|
কুইলিন রাইস নুডলস হল কুইলিন শহরের একটি জনপ্রিয় ও বিখ্যাত হালকা খাবার বা স্ন্যাকস্। তা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের টাটকা সবজি ও মাংস দিয়ে তৈরী সুপসহ রাইস নুডলস। কুইলিন রাইস নুডলসের ইতিহাস সম্পর্কে কয়েকটি কাহিনী রয়েছে। প্রথম কাহিনীটি হল প্রাচীনকালে চীনের ছিন রাজবংশের রাজা ছিনশিহুয়াংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। তখন তিনি কুইলিন শহরের কাছে লিংছু নামক জলাধার নির্মাণ করার জন্য কুইলিনে বেড়াতে এসেছিলেন। রাজা ছিনশিহুয়াং পোনামাছের ডিম খেতে বেশ ভালোবাসেন এবং লিচিয়াং নদীতে অনেক পোনামাছ দেখা যায়। তিনি খুব খুশি হলেন, স্থানীয় অঞ্চলের জেলেদেরকে মাছ ধরার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে রাজার একবার ডিনারের যথেষ্ট পরিমাণের মাছের ডিমসহ পাকস্থলি প্রস্তুত করার জন্য প্রতিদিন অনেক পোনামাছ ধরতে হল। রাজা ছিনশিহুয়াং লিচিয়াং নদীতে থাকার অর্ধেক মাসের মধ্যেই কয়েক হাজার পোনামাছ শিকার করা হয়। রূপকথা থেকে জানা গেছে, তখন লিচিয়াং নদীতে পোনামাছের দেবতা ছিলেন এবং রাজা ছিনশিহুয়াং অনেক পোনামাছ ধরার জন্য তিনি অনেক রাগ করেছিলেন। এ কারণে তিনি জেলেদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলছিলেন, যদিও ছিনশিহুয়াং হলেন রাজা, তবে তাঁর ইচ্ছার মতো মাছ ধরা যাবে না। নইলে দেবতা জাহাজ দুর্ঘটনা সৃষ্টি করার মাধ্যমে রাজা ছিনশিহুয়াংকে হত্যা করবে। জেলেরা দেবতার কথা শুনে খুবই ভয় পেলো, এ কারণে রাইস দিয়ে রস আবিষ্কার করে এবং মাছের পাকস্থলীর স্বাদ অনুযায়ী রাইস নুডলস তৈরী করে। রাজা ছিনশিহুয়াংয়ের তা খেয়ে বেশ ভালো লাগলো, তখন থেকেই কুইলিন রাইস নুডলস সৃষ্টি হয়েছে।
কুইলিন রাইস নুডলস সম্পর্কে আরেকটি কাহিনী আছে। জানা গেছে, একজন যুবক জেলে নদীতে নৌকা চালানোর সময় লিচিয়াং নদীর পোনামাছ দেবতাকে উদ্ধার করছিল, দেবতা জেলেকে জিজ্ঞেস করছিলেন, কী কী উপহার সে চায়? যুবক জেলেটি উত্তরে বলল, আমার মার শরীর অসুস্থ্য, কিছুই খেতে পারেন না, আমি অনেক চিন্তা করি। দেবতা তার কথা শুনে তাকে রাইস নুডলস তৈরীর উপায় শিখিয়ে দিয়েছিলেন, জেলের মা'র এ খাবার খেয়ে শরীরের রোগ ভালো হয়ে গিয়েছিল। তখন থেকে স্থানীয় অঞ্চলে রাইস নুডলস তৈরীর ইতিহাস শুরু হয় এবং প্রতি রাইস নুডলস দোকানের বাইরে কাঠ দিয়ে তৈরী পোনামাছের ভাষ্কর্য্য রাখতে হয়।
এ দু'টি কাহিনী ছাড়া কুইলিন শহরের চিয়াশান জেলার ডুনমু গ্রামে আরেকটা সুন্দর কাহিনী আছে। প্রাচীনকালে কুইলিন শহরের কাছে থাওহুয়া নদীতে মাছ ধরা একজন জেলের নাম ছিল মুকে, তার পরিবার খুবই দারিদ্র তবে তার মন খুব ভালো, রোগ আক্রান্ত মা'র খুব যত্ন নেয়। থাওহুয়া নদীর পাশে দুটি গ্রাম আছে, দুটি গ্রামের কৃষকরা মাটি ও বন দখল করার জন্য সবসময় যুদ্ধ করে। মুকে তাদের যুদ্ধ দেখে শান্ত জীবনযাত্রা বাস্তবায়ন করার জন্য অনেক চেষ্টা করছিল, তবে দুই গ্রামের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন হয় নি। একদিন রাতে মুকে বাসায় ফিরে যাওয়ার পথে দেখে একটি চিল আকাশ থেকে নদীতে নেমে একটি পোনামাছ ধরেছে, তখন মুকে এ চিলের মুখ থেকে পোনামাছটি উদ্ধার করে। ফলে এ পোনামাছ হলেন নদীর ড্রাগন রাজার মেয়ে, তিনি মুকেকে ধন্যবাদ জানার জন্য কয়েকটি পাখনা দিয়েছিলেন এবং পাখনা রান্নার উপায় শিখিয়ে দিয়েছিলেন। মুকে পাখনা রান্না করে মাকে খাওয়ায়, আর তাতে খুব কম সময়ের মধ্যে মায়ের চুল কালো হয়ে যায় এবং রোগও ভালো হয়ে যায়। একই সাথে তার চেহারার ভাঁজও বিলীন হয়ে যায়। রাইস নুডলসের সুগন্ধ অনেক দূর দূরান্তে চলে যায়। দুই গ্রামের কৃষকরা মুকে'র বাসায় এসে রাইস নুডলস তৈরীর উপায় শিখতে চায়। তখন মুকে আশা প্রকাশ করে বলল যদি দুই গ্রামের কৃষকরা যুদ্ধ থামিয়ে শান্ত জীবনযাপন কাটায়, তাহলে সবাইকে রাইস নুডলস তৈরীর উপায় শিখিয়ে দেবে। সবাই তার কথা শুনে রাজি হয়। দুই গ্রাম এক সাথে সংযুক্ত হয় এবং এ অঞ্চলের রাইস নুডলস কুইলিন শহরের উত্স্য স্থান হিসেবে বিখ্যাত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
এ তিনটি কাহিনীর মধ্যে তৃতীয় কাহিনীটি লোকজনের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, এবং তার ভেতরে রোম্যান্টিক ও সুন্দর মর্ম প্রতিফলিত হয়েছে।
(সুবর্ণা)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |