|
চীনা ভাষায় শুয়াং'র অর্থ হল দুই, পি'র অর্থ হল পল্লার সর, নাই'র অর্থ হল দুধ। শুয়াং পি নাই অর্থাত্ দু'পল্লার সরের দুধ কাস্টার্ড। প্রাচীনকালের ছিং রাজবংশে কুয়াংতুং প্রদেশের শুনদে শহরের একজন কৃষক এ জলখাবার আবিষ্কার করছিল। এরপর নানা ধরনের সংস্কার ও উন্নয়নের ফলে বর্তমানে চীনের দক্ষিণাঞ্চলের একটি জনপ্রিয় জলখাবারে পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকে কুয়াংতুয়ের শুনদে শহরের পাইশি গ্রামের কৃষকরা গরু পশুপালনের মাধ্যমে জীবনযাপন কাটছিল। সেখানে তৃণভূমিতে ঘাস প্রচুর, গরুর উত্পাদিত দুধের পরিমাণ যদিও খুব বেশি নয়, তবে দুধের গুণগতমান খুব ভালো, সুগন্ধী ও নবনীপূর্ণ। প্রাচীনকালে রিফ্রিজরেটার না থাকার কারণে কৃষকরা দুধ সঞ্চয়ের জন্য অনেক উপায় চিন্তা করছিল। একদিনে একজন কৃষক দুধ সিদ্ধ করার পর দেখছিল দুধ ঠাণ্ডা হওয়ার পর এর উপর হাল্কা সর দেখা যায়, খেতে মিষ্টি ও নরম। তখন থেকে এ কৃষক বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে দু'পল্লার সরের দুধের কাস্টার্ড তৈরীর উপায় আবিষ্কার করেছিল। ১৯৫২ সালে এ কৃষক রেনসিন নামক একটি ছোট মিষ্টি দোকান খুলে দু'পল্লার সরের দুধের কাস্টার্ড ও অন্যান্য দুধের জলখাবার বিক্রি করছিল।
দু'পল্লার সরের দুধের কাস্টার্ডের তৈরীর উপায় আসলে খুব কঠিন নয়। টাটকা দুধ সিদ্ধ করে গরম হওয়ার পর একটি পেয়ালায় রেখে দেন। কয়েক মিনিট পর দুধের ওপর সর দেখা যায়, চপস্টিক দিয়ে সরকে একটু ছোট ফাকা তৈরী করে আস্তে আস্তেভাবে র মধ্যের দুধ অন্য পাত্রে রাখুন, কিছু পরিমাণে ডিমের সাদা অংশ চিনি দিয়ে দুধের সাথে নেড়ে নিন, তারপর দুধ আবার আগের পেয়ালায় রাখুন, তখন আগের সর আস্তে আস্তে দুধের উপরে উঠে আসবে। সেসময় তা পাত্রে রেখে স্টিম করে। কম সময়ের মধ্যে দুধের ওপর আরেক পল্লার সর দেখা যাবে। তখন দু'পল্লার সরের দুধের কাস্টার্ড খাওয়া যায়। এ খাবার তৈরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূণ পদক্ষেপ হল দুধের বাছাই। গুণগতমান সম্পন্ন দু'পল্লার সরের দুধের কাস্টার্ডের তৈরীর দুধ অবশ্যই টাটকা এবং নবনীপূর্ণ হতে হবে। দুধের মধ্যে তেল যত বেশি তত ভালো। দুধ সিদ্ধ করার সময় ফুটানো হবে ন, নইলে দুধ বেশ গরম হওয়ার জন্য দুধের সর সহজে নষ্ট হয়ে যাবে। গরম দুধ সিদ্ধ করার পর তা ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। ডিমের সাদা অংশ দুধের সাথে মেশানোর পর হালকা আগুণে তা ফুটিয়ে নিন, পাত্রে দুধের কাস্টার্ডের আকার দেখে আগুণ বন্ধ করতে হবে। পাত্রের ওপর ঢাকনা ঢাকা দেয়ার সময় একটি ছোট ফাঁকা থাকতে হবে, যাতে বাষ্পের পানি পেয়ালায় পড়ে না যায় । এ কয়েকটি টিপস জানার পর, এখন আমি আপনাদের জন্য এ খাবার রান্নার উপায় জানিয়ে দিচ্ছি।
প্রথমে ৪০০ মিলিলিটার নবনীপূর্ণ টাটকা দুধ, দুটি ডিমের সাদা অংশ ও দুই চামচ চিনি একসাথে মিলিয়ে নিন।পাত্রে দুধ কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিন, তবে দুধ বেশি ফুটানো লাগে না। একটা বড় সাইজের পেয়ালায় গরম দুধ রাখুন, তখন দুধের উপর এক পল্লার সর দেখা যায়। একটা খালি পেয়ালায় দু'টি ডিমের সাদা অংশ রাখুন, দুই চামচ চিনি দিয়ে তার সাথে নেড়ে নিন। গরম দুধ একটু ঠাণ্ডা হওয়ার পর চপস্টিক দিয়ে সরের মধ্যে একটি ছোট ফাঁকা তৈরী করুন, তারপর দুধ ডিমের সাদা অংশ রাখা পেয়ালায় ঢেলে দিন। তা সম্পূর্ণ মেশানোর পর আবার দুধকে সর থাকা পেয়ালায় রাখুন। তখন প্রথম পল্লার সর দুধের উপরে চলে আসবে। অবশেষে দুধ পাত্রে রেখে ১০ মিনিট স্টিম করুন, চপস্টিক দিয়ে পেয়ালার দুধ নাড়ার চেষ্টা করেন, যদি সব কাস্টার্ডে পরিণত হয়, তাহলে আগুণ বন্ধ করুন। পছন্দ হলে আপনারা রিফ্রিজরেটারে দুধের কাস্টার্ড রাখুন, তা ঠাণ্ডা হওয়ার পর খেলে বেশ মজা লাগে এবং খাওয়ার সময় আপনারা দুধের মাঝখানে চোকলেট সস বা চেরির সস অর্থাত্ লাল ডালের সোস দিতে পারেন। এসব মিষ্টি উপকরণের সাথে দুধের কাস্টার্ড খেলে আরও সুস্বাদু লাগবে। যদিও দুই পল্লার সরের দুধের কাস্টার্ড দক্ষিণ চীনের কুয়াংতুং প্রদেশের একটি জলখাবার, তবে তার সুস্বাদু স্বাদের কারণে এখন চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে তা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়েছে।
বন্ধুরা, এ জলখাবার তৈরীর উপায় সহজ এবং শরীরের জন্য তা অনেক পুষ্টিকর। সময় পেলেই আপনারা বাড়িতে তা তৈরী করতে পারেন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |