Web bengali.cri.cn   
পেইচিং রোস্ট হাঁসের গল্প
  2011-04-25 10:32:35  cri

    চীনা ভাষায় খাও ইয়া'র অর্থ হল রোস্ট ডাক,খাও'র অর্থ হল রোস্ট আর ইয়া'র অর্থ হল ডাক বা হাঁস। চীনাদের কোনো খাবারের মধ্যে কোনো রোস্ট প্রক্রিয়া থাকলে, সে খাবারের নামের মধ্যে অবশ্যই 'খাও' শব্দটি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যেমন, রোস্ট মার্চ ও রোস্ট মুরগি। চীনা ভাষায় এর প্রতিশব্দ হল খাও ইউ ও খাও জি। তবে এসব রোস্ট খাবারের মধ্যে কেন রোস্ট ডাক সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয়, তা প্রাচীনকালে চীনের একটি কাহিনীর সঙ্গে সম্পর্কিত। পেইচিং রোস্ট ডাকে ব্যবহৃত হাঁস হল এক শ্রেষ্ঠ ধরনের হাঁস। এর নাম পেইচিং হাঁস। এ হাঁস বিশ্বের সবচেয়ে গুণগতমান সম্পন্ন হাঁসের মধ্যে অন্যতম। জানা যায়, এ ধরনের সাদা পেইচিং হাঁস পালনের প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীনকালে লিয়াও রাজবংশের একজন রাজা শিকারের সময় এ ধরনের হাঁস ধরেছিলেন। খাওয়ার পর তাঁর মনে হয় এ হাঁস বেশ সুস্বাদু। তাঁর নির্দেশে তখন থেকে এ হাঁসের পালন শুরু হয়। প্রায় ৪০০ বছর আগে চীনের উত্তর ও দক্ষিণ আমলে 'শ্রেষ্ঠ খাবার তালিকা' নামক বইয়ে রোস্ট ডাকের স্বাদ ও রান্নার উপায় লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল।

    এ খাবারটির নাম পেইচিং রোস্ট ডাক হলেও এর আবিস্কার কিন্তু পেইচিংয়ে নয়। চেচিয়াং প্রদেশের হাংচৌ শহরে এটির রান্না প্রণালী আবিস্কৃত হয়েছিল, যদিও তখন এটির নাম পেইচিং রোস্ট ডাক ছিল না। এরপর পেইচিংকে ইউয়ান রাজবংশের রাজধানী করার পর রোস্ট ডাক রান্নার পদ্ধতি পেইচিংয়ে চলে আসে। কয়েক শ' বছরের গবেষণা ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে রোস্ট ডাক চীনের মিং ও ছিং রাজবংশের রাজপ্রাসাদে এক অপরিহার্য ডিশে পরিণত হয় এবং তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে পেইচিং রোস্ট ডাকে রূপান্তরিত হয়।

    রোস্ট ডাক রান্নার সবচেয়ে বিখ্যাত দুটি প্রণালী আছে। পেইচিংয়ের দুটি রেস্টুরেন্ট - ছুয়ান জু তে ও ই ফাং – আলাদা আলাদাভাবে এ দুটি প্রণালীতে পেইচিংয়ে রোস্ট করার জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। ছুয়ান জু তে প্রণালী সৃষ্টিকারী জনাব ইয়াং ছুয়ান রেন আগে ছিলেন একজন হাঁস-মুরগি ব্যবসায়ী। সে ব্যবসা থেকে বেশ খানিকটা পুঁজি জমা হওয়ার রোস্ট ডাককে সাধারণ মানুষের খাদ্যতালিকা আনার লক্ষ্যে তিনি ছিং রাজবংশের রাজপ্রাসাদের একজন পাচককে আমন্ত্রণ জানান। ওই পাচক একটা বড় আকারের চুল্লিতে হাঁসগুলোকে কুওমু নামক এক ধরনের সুগন্ধী কাঠে ঝোলান এবং রোস্ট করতে থাকেন। রোস্ট করার প্রক্রিয়ায় তিনি হাঁসগুলোকে উল্টে-পাল্টে ও এপাশ-ওপাশ করে দেন। এর ফলে হাঁসগুলোর বিভিন্ন অংশ একই রকমের গরম তাপমাত্রা গ্রহণ করে হয় এবং অবশেষে তাদের গোটা শরীর সোনালী রং ধারণ করে।

    রোস্ট ডাক তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তামপাত্রা। চুল্লির মধ্যে ২৫০ থেকে ৩০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তামপাত্রায় কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁসগুলোকে রাখতে হয়। স্বাদ বাড়ানোর জন্য চুল্লি থেকে বের করার পর হাঁসগুলোর পুরো শরীরে সিসেল তেলের প্রলেপ দিতে হয়।

    এ সুস্বাদু খাবার খাওয়ার পদ্ধতিও খুব মজার। একটা দুই কেজির গরম হাঁসের শরীর থেকে প্রায় ১০০টিরও বেশি ছোট টুকরো কেটে নেয়া যায়। টুকরোগুলো এমন করতে কাটতে হয়, যাতে ওপরের অংশে হাঁসের চামড়া ও নিচে মাংস থাকে। যদি শুধু রোস্ট ডাক খান, তাহলে বেশি তেল থাকার কারণে সহজে পেট ভরে যাবে। চীনারা অতিথিদের জন্য ছোট পাতলা পানকেক বা শাপলা পাতার কেক, মিষ্টি সস ও পেঁয়াজ কুচি, শসার কুচি ও মুলার কুচি প্রস্তুত করে রাখেন। প্রথমে একটি পাতলা পানকেক নিয়ে এর মাঝখানে মিষ্টি সস রাখুন, তারপর পানকেকের মধ্যে পেঁয়াজ ও শসার কুচি ও রোস্ট ডাকের স্লাইস রাখুন। অবশেষে হাত দিয়ে তা পেচান। এভাবে রোস্ট ডাক খেলে খুব সুস্বাদু লাগে। পানকেক বা শাপলা পাতার কেক পাতলা রুটির মতো। এর রং সাদা ও আকার গোল।

    বন্ধুরা,যদি আপনারা চীনে বেড়াতে আসেন, তাহলে পেইচিং রোস্ট ডাক খেতে ভুলবেন না। আমার মনে হয়, এ ডিশ খেলে আপনারা এর স্বাদ কখনো ভুলতে পারবেন না।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040