের বুদ্ধমূর্তি প্রদর্শনী করার জন্য এক ধরনের পবিত্র ও রহস্যময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়, যা দর্শকদের বুদ্ধের হলে প্রবেশে আকর্ষণ করার মতো।
এ জাদুঘর হচ্ছে বর্তমানে চীনের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও বহুমুখী মিডিয়া প্রযুক্তি দিয়ে সার্বিকভাবে তিব্বতী জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি পরিচয় করিয়ে দেয়ার জাদুঘর। জাদুঘরটি লোকজনের কাছে আমাদের পৃথিবীতে সবচেয়ে চমত্কার মালভূমিতে জন্মগ্রহণকারী তিব্বতী জাতির সংস্কৃতির পরিচয় তুলে ধরেছে। জাদুঘরের ডিজাইন পরিচালক ই চি কাং বলেছেন, অবকাশ ডিজাইন ও চিত্রলেখ ডিজাইনে আমাদের অনুরোধ খুবই কঠোর। তাতে অবকাশের ধারণা ও একীকরণের স্টাইল থাকার পাশাপাশি প্রত্যেক জায়গায় নিজদের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। চিত্রলেখ ডিজাইনের ক্ষেত্র থেকে সবকিছুতেই আমাদের প্রদর্শনী বোর্ডের ধারণা সবই ভিন্ন রকম। সকল প্রদর্শনী বোর্ড আমাদের অবকাশ ডিজাইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, তা দেখতে প্রাণচঞ্চল।
বর্তমানে চীনের অন্যান্য জাদুঘর ও সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী স্টেডিয়ামের চেয়ে ছিংহাই তিব্বতী জাদুঘরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর প্রদর্শনীর চিরদিনের প্রতিপাদ্য প্রাণের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। প্রাণ হল যে কোনো সংস্কৃতির সবচেয়ে মূল বিষয়। প্রাণের সত্য ও তাত্পর্য অনুসন্ধান করা, জীবিত ও মৃত্যুর গুপ্ত রহস্য খুঁজে বের করা হল মানবজাতির মৌলিক প্রশ্ন।
এ জাদুঘর ভালভাবে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি উন্নয়নের প্রক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটেছে। তিব্বতী জাতির ইয়ালোং নদী উপত্যকার উত্স্য থেকে মালভূমির সংস্কৃতির পরিবর্তন অনুসন্ধান করা, তা সম্পূর্ণভাবে তিব্বতী জাতির প্রাণের প্রতি চিত্ত ও চিন্তাভবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। যদি এ জাদুঘরের সবচেয়ে মূল বিষয় হল প্রাণ ও আত্মা, তাহলে এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হচ্ছে হাইটেক বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও বহুমুখী মিডিয়ার পরিচয় পদ্ধতি। জাদুঘরে চারদিকে পরদা, ছায়ার দৃশ্য, পানি পরদার প্রক্ষিপ্ত ছবিসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, তা গোটা চীনের জাদুঘরে খুবই কম দেখা যায়। অনেক পর্যটক ও সাংস্কৃতিক পন্ডিতরা পরিদর্শন করার পর এ জাদুঘরের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। কুয়াংচৌ শহরের সংস্কৃতির উদ্ভাবনী শিল্প পরিষদের মহাসচিব ছেন চাও ফেং এ সম্পর্কে বিশেষ প্রবন্ধ লিখেছেন। তিনি বলেছেন, ছিংহাই তিব্বতী সংস্কৃতি যাদুঘর চীনের তিব্বতে প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র স্থান তায়ের মন্দিরের সম্পত্তি অনুসন্ধান করে ধারাবাহিক সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কাজ করেছে এবং জাতীয় সংস্কৃতির ভিত্তিতে পর্যটন ও সংস্কৃতি শিল্পায়ন উন্নয়নের নতুন পথ চলেছে।
অনেক পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় আরও বেশি পর্যটক ও বিশেষজ্ঞরা এ জাদুঘর পরিদর্শন করেন। প্রত্যেকে আশ্চর্য্যরনসাথে মুগ্ধ হয়ে নিজের পরিদর্শনের মন্তব্য বর্ণনা করেন। এ জাদুঘরে একটি জানালার মতো বিশ্বের প্রতিটি রহস্যময় ও সুন্দর তিব্বতী জাতির সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
(সুবর্ণা/আবাম)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |