|
লংচিং চিংড়ি মাছের নাম থেকে বোঝা যায় যে, তা লংচিং সবুজ চা এবং চিংড়ি মাছের সঙ্গে মিশিয়ে রান্না করা হয়। চীনের হাংচৌ শহর হল সবুজ চা লংচিংয়ের উত্পাদন এলাকা। লংচিং চায়ের পাতা সবুজ, আকার সুন্দর, স্বাদ মিষ্টি এবং গন্ধও সুগন্ধী। চিংড়ি মাছ বিশেষ করে সবুজ রংয়ের চামড়ার চিংড়ি মাছের স্বাদ অনেক সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর। তা কিডনীর স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সহায়ক। চিংড়ি মাছের মাংস সাদা এবং লংচিং চায়ের পাতা সবুজ, তা মিশিয়ে রান্না করার পর, এ ডিশ দেখতে বেশ সুন্দর লাগে। এ ডিশের মধ্য দিয়ে হাংচৌ শহরের খাবারের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে।
কাহিনী অনুযায়ী, লংচিং চিংড়ি মাছ রান্নার উপায় প্রধানত দুই রকম। প্রথম হলো: চীনের প্রাচীনকালের সোং রাজবংশের বিখ্যাত কবি তত্কালীন হাংচৌ শহরের গভর্নর সু তুং পুওয়ের কবিতার সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে। প্রাচীনকালে হাংচৌয়ের পুরনাম ছিল চিয়াংনান। কবি সু তুং পুও তার কবিতা 'চিয়াংনান' সম্পর্কে লিখেছিলেন, নতুন আগুণ দিয়ে টাটকা চা সিদ্ধ করা যেন যৌবনকালে মদ খাওয়ার সাথে সাথে সুন্দর কবিতা লেখার মত। চীনের চান্দ্র পঞ্জিকা অনুযায়ী ছিংমিং উত্সব অর্থাত্ ৫ এপ্রিলের আগের দু'দিন লংচিং চা পাতা সবচেয়ে টাটকা ও দামী। লোকজন কবি সু তুং পুওয়ের কবিতা থেকে আবিষ্কার করে যে, ছিংমিং উত্সবের সময় টাটকা বড় চিংড়ি মাছ ও টাটকা লংচিং পাতা দিয়ে ডিশ রান্না করেছিল, ফলে এ সুস্বাদু খাবার আবিষ্কৃত হয়েছে। এখন আমি আপনাদের জন্য তা রান্নার উপায় জানিয়ে দিচ্ছি।
প্রথমে টাটকা বড় সাইজ এবং সবুজ চামড়ার চিংড়ি মাছ ১০০০ গ্রাম, লংচিং চায়ের পাতা ১.৫ গ্রাম, ডিম একটা, হলুদ মদ ১.৫ গ্রাম, লবন ৩ গ্রাম, স্টার্চ ৪০ গ্রাম এবং তেল ১০০ গ্রাম নিন। চিংড়ি মাছের চামড়া ফেলে দিন, চিংড়ি মাছের মাংস পানিতে রাখুন, এভাবে তিনবার ধোয়ার পর শুকনো তোয়ালে দিয়ে চিংড়ি মাছের মাংসের বাকি পানি মুছে ফেলুন। বড় পেয়ালার মধ্যে লবণ ও ডিমের সাদা অংশ দিয়ে দিন, তা চপস্টিক দিয়ে ঘুটে নেয়ার পর তাতে শুকনো স্টার্চ গুড়ো দিন এবং ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এক চা কাপ লংচিং চায়ের পাতা মিশিয়ে নিন এবং ৫০ গ্রাম গরম পানি দিয়ে কাপের মধ্যে ঢেকে রাখুন। এক মিনেট পর ৪০ গ্রাম পানি ফেলে দিন এবং চায়ের পাতা ও বাকি পানি কাপের মধ্যে রাখুন। পাত্রের মধ্যে তেল দিয়ে দিন, তেল একটু গরম হওয়ার পর চিংড়ি মাছের মাংস দিয়ে দিন, তাড়াতাড়ি চপস্টিক দিয়ে মাংসগুলো ভালো করে নেড়ে ভেজে নিন, প্রায় ১৫ সেকেন্ড পর মাংস উঠিয়ে অন্য পাত্রে রাখুন। এবার চুলোয় থাকা পাত্রের মধ্যে অল্প পরিমাণে তেল দিন, আবার চিংড়ি মাছের মাংস ভাজুন, চায়ের পাতা ও চায়ের রস দিয়ে দিন, হলুদ মদ ও অল্প পরিমাণের লবণ দিয়ে দিন, কয়েকবার নেড়ে নিয়ে তা প্লেটে রাখুন।
লংচিং চিংড়ি মাছ সম্পর্কে আরেকটি গল্প আছে, তা প্রাচীনকালে চীনের ছিং রাজবংশের রাজা ছিয়ান লোংয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত। কাহিনী অনুযায়ী, বসন্তকালের ছিংমিং উত্সবে রাজা ছিয়ান লোং হাংচৌ সফরে এসেছিলেন। স্থানীয় অঞ্চলের কর্মকর্তা লংচিং চা উপহার হিসেবে তাঁকে দেন। তিনি চা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চায়ের সুগন্ধী চার দিকে ছড়িয়ে যায়। তখন রাজার পাচক এ সুগন্ধী ঘ্রাণ নেয়ার পর রান্না ঘরে চিংড়ি মাছ দেখে হঠাত্ এ দু'টি খাবার মিশিয়ে রান্না করার উপায় চিন্তা করেছিলেন। এ ডিশ রাজা ছিয়ান লোং-এর খেতে বেশ ভাল লাগে। এ কারণে লংচিং চিংড়ি মাছ অনেক বিখ্যাত হয়েছে।
এ ডিশ রান্নার দ্বিতীয় উপায়টি জানিয়ে দিচ্ছি। চিংড়ি মাছের চামড়া ফেলে দেয়ার পর মাংস শুকিয়ে নিন। এর মধ্যে ডিমের সাদা অংশ, লবণ, হলুদ মদ ও রস দিয়ে দিন। সেই সাথে কিউই ফল স্লাইস করে কেটে দিন। পাত্রের মধ্যে তেল রাখুন, তেল গরম হওয়ার পর চিংড়ি মাছ ভেজে নিন তারপর প্লেটে রাখুন। অল্প গরম তেল দিয়ে আদার গুড়ো ভাজুন, তারপর অল্প পরিমাণে মুরগীর সুপ দিন, চিংড়ি মাছ ও চায়ের পাতা সুপের সঙ্গে মিশিয়ে নিন এবং স্টার্চ রস দিয়ে দিন। অবশেষে কিউই ফলের স্লাইস দিয়ে দেন। তারপর লংচিং চিংড়ি মাছ প্লেটে রাখুন। খেয়ে দেখুন, কোন উপায়ে রান্নার পর এ ডিশ খেতে বেশ মজা লাগে।
(সুবর্ণা)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |