Web bengali.cri.cn   
থিয়ান চিনে ৭ ঘন্টা
  2011-04-06 09:22:07  cri

থিয়ান চিন ভ্রমণ ছিল আমার অনেক দিনের স্বপ্ন। সে স্বপ্ন পূরণ হলো এই সেদিন। শুধু একটি ব্যাগ ও ক্যামেরা নিয়ে একাই বেরিয়ে পড়ি থিয়ান চিনের উদ্দেশ্যে।

সকালে আমি ঘুম থেকে উঠি। একজন পর্যটকের জন্য ভালো আবহাওয়া খুব গুরুত্বর্পূণ। কিন্তু এদিন সকালে যখন আমি জানালার পর্দা তুলে দেখি পৃথিবীটা যেন সাদা হয়ে গেছে তুষারে। তবে তার জন্য আমি ভ্রমণ পরিকল্পনা ত্যাগ করি না; ভাবি এ তুষার ভ্রমণকালে আমাকে এক অতুলনীয় অনুভব এনে দেবে। হ্যাঁ, আমার থিয়ান চিন ভ্রমণ প্রথম দিকে চমকে ভরা।

ট্রেনে বসি। ভাগ্যক্রমে আমি জানালার পাশে একটি আসন পেয়ে যাই। আমি যেসব গান শুনি তা বেশ ক'দিন দিন আগে আমি আমার এ ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করি। কারণ আমি জানি, যদি একা ভ্রমণ করি, পথের একাকিত্ব বোধ দূর করার জন্য গান খুব প্রয়োজনীয়। গান শুনতে শুনতে আমি পথের দৃশ উপভোগ করি, তখন আমি মনে করি, সারা বিশ্ব আমার অন্বিত হয়েছে।

কোনে অপরিচিত শহর গেলে কখনো কখনো একটু একাকিত্ব বোধ হয়। তবে থিয়ান চিনে আমার সে রকম বোধ হয়নি। গানের শিল্পীর কণ্ঠ ছাড়া আমি থিয়ান চিনে তীব্র শব্দ শুনি। এতো উত্সাহজনক এতো ঘনিষ্ঠ! আচ্ছা, তাহলে শুরু করছি থিয়ান চিন ভ্রমণ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে আমি 'কু ওয়েন হুয়া চেই' - সাংস্কৃতিক সড়কের দিকে যাত্রা করি। কেউ একজন একবার বলেছিলেন, একটি শহরকে দ্রুত জানার সহজ উপায় হচ্ছে ট্যাক্সিতে বসে ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলা। সেকারণে আমি একটি ট্যাক্সি নিয়ে ভ্রমণ শুরু করি। ট্যাক্সিতে বসে আমি ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করি। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, 'মেয়ে কোথায় যাবে?' তিনি আমার কাছে রাস্তার দৃশ্য বর্ণনা করেন। যেমন 'তা কুয়াং মিন ছিয়াও' - বড় আলো সেতু। এ সেতুতে চারটি সেতু দুর্গ আছে; প্রতিটি সেতু দুর্গের ওপর মানুষের সোনালী ভাস্কর্য আছে। তারা আলাদাভাবে সূর্য, চাঁদ ও তারা এবং তাদের পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করে। আমি তখন ট্যাক্সির মধ্যে বলে ছবি তুলতে পারিনি।

তখন সকালে ১০টা, থিয়ান চিনের রাস্তায় একটু ভীড়। কিন্তু কোনো চিন্তা দরকার নেই। কারণ আপনি যখন ট্যাক্সির মধ্যে বসবেন, একটুও বিরক্তি অনুভব হবে না। এ ড্রাইভারেরও কোন অস্বস্তি নেই; তিনি পিংকিং অপেরার গান গাওয়া শুরু করেন। তার সুন্দর কণ্ঠ শুনি আমি আমার নিজের গান থামিয়ে। এ কণ্ঠ থিয়ান চিন শহরের বিশেষ উপহার।

রেল স্টেশন থেকে সাংস্কৃতিক সড়ক খুব দূরে নয়; ট্যাক্সি করে মাত্র ৮ মিনিটের পথ। সাংস্কৃতিক সড়কে পৌঁছে ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে আমি আমার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলি।

সাংস্কৃতিক সড়কে প্রবেশ করে আমি যেন এক নতুন বিশ্বে ঢুকে পড়ি। আমার মনে হয় এটা যেন পেই চিংয়ের নান লুও কু সিয়ানের মতো এবং ইউন নান প্রদেশের লি চিয়ানের মতো। তবে সাংস্কৃতিক সড়কে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে।

সাংস্কৃতিক সড়কের প্রতিটি দোকান খুবই মজার, খুবই সুন্দর। যে দোকানে আমি প্রথম ঢুকি সেটির নাম থিয়ান সিয়ান সুও। দোকানে চীনামাটি ও চামড়ার পুতুল আছে। এগুলোর প্রতি আমি খুব আগ্রহী; চামড়ার পুতুলে গরু, ভেড়া ও গাধার ত্বক তৈরি করা হয়েছে। প্রবীণ চীনা মানুষেরা চামড়ার পুতুল নিয়ে অনেক প্রাচীন গল্প বলেন। এগুলো হচ্ছে প্রধানত ভালবাসার গল্প। আমার মনে পড়ে একটি ডিভি অনুষ্ঠান -- তা মিন কং জি-এর কথা:

মেয়ে: মনের কথা বলার মতো, বন্য ফুল বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে ভেসে, ফুলের ভালবাসার প্রকাশের মতো, সবুজ ঘাস হালকাভাবে নড়ে, বসন্তকালে হলুদ নদীর ওপরে সবুজ চিত্র ফেলে, নদীর মনের শান্ত ভাব ভেঙে দেয়।

লি সাহেব: মেয়ে, তোমার সুন্দর ধাপ আমার জন্য থামাও। তুমি কি জানো যে, তোমার একটি বড় ভুল ঘটেছে?

মেয়ে: সাহেব, আপনার ঘোড়া আমার বাঁশের ঝুড়ি ভেঙে দিয়েছে। আপনি দেখেন, এ বিস্তীর্ণ রাস্তা দিয়ে আকাশের দিকে পৌঁছানো যায়। কিন্তু আপনার ঘোড়া পানি ছিটিয়ে আমার কাপড় নোংরা করেছে। এটা কি আমার ভুল?

লি সাহেব: অবশ্যই, তোমার ভুল হচ্ছে। তোমার সুন্দর মুখ দেখে আমার হাত ঘোড়া নিয়ন্ত্রণ পারেনি, তোমার কালো চুল আমার চোখ ভরে দিয়েছে যে, আমি পাহাড়, সাগর, আকাশ দেখতে পারি না। শুধু কালো, তোমার চুলের কালো, তোমার অতুলনীয় মুখ। আমি এমনকি আমার ঘোড়াও তোমার জন্য নেশার ঘোরে পড়েছে, তার মালিককে ভুলে গেছে।

আমার মনে হয়, সংস্কৃতি হিসেবে যাকে সঙ্গায়িত করা যায়, তা হলো এমন কিছু যা ধারণ করে মানুষের রহস্যজনক ও রোম্যান্টিক ভাবাবেগ।

এ দোকানের পর আমি একটি মাটির তৈজসপত্রের দোকানে যাই। মৃত্তিকা বা মাটির জিনিপত্র আমার প্রিয়। চীনের অনেক পরিবারে অনেক মাটির তৈরি বাটি আছে। যদি বাটির নিচে একটি সূচিপত্রসহ পেয়ালার গদি থাকে তাহলে তা খুবই সুন্দর দেখায়। আমি এ দোকান থেকে একটি নীল ও একটি সবুজ গদি কিনি।

এরপর আমি তৃতীয় দোকানে যাই। দোকানটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলে। সেটি স্ফটিকের মতো একটি দোকান। সেটি অনন্য, যেন পরীর মতো। এতোগুলো দোকানের মধ্যে কেবল এ দোকানটিতে যেন সূর্যের মতো আলো আছে। হ্যাঁ, এ দোকানে রয়েছে নানা রকমের সঙ্গীত বাক্স। যখন আমি এ দোকানে প্রবেশ করি, তখন দেখি এখানকার বিক্রয়কর্মীরা অন্য কর্মীদের থেকে আলাদা। তিনি আমাকে কোন প্রশ্ন করেন না, শুধু তার পাশের একটি সঙ্গীত বাক্স তুলে এনে কয়েক বার বদলান। তার পর সুন্দর সঙ্গীত ভেসে আসে। বাণিজ্যের চেয়ে জীবন আরো গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে সঙ্গীতে সুন্দর বিশ্ব উপভোগ করি, আমার ভাল লাগে।

খুব দীর্ঘ সময় না হলে, প্রায় দু'ঘন্টা কু এয়েন হুয়া চিয়ে ভ্রমণ করি। সে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় একটু থামি; আমি আবার সেদিকে তাকাই। আমার খিদে লেগেছে। আচ্ছা, থিয়ান চিনের সুস্বাদু খাবার খাচ্ছি। এটি হচ্ছে 'গোও বু লি পাও জি'। হ্যাঁ, থিয়ান চিন এসে স্থানীয় খাবার খাওয়া উচিত। আমি 'সি পিং চিয়ে' - খাবার সড়কে আসি। এবার ভ্রমণের আগেই আমার একজন থিয়ান চিন বন্ধু আমাকে বলে দিয়েছিল যে, 'সি থো ম্যান খান' নামের একটি দোকানের 'পাও জি' খুবই সুস্বাদু। বন্ধুরা, আপনারা থিয়ান চিনে এলে 'গোও বু লি পাও জি' খেতে ভুলবেন না কিন্তু।

আমার থিয়ান চিন ভ্রমণের শেষ স্থান হচ্ছে 'থিয়ান চিন চোখ' - মস্ত বড়ো নাগরদোলা।

এমন কথা প্রচলিত আছে, আপনি যদি আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে মস্ত বড়ো নাগরদোলায় বসে, সেটি যখন তার সর্বোচ্চ স্থানে পৌঁছায় তখন আপনার প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে চুমু খান, তাহলে আপনাদের জীবন আনন্দে কাটবে। তাছাড়া, মস্ত বড়ো নাগরদোলায় আপনারা সারা থিয়ান চিন প্রদেশের দৃশ্য দেখতে পাবেন, অতুলনীয়!

দেখতে দেখতে শেষ হয়ে আসে এবারের ভ্রমণ। ট্রেন স্টেশনে প্রবেশের আগে আমি আবার থিয়ান চিনকে দেখি। এ শহর, আমার সঙ্গে ৭ ঘন্টার কাটানো শহর, আমি মনে মনে বলি, আমি আবার আসছি, থিয়ান চিন। দেখা হবে। (জিনিয়া ওয়াং)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040