|
প্রথম খাবার 'এর ডুও ইয়ান' কেক তৈরি
থিয়েনচিন পুরনো শহরের উত্তর দরজার রাস্তায় একটি আঁকাবাঁকা এবং সরু ও লম্বা অলিগলি আছে, আর এ অলিগলি কেমন হবে তা নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, নিশ্চয়ই? চীনা ভাষায় এ অলিগলির নাম এর ডুও ইয়ান হু থোং। এর ডুও ইয়ান হল মানুষের কানের ভিতরের অংশ এবং হুথোং হল অলিগলি। এর অর্থ হল অলিগলির আকার মানুষের কানের ভিতরের মতো। এ হুথোংয়ের প্রবেশ এলাকায় একটি আঠালো কেক তৈরির দোকান আছে, এ হুথোং'র কারণে কেক তৈরি দোকানের নাম হল এর ডুও ইয়ান কেক তৈরির দোকান। এ কেক তৈরির দোকানের দীর্ঘকালীন ইতিহাস রয়েছে।
জানা গেছে, প্রাচীনকালের ছিং রাজবংশের কুয়াংস্যু আমলে লিউ ওয়ান ছুন নামক একজন পুরুষ থিয়েনচিন শহরে এসে রাস্তায় কেক বিক্রি শুরু করছিলেন। তিনি মনোযোগ দিয়ে সুস্বাদ্য আঠালো কেক তৈরীর উপায় গবেষণা করছিলেন, ধীরে ধীরে লোকজন তাঁর দোকানের কেক বেশ পছন্দ করতে শুরু করছিল। অনেক বছর পর তিনি সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে উত্তর দরজার কাছে আঁকাবাঁকা এর ডুও ইয়ান হুথোংয়ে নিজের কেক তৈরির দোকান স্থাপন করছিলেন। তখন দোকানের নাম চেংশেংছেং ছিল।
দোকানের কেক ভালভাবে বিক্রি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ খাবার পছন্দকারী লোকসংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। তবে দোকানের নাম সহজভাবে মনে রাখতে না পারা এবং এ দোকানটি এর ডুও ইয়ান হুথোংয়ে থাকার কারণে লোকজন এ সুস্বাদ্য কেককে এর ডুও ইয়ান বলে ডাকে।দীর্ঘকাল ধরে লোকজন এ নাম বলতে বলতে, দোকানের মালিক এর পুরনো নাম পরিবর্তন করে এর ডুও ইয়ান কেক তৈরির নাম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন।
এর ডুও ইয়ান কেক তৈরীর উপায় অনেক কঠিন। তা হলুদ আঠালো চালের গুড়া দিয়ে তৈরী পিঠার মতো খাদ্যবস্তু, এর ভিতরে চিনি মেশানো লাল ডালের গুড়ার পুর থাকে। তা পিঠার মতো পুরের সঙ্গে তৈরীর করার পর তিনটি তেলের পাত্রে তিন বার ভাজতে হয়। প্রথমে হাল্কা গরম তেল পাত্রে একটু ভেজে পরে আরেকটি আরো বেশি গরম পাত্রে ভাজতে হয় এবং অবশেষে সিসিম তেল দেয়া পাত্রে আবারও ভাজতে হয়। এভাবে করার পর তা খাওয়া যায়। বহু প্রক্রিয়ার পর কেকটি দেখতে সোনালী রংঙের, নরম ও সুগন্ধ, গরম ও মিষ্টি, খেতে বেশ মজাদার লাগে।
থিয়েনচিন শহরের আরেকটি সুস্বাদু হাল্কা ধরনের খাবার আছে, এর নাম শিবা চিয়ে মাহুয়া। চীনা ভাষায় শিবা হল আঠালো, চিয়ে'র অর্থ হল রাস্তা এবং মাহুয়া'র অর্থ হল প্যাচানো এক ধরনের মুড়ালি। শিবা চিয়ে হল বর্তমানে থিয়ানচিনের একটি রাস্তার নাম। এ খাবারের ইতিহাস সম্পর্কে দুটি কাহিনী আছে।
একটা হল মাহুয়া'র সৃজক ফান কুই ছাই ও ফান কুই লিন দুই ভাই। এরা দু'জন শিবা চিয়ে রাস্তায় পৃথক পৃথকভাবে দু'টি প্যাচানো মুড়ালির দোকান স্থাপন করছিলেন। সুস্বাদ্যু মাহুয়া তৈরী করার জন্য লোকজন তাদের খাবারকে শিবা চিয়ে মাহুয়া বলে ডাকে।
আরেকটা কথা হল ছিং রাজবংশের শেষ আমলে লিউ লাও বা নামক একজন পুরুষ শিবা চিয়েতে একটি কুইফাসিয়াং নামক দোকান স্থাপন করছিলেন এবং নানা ধরনের প্যাচানো মুড়ালি তৈরীর উপায় নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। বিশেষ করে তাঁর তৈরী মুড়ালি খেতে বেশ মচমচে লাগার কারণে লোকজন এ দোকানের মাহুয়া বেশ পছন্দ করে। নয়া চীন প্রতিষ্ঠার পর বিশেষ করে চীনের উন্মুক্ত ও সংস্কার নীতি চালু হওয়ার পর এর ডুও ইয়ান কেক এবং প্যাচানো মুড়ালি থিয়ানচিন শহরের দুটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ খাবার হিসেবে দেশ বিদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। বন্ধুরা, যদি সুযোগ পান অবশ্যই তা খাবেন, দেখুন কত মজার তা।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |