|
"চিয়াংসি প্রদেশের পর্যটনের কথা বলতে চাইলে এক কথায় তাকে বর্ণনা করা যায়। সেটি হলো 'প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য' বা 'বেশি সুন্দর'। সুন্দর চিয়াংসি, সুন্দর আকাশ ও ভূমি। আমাদের চিয়াংসি প্রদেশে একটি হ্রদ—বোইয়াং হ্রদ আছে। এটা অত্যন্ত সুন্দর একটি হ্রদ। পাশাপাশি এটা আমাদের বিশ্বের জীবিত হ্রদ নেটওয়ার্কের সদস্য। চীনে এটাই এরকম একমাত্র হ্রদ। প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন বা কয়েক কোটি পরিযায়ী পাখি এখানে শীতকাল কাটায়।"
চিয়াংসির পর্যটন সম্পর্কে ওয়াং শিয়াওফেং দুটো বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। প্রথমত, চীনের প্রথম মিঠা-পানি হ্রদ—বোইয়াং হ্রদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। দ্বিতীয়ত, ঐতিহ্যপূর্ণ চিয়াংসির সাংস্কৃতিক সৌন্দর্য্য। তিনি বলেন,
"আমি সবসময় মনে করি, চীনকে উপলব্ধি করতে চাইলে চিয়াংসিকে উপলব্ধি করতে হবে। কারণ ১ হাজার ৭শ' বছর আগে থেকে চিয়াংসির একটি জায়গা—চিংদেজেন আছে, যেখানে চীনের চীনামাটি সংস্কৃতির জন্ম হয়। চিংদেজেনের চীনা মাটি দেশে-বিদেশে খুবই বিখ্যাত। এ ব্র্যান্ড চীনের ব্র্যান্ড। এছাড়া চীনের ইংরেজী চায়না। এর অর্থও চীনা মাটি। পাশাপাশি আমাদের চিংদেজেনে উত্পাদিত চীনা মাটির সংস্কৃতি এখনও বিশ্বের এবং চীনের ওপর প্রভাব ফেলে চলেছে।"
ওয়াং শিয়াওফেং বলেন, অনেক দেশী-বিদেশী বন্ধু চীনে আসলে চীনের ইতিহাস জানতে চান। কিন্তু চীনের আধুনিক ইতিহাস চিয়াংসিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছাপ ফেলেছে। তিনি বলেন,
"সবাই জানেন আমাদের চীন গণ প্রজাতন্ত্র। প্রথম দিকে চিয়াংসিতে এ দেশের অপরিণত রূপ গড়ে তোলা হয়েছিল। এটি শাসনব্যবস্থার ভিত্তি ছিল। প্রজাতন্ত্রের আগে চিয়াংসি প্রদেশের রুইচিন শহরে শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। বৈপ্লবিক ঘাঁটি এলাকাও সর্বপ্রথম চিয়াংসি প্রদেশের চিংকাংশানে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া চীনের সামরিক বাহিনী চিয়াংসি প্রদেশের রাজধানী নানছাংয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। সুতরাং চিয়াংসির সঙ্গে চীনের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধুনিক উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এসব উপলব্ধি করতে চাইলে এখান থেকে তার পরিচয় জানতে এবং তাকে বিশ্লেষণ করতে হবে।"
চিয়াংসির সংক্ষিপ্ত রূপ কান। এটা দক্ষিণ-পূর্ব চীনে এবং ইয়াংসি নদীর মধ্য ও নিম্ন অববাহিকায় অবস্থিত। ৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে থাং রাজবংশের সম্রাট স্যুয়ানজোং চিয়াং নান সি তাও এবং প্রধান নদী কানচিয়াংয়ের নামানুসারে এ প্রদেশের নামকরণ হয় চিয়াংসি। প্রাচীনকাল থেকে এখানকার ফসল ও পণ্যদ্রব্য সমৃদ্ধ এবং বহু সংখ্যক মেধাবী মানুষ ও বিপুল সাংস্কৃতিক বস্তুর সম্মিলন ঘটেছে এখানে।
প্রাচীনকাল থেকে দক্ষিণ চীনের দুগ্ধ ও মধুভূমি হিসেবে খ্যাত চিয়াংসি। 'পৃথিবীর উত্কৃষ্ট পণ্য প্রাকৃতিক সম্পদ ও বিশিষ্ট মানুষের জন্মস্থান' দিয়ে চিয়াংসিকে বর্ণনা করলে সত্যই তা হয় যথার্থ। চিয়াংসি প্রদেশের ভাইস-গভর্নর জু হোং ব্যাখ্যা করেন,
