Web bengali.cri.cn   
পেইচিংয়ের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ খাবার ডৌজি'র গল্প
  2011-03-07 16:00:39  cri
    গত সপ্তাহ থেকে আমি আপনাদের জন্য পেইচিংয়ের হাল্কা ধরনের খাবারের গল্প জানিয়ে দিচ্ছি, আজকের অনুষ্ঠানের আমি আপনাদেরকে পেইচিংয়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও মজার খাবার ডৌজি'র গল্প জানিয়ে দেবো।

    আপনারা অবশ্যই জানতে চান, ডৌজি কী জিনিস? আসলে তা সবুজ ডাল দিয়ে তৈরী সয়বীন দুধের মতো এক ধরনের রসালো খাবার। চীনাভাষায় ডৌ'র অর্থ হল ডাল এবং জি'র অর্থ হল রস। এর রঙ সবুজ, স্বাদ টক ও কটু, গন্ধ চিজের মতো। যদি কেউ প্রথমবার তা খায় খুব সম্ভবত তার স্বাদ পছন্দ হবে না। তবে কয়েকবার তা খাওয়ার পর অনেকের কাছেই ডৌজির বিশেষ স্বাদ খুবই ভাল লাগবে, টক ও কটু স্বাদের ডৌজি প্রাধান খাবার হিসেবে পরিণত হবে। প্রাচীনকালে ডৌজি ছিল পেইচিংয়ের শীতকাল ও বসন্তকালের জনপ্রিয় হাল্কা ধরনের খাবার। প্রাচীনকালে ডৌজি'র ধারণা কাঁচা ও সিদ্ধ দু রকমেরই ছিল। কাঁচা ডৌজি'র বিক্রেতারা সাধারণত হাত দিয়ে কাঠের বালতিতে ডৌজি রেখে বিক্রি করতো। সিদ্ধ হওয়া ডৌজি বিক্রেতারা বাঁশ দিয়ে তৈরি পণ্য বহনের ভার নিয়ে এক পাশে ডৌজি'র পাত্র রাখতো এবং অন্য পাশে ভাজা প্যাচানো মুড়ালি ও ঝাল আচার রাখতো। কারণ লোকজন ডৌজি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্যাচানো মুড়ালি ও ঝাল আচার খাওয়ার পছন্দ করে।

    ডৌজি'র ইতিহাস সুদীর্ঘকালের। জানা গেছে, প্রাচীনকালের সোং রাজবংশে তা ছিল খুবই জনপ্রিয় হাল্কা খাবারের অন্যতম। ছিং রাজবংশের ছিয়ানলোং আমলে অর্থাত্ ১৭৫৩ সালে একজন কর্মকর্তা রাজা ছিয়ানলোংকে একটা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এ প্রস্তাবের প্রধান বিষয় ছিল সাধারণ লোকজনের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় খাবার ডৌজি সম্পর্কিত। তাঁর পরিচয়ের মাধ্যমে ডৌজি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজপ্রাসাদের এক ধরনের খাবারে পরিণত হয়েছিল।

    কেউ মনে করে, ডৌজি শুধু মাত্র ছিং রাজবংশের মান জাতির খাবার। আসলে ডৌজি'র পছন্দকারীরা শুধু একটি জাতির লোক নয় এবং ধনী বা দরিদ্র মানুষ যেই হোন না কেন, সবাই তাকে পছন্দ করে। প্রাচীনকালে যদি একজন ধনী মানুষ রাস্তার পাশে ছোট দোকানে অন্য খাবার খান, তাহলে সবাই তাকে উপহাস করতো। তবে যদি কেউ ডৌজি খাওয়ার জন্য রাস্তায় বসে যায়, তবে কেউ তাকে উপহাস করতো না। মন্দির মেলা আয়োজনকালে ডৌজি বিক্রেতারা কাঁচা ডৌজি নিয়ে মন্দিরের সামনে এসে তারপর গরম পাত্রে তা সিদ্ধ করার পর বিক্রি করতো। গ্রীষ্মকালে উষ্ণ আবহাওয়া প্রতিরোধ করার জন্য বিক্রেতারা তাঁবু সাজিয়ে তাতে ডৌজি নিয়ে বসতো। যদিও ডৌজি'র ধারণা সুন্দর নয়, তবে দীর্ঘকাল ধরে পেইচিংয়ের অধিবাসীদের কাছে তা বেশ পছন্দের। এর কারণ হল ডৌজি'র পুষ্টিকর ভুমিকা। এর মধ্যে প্রোটিন, ভিটামিন সি ও চিনি'র পরিমাণ প্রচুর। তা শরীরের জন্য অনেক সহায়ক, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে উষ্ণ আবহাওয়া প্রতিরোধের ক্ষেত্রে।

    ডৌজি খাওয়ার পদ্ধতিও দুই রকম। ঠাণ্ডা ডৌজি খাওয়ার সময় মুখে চিজের গন্ধ বেশি থাকে, গরম ডোজি খাওয়ার সময় স্বাদ ভিন্ন রকম। যদি টকের মধ্যে মিষ্টি, আচার, প্যাচানো মুড়ালি বা রুটি'র সাথে ডৌজি খান, তাহলে তা আরও সুস্বাদু হবে। শীতকালে পেইচিংয়ের অধিবাসীরা সবসময় কাঁচা ডৌজি কিনে বাসায় তা সিদ্ধ করার পর খায়। তবে গ্রীষ্মকালে মন্দির মেলায় গিয়ে ঠাণ্ডা ও সিদ্ধ হওয়া ডৌজি খায়। ছিং রাজবংশের ছিয়ানলোং আমলের খাবার বইয়ে লিপিবদ্ধ রয়েছে যে, গ্রীষ্মকালে রাজপ্রাসাদের রান্নাঘরে পাচকরা ডৌজি'র তৈরী শুরু করছিল। রাজা ও রাণীকে বেশি মাংস খাওয়ার পর অবশ্যই ডৌজি খেতে হবে। কারণ তা খাওয়ার পর পাকস্থলীর হজমের জন্য অনেক সহায়ক হবে।

    বর্তমানে রাস্তায় ডৌজি বিক্রেতাদের পাওয়া যায় না। বসন্ত উত্সবের মন্দির মেলায় মাঝে মাঝে তা পাওয়া যায়। পেইচিংয়ের অধিবাসীদের জন্য তা একটি দুঃখের ব্যাপার। ১৯৯৭ সালে চীনের রান্না পরিষদের আয়োজিত প্রথম পর্যায়ের 'চীনের বিখ্যাত হাল্কা ধরনের খাবার উত্সবে' ডৌজি'র নাম তালিকায় লিপিবদ্ধ হয় এবং তখন থেকে পেইচিংয়ের হুকুওসি হাল্কা ধরনের খাবার দোকানে ডৌজি সবসময় পাওয়া যায়। বন্ধুরা, যদি আপনারা পেইচিংয়ে আসার সুযোগ পান, তাহলে অবশ্যই এ ঐতিহ্যিক খাবার একটু খেয়ে দেখবেন।

    (সুবর্ণা)

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040