Web bengali.cri.cn   
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেলে উশি'র নানছাং সড়ক
  2011-07-19 15:44:21  cri
    চীনের চিয়াংসু প্রদেশের উশি শহরে নদীতীরে নির্মিত একটি সাদা দেয়াল-কালো ছাদের সড়ক আছে। নানছাং নামের এ সড়কে উশির বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে বর্তমানে এ পুরনো স্থাপত্যের সড়কে কফি, পশ্চিমা খাবার ও কার্টুন দোকানসহ বিভিন্ন আধুনিক বৈশিষ্ট্যও যুক্ত হয়েছে। ঐতিহ্য ও আধুনিক জীবন এ সড়কে সম্মিলিত হয়েছে; এ সড়কে আগের মতোই ভিন্ন রকমের মনোহরী বৈশিষ্ট রয়েছে।

    উ শি শহরের নদীর খালের তীরে একটি বড় আকারের তোরণ আছে। এ তোরণের ওপর বড় করে লিপিবদ্ধ 'ইউয়ুন হো কু ই' - এ চারটি অক্ষর। এর অর্থ হল খাল সংলগ্ন প্রাচীন শহর। তোরণের বাইরে উঁচু ভবন ও গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যায়। এ তোরণ অতিক্রম করার পর আমাদের সামনে একটি ভিন্ন ধারণার দৃশ্য ফুটে ওঠে। পাঁয়ের নিচে কালো পাথরের পথ সর্পিল গতিতে বিস্তৃত; দুই পাশে দুই বা তিন তলার কাঠ-স্থাপত্য দেখা যায়। এটা প্রাচীনকালে চীনের মিং ও ছিং রাজবংশের স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখেছে। এখানে সাদা দেয়াল আর কালো টালির ছাদ, শান্ত ও সুষম পরিবেশ উপভোগ করা যায়। এটা হল উ শি শহরের বিখ্যাত স্থান নানছাং সড়ক।

    উশি ছিংমিংছিয়াও ইতিহাসিক সাংস্কৃতিক এলাকার কেন্দ্রীয় অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে এখানে সংস্কার প্রকল্প শুরু হয়। এখন সে সংস্কার প্রকল্প মোটামুটি শেষ হয়েছে; প্রায় ৩০০টি প্রাচীন ঘরের মোট ২০ হাজার বর্গমিটার সংস্কার করা হয়েছে। এ প্রকল্পের ফলে নানছাং সড়কের প্রাচীনকালের দৃশ্য মোটামুটিভাবে পুনরুদ্ধার হয়েছে। সড়কে রাখা পুরনো দরজার নিম্নস্থ কাষ্ঠফলক, পুরনো দোকানের দরজার হুড়কো ও কাঠ-স্থাপত্যের মধ্যে মেঝে দেখা যায়। তবে এসব ঐতিহ্যবাহী বস্তুগুলোর সঙ্গে বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাশন ও উদ্ভাবনী সাজসজ্জা যুক্ত করা হয়েছে।

    এ সড়কের প্রবেশপথে 'সোফি মিস' নামের একটি দোকানে বিভিন্ন রঙের সুন্দর আইসক্রিম বিক্রি করা হয়। এর পাশে একটি দোকানের দেয়ালে সম্পূর্ণভাবে সবুজ পাতা এঁটে দেয়া হয়েছে এবং দোকানের পাশে একটি বড় আকারে ছাতা ও কয়েকটি চেয়ার স্থাপন করা হয়েছে। লোকজন তা দেখে এখানে বসে বসে আরামদায়ক সময় কাটতে চায়। দোকানে ছোট কালো বোর্ড, পোস্টকার্ড ও মগ রাখা আছে, যেগুলোতে আয়েশি জীবনযাপনের অনুভূতি প্রতিলফিত হয়। এখানে মাখন পুডিং পাওয়া যায় এবং দোকানের দুই তলায় সব সময় সিনেমা প্রদর্শনী চলে।

    সড়কে একটি পশ্চিমা খাবার রেস্তোরাঁর নাম হল ব্লুজ। দিনের বেলায় এখানে সাধারণ খাবার বিক্রি করা হয়, কিন্তু সন্ধ্যা থেকে এটা পাবে পরিণত হয়। দোকানের মালিক সিয়াও জু জানান, এ জায়গাটি বাছাই করার কারণ হল নানছাং সড়কের প্রাচীনকালের উপলব্ধিকে পছন্দ করা।

    প্রাচীনকালের চীনা পুরনো সড়কে একটি প্রকৃত পশ্চিমা রেস্তোরাঁ খুললে এবং পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতির মিশেল ঘটালে সম্ভবত একটা ভালো প্রভাব সৃষ্টি হবে।

    নানছাং সড়কে হাঁটলে কার্টুন বইয়ের দোকান কিংবা ব্রিটেনের প্রাকৃতিক শৌখিন সুগন্ধ সাবান পাওয়া যায়। বিশ্বের বিখ্যাত কফি চেইন-স্টোর স্টারবাক এখানে একটি ৩০০ বর্গমিটারের দোকান খুলছে। এখন নানছাং সড়ক অনেক ফ্যাশনপ্রিয় যুবকের জনপ্রিয় স্থানে পরিণত হয়েছে।

    একজন পর্যটক বলেন, উ শির কেন্দ্রীয় এলাকায় সবই উঁচু ভবন, তবে এখানে সবই কাঠের বাসভবন। এখানে এসে পুরনো সড়কে হাঁটলে বেশ ভালো লাগে।

    আরেকজন পর্যটক জানান, "এখানে প্রাচীনকালের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার, খেলনা ও মজার দোকান - সবই পাওয়া যায়। সংস্কৃতি ও আধুনিকায়নের সংযুক্তি আমার চোখে একটি নতুন দৃশ্য তুলে ধরেছে।"

    তাছাড়া, প্রবীণ মানুষেরা এ নতুন নানছাং সড়ক বেশ পছন্দ করেন। উ শি শহরের অধিবাসী আন্ট থান আর মামা লু আগে নানছাং সড়কে বসবাস করতেন। এ সড়ক সংস্কারের কারণে কয়েক বছর ধরে তাঁরা অন্য জায়গায় বাস করছেন। যদিও এখন তাঁরা এখানে আর বসবাস করতে পারছেন না, তবে সময় পেলেই তাঁরা এ সড়কে এসে একটু হাঁটাহাঁটি করেন।

    আন্ট থান বলেন, "এখানে আমাদের ছেলেবেলার আনন্দময় সময় স্মরণ করতে পারি। যদিও আমরা বৃদ্ধ হয়েছি, তবুও এ সব দৃশ্য উপভোগ করি। আমরা দারুণ আনন্দিত।"

    মামা লু বলেন, উ শি'র বাইরে শাংহাই, নানচিং আর পেইচিং এবং অন্যান্য জায়গার বন্ধুরা সবাই এখানে বেড়াতে আসতে পারেন। এখানে ভ্রমণ খুবই ভাল।

    জানা গেছে, প্রাচীন নানছাং সড়কে চাল, বই ও চায়ের দোকান, নাপিতশালা ও অপেরা ভবনসহ নানা ধরনের দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। বর্তমানে নানছাং সড়কে হাঁটলে প্রাচীন ও নতুন যুগের মিশেল মানুষের মনে এক আশ্চর্য্য রকমের অনুভূতি সৃষ্টি করে। নতুন নানছাং সড়কের মনোহরণ সম্পর্কে খাল প্রকল্পের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ইয়ে কুও চিয়ান বলেন,

    "আমরা অনেক রকমের পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা করেছি - যেমন কয়েকটি পর্যটন স্থান ও আরামদায়ক স্থান স্থাপন করা। তবে পরে আমরা মনে করি, নানছাং সড়ক হচ্ছে উ শি শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এ জন্য আমরা তার পুরনো ধারণাকে আধুনিকায়ন করতে চাই। সত্যিকারভাবে স্থানীয় অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাপনে প্রবেশ করি। তাই এ সড়কের যদিও কয়েক শ' বছরের ইতিহাস রয়েছে, তবে তা আমাদের আধুনিক জীবনযাপনের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, সাংস্কৃতিক ও আধুনিক বৈশিষ্টসম্পন্ন।"

    আগে আমরা শুধু নানছাং সড়কের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প তুলে ধরেছি। এ সড়ক ২০১১ সালের পয়লা মে খুলে দেয়া হয়। যদিও এখন অনেক অধিবাসী ও পর্যটক এখানে বেড়াতে আসছেন, তবে আরও সুন্দর দৃশ্য দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পে দেখা যাবে। এ সম্পর্কে ইয়ে কুও চিয়ান আরও বলেন, প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প এ সড়কের ব্যবসার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে; শহরের আরামদায়ক জীবনযাপন সৃষ্টি করেছে। আর চিনথাং সেতু থেকে ছিংমিং সেতু পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প সংস্কৃতি ও শিল্পকলার ওপর গুরুত্ব দেবে। তিনি বলেন,

    "যখন দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প চালু হবে, তখন আমরা বহু বছরের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের ওপর গুরুত্ব দেবো। এর সঙ্গে সঙ্গে তাকে শিল্পকলার সঙ্গে সংযুক্ত করবো।"

    তখন এখানে অবৈষয়িক সাংস্কৃতি ঐতিহ্য প্রকল্প স্থাপিত হবে, যা মানুষের কাছে জেড ভাস্কর্য, মাটির ভাস্কর্য, সিরামিক চা পাত্র আর উশি শহরের ট্যাম্বুর প্রদর্শন করবে এবং এগুলোর তৈরি প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেবে। প্রাচীন হস্তশিল্পকর্মের কারখানা খুব সম্ভবত আবার দেখা যাবে। প্রাচীনকালে বিবাহ অনুষ্ঠান সংক্রান্ত রীতিনীতির প্রদর্শনী এ সড়কের নতুন দৃশ্যে পরিণত হবে। তাছাড়া, রনানছাং সড়কে একটি ছোট থিয়েটার নির্মিত হবে। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য এ সড়কে ৬০০টি কক্ষবিশিষ্ট ইয়ুথ হোস্টেল নির্মিত হয়েছে।

    নানছাং সড়ক হল উ শি শহরের ছিংমিং সেতু ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক এলাকার কেন্দ্রীয় অংশ। ০.৪৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে একটি প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক যাদুঘরের মতো। ছিংমিং সেতু কেন্দ্রস্থল হিসেবে সেখানে প্রাচীনকালের খাল, বিখ্যাত ব্যক্তিদের পুরনো বাসভবন, খাল যাদুঘর ও রেশম শিল্প যাদুঘর দেখা যায়।

    যদি আপনারা এ এলাকার সংস্কৃতি ও ইতিহাস ভালভাবে উপভোগ করতে চান, তাহলে তিনটি উপায়ে যেতে পারেন। এগুলো হল স্থল পর্যটন, নৌকা পর্যটন এবং স্থল ও নৌকার মিশ্র পর্যটন। এ পর্যটনের মাধ্যমে আপনারা উ শি শহরের রীতিনীতি ও শিল্প-বাণিজ্যের গভীর সংস্কৃতি জানতে পারবেন। উ শি নানছাং নতুন শহর উন্নয়ন ও নির্মাণ পরিচালনা বিভাগের কার্যালয়ের উপ-পরিচালক লি সিয়ান কুয়াং বলেন,

    "এ পর্যন্ত এ অঞ্চলের অবকাঠামো মোটামুটি নির্মিত হয়েছে এবং বাসভবন ও স্থাপত্যের মেরামত ও প্রাচীন খালের প্রশাসনও শেষ হয়েছে। পর্যটকরা এ অঞ্চলে আসলে আমাদের দুই হাজারেরও বেশি ইতিহাসের নানছান মন্দির পরিদর্শন করতে পারবেন। নানছান মন্দির থেকে বন্দরে গিয়ে নৌকা বসে বসে আমাদের খুয়াথাং সেতুর বন্দর পৌঁছতে পারবেন। এখানে প্রাচীন স্থাপত্যগুলো দেখতে পাবেন। এরপরে তাকুং সেতুর বন্দর থেকে তীরে আরোহণ করে রেশম জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবেন। সেখানে দক্ষিণ চীনের রেশম ও চা সংস্কৃতি জানতে পারবেন। এর সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকরা আমাদের নানছাং সড়কের কয়েকটি পুরনো বাসভবন দেখতে পাবেন। অবশেষে আমাদের প্রাচীন খাল জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবেন; এর ভিতরে তৈলচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে খালের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।

    বর্তমানে ছিংমিং সেতুর সাংস্কৃতিক এলাকা ০.৪৪ বর্গকিলোমিটার থেকে ১.৬৬ বর্গকিলোমিটার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৩ সাল নাগাদ এ অঞ্চল চীনের ৫এ শ্রেণীর পর্যটন এলাকায় পরিণত হবে।

     ছিংমিং সেতু এলাকায় প্রাচীনকালের পুরনো স্থাপত্য ও ছোট সেতু এবং ছোট নদীর দৃশ্য বজায় রাখার পাশাপাশি আধুনিক জীবনযাপনের পদ্ধতির সঙ্গে সেগুলোকে সমন্বিত করা হয়েছে। সময় পেলে আপনারা এখানে বেড়াতে আসতে পারেন, স্বচোখে দেখতে পারেন এখানকার সুন্দর দৃশ্য।

    (সুবর্ণা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040