"চিয়াংসির পর্যটন সম্পদ সারা দেশের তালিকায় শীর্ষস্থানীয় স্থানগুলোর অন্যতম। চারটি বিখ্যাত পর্বত - লু পর্বত, চিংকাং পর্বত, সানছিং পর্বত ও লুংহু বা ড্র্যাগন ও বাঘ পর্বত রয়েছে এখানে। এর মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং কয়েকটি বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। একটি হ্রদ, অর্থাত্ বোইয়াং হ্রদ হচ্ছে চীনের বৃহত্তম হ্রদ। উ ছেংয়ে পরিযায়ী পাখি দেখা খুবই মনোরম ও আনন্দদায়ক ব্যাপার। এখানকার একটি গ্রাম -- উ ইউয়ান -- হচ্ছে চীনের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম। একটি প্যাভিলিয়ন, অর্থাত্ থেংওয়াং প্যাভিলিয়ন, হচ্ছে হাজার বছরের প্রাচীন প্যাভিলিয়ন এবং একটি জেলা, অর্থাত্ চিংতেজেন জেলা, হচ্ছে হাজার বছরের চীনামাটি নগর।"
ভাইস-গভর্নর জু হোং যেমনটি বললেন চিয়াংসির ইতিহাস তেমনই সুদীর্ঘ। সুন্দর পাহাড় ও নদী, মেধাশক্তি, ঐতিহাসিক স্থান ও দৃশ্যবলী সবকিছুর মিলন ঘটেছে এখানে। সারা চিয়াংসি প্রদেশে ৪টি বিশ্ব ঐতিহ্য, ১১টি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান, ৩৬টি জাতীয় পর্যায়ের বন পার্ক, ৩টি জাতীয় ঐতিহাসিক বিখ্যাত নগর এবং ৫২টি চীনের গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি সংরক্ষণ ইউনিট রয়েছে। সব মিলিয়ে চিয়াংসি প্রদেশের বিভিন্ন রকমের দর্শনীয় স্থান ২ হাজার ৪শ'রও বেশি। এর মধ্যে চিউচিয়াং শহর বিখ্যাত পর্বত, বিখ্যাত নদী ও বিখ্যাত হ্রদের উত্তম সম্মিলনস্থল। চিউচিয়াং পর্যটন ব্যুরোর মহাপরিচালক তু শাওহুয়া ব্যাখ্যা করেন,
"বিখ্যাত পর্বত হচ্ছে আমাদের লু পর্বত। বিখ্যাত নদী হচ্ছে দশ হাজার মাইল দীর্ঘ ইয়াংসি নদী। বিখ্যাত হ্রদ হচ্ছে চীনের প্রথম মিঠা পানি হ্রদ বোইয়াং হ্রদ। এ তিনটি হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নাম ফলক। এই তিনটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আবার একই জায়গায় মিলিত হয়েছে। এটা চীনে খুব কম দেখা যায়। সারা বিশ্বেও খুব কম দেখা যায়।"
ইয়াংসি নদীর তীরে অবস্থিত চিউচিয়াং শহর চিয়াংসি প্রদেশের অন্য পর্যটন শহরের মতো নয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ছাড়াও এর রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। চীনের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্য বইয়ে প্রাচীনকালের অনেক কবিতা রয়েছে। এর মধ্যে থাং রাজবংশের কবি বাই চু ইর 'পিপাসিং' ও লি বাইর 'লু পর্বতের জলপ্রপাত দেখা' চিউচিয়াংয়ের পর্বত ও পানিকে প্রেক্ষাপট হিসেবে সৃষ্ট বিখ্যাত শিল্পকর্ম। চিউচিয়াং পর্যটন ব্যুরোর মহাপরিচালক দু শাও হুয়া বলেন,
"ইতিহাসে চিউচিয়াংর নাম ছিল চিয়াংচৌ, ছাইসাং ও স্যুনইয়াং। থাং রাজবংশের মহান কবি বাই চু ই চিয়াংচৌয়ে 'সিমা' পদে বহাল থাকার সময় এখানকার অনেক দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যান। বিখ্যাত পণ্ডিত জু সি হাজার বছরের পুরানো বিদ্যালয়ে আলোচনা সভা করতেন।"
চিয়াংসিতে এত সমৃদ্ধ পর্যটন সম্পদের মধ্যে দেশী-বিদেশী পর্যটকরা কিভাবে নিজেদের ভ্রমণ বাছাই করেন? চিয়াংসি প্রাদেশিক পর্যটন ব্যুরোর মহাপরিচালক ওয়াং শিয়াওফেং সবার জন্য একটি ভালো প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন,
"আসলে পর্যটকরা চিয়াংসিতে আসলে আমরা তাদের জন্য সুপারিশ করবো যে, সাত-আট দিন অথবা পাঁচ-ছয় দিনই ভ্রমণের জন্য যথেষ্ট। আমরা প্রথমে রাজধানী নানছাংয়ে প্রবেশ করবো। তারপর কাছের দর্শনীয় স্থান লু পর্বতে যাবো। বিশ বা ত্রিশের দশকে লু পর্বতে কয়েক হাজার ভিলা নির্মাণ করা হয়েছে। তারপর আমরা যাবো চিংতেজেনে। সেখানে আপনারা চীনের ঐতিহ্যবাহী চীনামাটি তৈরীর শিল্প দেখতে পারবেন। আপনারা চীনের প্রথম পর্যায়ের শিল্পীদের সঙ্গে সামনাসামনি আলাপ করতে পারবেন। আরো সামনে গেলে আমাদের উ ইউয়ান আছে। এটা হচ্ছে চীনের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম।"
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |