|
এখন কুয়াংচৌয়ের নতুন নির্দেশনাচিহ্নের কথা উল্লেখ করলে 'কুয়াংচৌ টাওয়ারের' কথা সবচেয়ে আগে অধিকাংশই কুয়াংচৌ অধিবাসীর মনে পড়বে। ২০১০ সালের ১ অক্টোবর বিশ্বের সর্বোচ্চ টিভি টাওয়ার — কুয়াংচৌ টাওয়ার আনুষ্ঠানিকভাবে শহরবাসীদের জন্য খোলা হয়। অনেক পর্যটক বলেছেন, কুয়াংচৌ টাওয়ারের ওপরে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে পরিচিত ভূমি থাকলেও, ৬১০ মিটারের উচ্চতা তাঁদের মনের ওপর অভূতপূর্ব ও গভীর ছাপ ফেলে; দৃশ্যপট নতুন অবয়বে উপস্থিত হয়। একজন পর্যটক বলেন,
"খুবই জমকালো। বিশেষ করে সে আর শা দ্বীপ। খুবই সুন্দর।"
অন্য একজন পর্যটক বলেন,
"দেখেছি, দেখেছি। হাইসিনশা দ্বীপের ডিজাইন খুবই সুন্দর। পুরো দ্বীপ একটি নৌকার মতো।"
আরেক জন পর্যটক বলেন,
"এতো উঁচু জায়গা থেকে কুয়াংচৌর বিস্তৃত দৃশ্যাবলী আগে দেখিনি। এখন ওপর থেকে দেখার পর আবিস্কার করেছি যে, কুয়াংচৌ আরো সুন্দর হয়ে উঠছে।"
নিঃসন্দেহে কুয়াংচৌ টাওয়ার এর নিরঙ্কুশ উচ্চতা ও সুন্দর ডিজাইনের কারণে কুয়াংচৌর নতুন নির্দেশনাচিহ্নে পরিণত হয়েছে। স্থাপত্যবিজ্ঞানের ডক্টর, চৌংশান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রচার ও ডিজাইন কলেজের শিল্প ডিজাইন বিভাগের পরিচালক ফেং ইউয়ান মনে করেন, কুয়াংচৌ নতুন টিভি টাওয়ারের আবির্ভাব শুধু আমাদের দৃশ্যপট পরিবর্তন করেছে তা নয়, বরং এটা শহরের কাছ থেকে একটা প্রত্যাশাও। ডিজাইন ধারণায় কুয়াংচৌ টাওয়ার এ শহর আগের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে। তাই এটাকে কুয়াংচৌর নির্দেশনাচিহ্নের একটি নতুন প্রতীক হিসেবে দেখা যায় নিঃসন্দেহে। ডক্টর ফেং ইউয়ান বলেন,
"আমি মনে করি কুয়াংচৌ টাওয়ার সম্পূর্ণভাবে স্থাপত্যবিজ্ঞানের মৌলিক তত্ত্বের সঙ্গে খাপ খায়। সুতরাং এটা দেখার যোগ্য। বলা যায়, এটা কুয়াংচৌর গুণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।"
কুয়াংচৌ টাওয়ারের ওপর থেকে নিচের দিকে তাকালে আমরা একটি সম্পূর্ণভাবে নতুন কুয়াংচৌ দেখতে পাবো। পূর্ব রেলপথ স্টেশন থেকে কুয়াংচৌ টাওয়ার পর্যন্ত ৪.৬ কিলোমিটার জায়গায় প্রায় একশ উঁচু স্থাপত্য দাঁড়িয়ে আছে। এখান থেকে দক্ষিণ দিকে কুয়াংচৌর অক্ষরেখা গড়ে উঠেছে। অক্ষরেখায় মানুষেরা সহজেই কুয়াংচৌর বেশ কয়েকটি নির্দেশনাচিহ্ন গণনা করতে পারেন। এসব নতুন নির্দেশনাচিহ্নের মধ্যে বেড়ালে মনে হয়, এ পুরনো শহরে থেকে যেন তারুণ্যের হৃত্স্পন্দন শোনা যায়।
কুয়াংচৌর দ্বিতীয় শিশু হল, কুয়াংচৌ থিয়েটার, কুয়াংতোং প্রাদেশিক জাদুঘর, কুয়াংচৌ পৌর গ্রন্থাগার এবং হাইসিনশা এশীয় গেমস পার্ক উঁচু মানের সাংস্কৃতিক জীবনযাপনের নতুন নির্দেশনাচিহ্নে পরিণত হয়েছে। পরিদর্শনকারী একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলেন,
"এর আগে আমি হাইসিন দ্বীপে বেড়িয়েছি এবং কিছু ছবি তুলেছি। আমার মনে হয় অনেক জায়গা আগের মতো নেই। আমার বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অনেক দূর। আমি সবসময় এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কোথায় হবে তার ওপর দৃষ্টি রাখতাম। আমি এশিয়ান গেমসের আয়োজকদের প্রশংসা করি। এরকম একটি ধারণায় কুয়াংচৌ অধিবাসীদের ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে।"
কুয়াংচৌর নতুন অক্ষরেখায় অবস্থিত জুচিয়াংসিনছেং ৬৬০ মিটারের ১৩টি মহাশূণ্য অলিন্দ, ১৭টি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যবসা ভবন, বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন এবং হোটেল সংযুক্ত করেছে। ফলে মানুষেরা যথাসাধ্য শীর্ষ বাণিজ্যের সমৃদ্ধি উপভোগ করতে পারেন। কুয়াংচৌর পুরনো অধিবাসী হো একটি কৃষিভূমি থেকে শহরের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য অঞ্চলে রূপান্তর স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি বলেন,
"আমি এখানে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি। মনে হয় রাতারাতি এরকম পরিবর্তন হয়েছে কিভাবে? আমার অনুভুতি সত্যি এরকম। আমি বড় থিয়েটারের ওপর হাটি। জুচিয়াংসিনছেং সত্যি খুবই সুন্দর।"
২০১০ সালের কুয়াংচৌ এশীয় গেমসের উদ্বোধনী ও সমাপ্তি অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে হাইসিনশা দ্বীপ ভবিষ্যতে কুয়াংচৌ অধিবাসীদের 'উদযাপনী তত্পরতার মহাচত্ত্বরে' পরিণত হবে। মানুষেরা এখানে সবচেয়ে বেশি অবসর বিনোদন ও খোলা চোখে আন্তর্জাতিক বড় শহরের উন্নয়নের ফলাফল ভাগাভাগি করবেন। জুচিয়াংসিনছেংয়ের একজন বাবু-কাজ পেশাজীবী বলেন,
"আমি প্রতিদিন এখানে কাজ করি। প্রতিদিনই আমি নিকটবর্তী নির্মাণস্থল, গ্রন্থাগার এমন কি পাশের আমেরিকান কনসুলেটের ছবি তুলি। প্রায় প্রত্যেক মাসে তুলি। সত্যিই তার বড় হওয়ার প্রক্রিয়া দেখেছি। হাইসিনশা মহাচত্ত্বের নিকটবর্তী জায়গায় অনেক বেশি গণস্থাপনা রয়েছে। শহরবাসীরা এখানে খেলতে পারেন।"
এছাড়া এখানে রয়েছে জুচিয়াংসিনছেংয়ের হুয়াছেং মহাচত্ত্বর, পাচৌ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীয় কেন্দ্র, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কেন্দ্র ইত্যাদি। ১২ কিলোমিটারের নতুন শহরের অক্ষরেখায় অনেক নতুন নির্দেশনাচিহ্ন উঠে দাঁড়াচ্ছে। কুয়াংচৌ চীনের কেন্দ্রীয় শহর হিসেবে এর প্রত্যেকটি প্রধান নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি একাদশ শতাব্দীতে কুয়াংচৌর নতুন নাগরিক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য ও স্বাদের প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।
কুয়াংচৌ পৌর সামাজিক বিজ্ঞান একাডেমির আঞ্চলিক অর্থনীতি গবেষণালয়ের প্রধান ইয়াং জাইকাও বলেন,
"অক্ষরেখা দেখে আমার মনে হয়, চীনের কেন্দ্রীয় শহর হিসেবে কুয়াংচৌ আন্তর্জাতিক নগরের গুণগতমান উন্নয়ন ও ভাবমূর্তির প্রতীক। অক্ষরেখাটা সত্যিই জাতীয় কেন্দ্রীয় শহর ও আন্তর্জাতিক নগরের কেন্দ্রীয় প্রতীকী প্রকল্প।"
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |