|
প্রিয় শ্রোতাবন্ধুরা, সবাই ভালো আছেনতো? আজকের রান্নাবান্না অনুষ্ঠান শোনার জন্য আপনাদের জানাচ্ছি আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা। আমি আপনাদের বন্ধু সুবর্ণা।
আজকের ডিশের নাম হচ্ছে কুওছিয়াও রাইস নুডল্স। চীনাভাষায় কুও'র অর্থ হল অতিক্রম। ছিয়াও'র অর্থ হল সেতু, কুওছিয়াও মানে সেতু অতিক্রম করা। তাহলে আমরা কেন এ নামে এ ডিশটিকে ডাকি। এ সম্পর্কে একটি সুন্দর গল্প আছে। কাহিনী অনুযায়ী, এ ডিশ চীনের ইউয়ুন নান প্রদেশের মেং জি জেলায় উদ্ভাবন করা হয় এবং এ পর্যন্ত ১০০ বছরেরও বেশি এর ইতিহাস রয়েছে।
কাহিনী অনুযায়ী মেং জি জেলার সীমান্তে একটি দক্ষিণ হ্রদ আছে, হ্রদের পানি পরিস্কার ও সবুজ, হ্রদের দু'পাশে নরম উইলো গাছ লাগানো রয়েছে। হ্রদের মাঝখানে একটি ছোট দ্বীপ আছে, দ্বীপে প্যাগোডা ও ভবনের চারদিকে সবুজ বাঁশ বন দেখা যায়, সুন্দর ও শান্ত পরিবেশ এবং পরিস্কার আবহাওয়ার কারণে জেলার কাছাকাছি এলাকা থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী সেখানে গিয়ে লেখা পড়া করেন।
তারা অন্যান্য লোকের মত দ্বীপের মাঝখানে গিয়ে পরীক্ষার জন্য বইপত্র পড়েন। তবে তাদের মধ্যে একজন মনোযোগ দিয়ে বইপত্র পড়ার কারণে তিনি সবসময় তাঁর স্ত্রীর পাঠানো খাবার খেতে ভুলে যান, মাঝে মাঝে অনেক দেরীতে খান, তখন সব খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
ভাল খেতে না পারার কারণে তাঁর শরীর ধীরে ধীরে চিকন ও দুর্বল হয়ে গেছে। তাঁর স্ত্রীর এ দৃশ্য দেখে মনে খুব চিন্তা হয়। একদিন, তাঁর স্ত্রী মুরগী দিয়ে এক পাত্র মাংসের সুপ রান্না করে এবং গরম থাকার পাত্রে রাখে। এ সুপ দীর্ঘ সময় গরম তাপমাত্রা বজায় রাখে। তাঁর স্ত্রী স্থানীয় অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার রাইস নুডল ও অন্যান্য মাংস ,সবজি দিয়ে গরম মুরগী সুপের মধ্যে রেখে দেয়, তা খেয়ে ছাত্রটির অনেক পছন্দ হয় এবং অনেক সুস্বাদু লাগে। এ কারণে স্ত্রী সবসময় এ ডিশ তাঁকে পাঠাতে থাকে। অবশেষে ছাত্রটি দেশের সর্বোচ্চ পরীক্ষায় পাস করে একজন কর্মকর্তায় পরিণত হন।
তবে তিনি সবসময় স্ত্রীর যত্ন নেয়ার কথা মনে রাখেন। তিনি মজা করে বলেন, স্ত্রী তাঁকে এ ডিশ না পাঠলে, খুব সম্ভবত তাঁর পরীক্ষায় পাস হতো না। স্ত্রী তাঁর জন্য খাবার পাঠানোর পথে সবসময় আকাবাকা সেতু অতিক্রম করতো বলে এ ডিশকে কুওছিয়াও রাইস নুডল্স বলে হয়। লোকজন তার গল্প শুনে খুব মজা পেলো এবং এ ডিশ বেশ জনপ্রিয় হয়ে গেল। তাই লোকজন এ পদ্ধতিতে রাইস নুডল্স রান্না করে। পরবর্তিকালে কুওছিয়াও রাইস নুডল্স দেশি বিদেশী জনপ্রিয় ডিশ হিসেবে অনেক বিখ্যাত হয়।
এখন আমি এ ডিশ রান্নার উপায় সম্পর্কে কিছু তথ্য জানিয়ে দেই। কুওছিয়াও রাইস নুডল তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। তা হল সুপ, সবজি এবং রাইস নুডল। প্রথমে একটি মুরগী কেটে বড় পাত্রে মুরগীর সুপ রান্না করুন। রান্নার সময় চীনা পেঁয়াজ, রসুন ও আদা দিয়ে পানির সঙ্গে সিদ্ধ করুন প্রায় ২ ঘন্টা ধরে। যখন দেখবেন গরম সুপের ওপর মুরগীর মাংস থেকে সিদ্ধ হওয়া তেল সুপের ওপর উঠেছে তখন সুপের মধ্যে কালো গোল মরিচের গুড়ো এবং অল্প লবণ দিয়ে দেন। কাঁচা মাছ, মুরগীর মাংস ও গরুর মাংস স্লাইস করে কাটেন এবং চিংড়ি মাছ প্রস্তুত করেন, নানা ধরনের শাক সবজি, বীনকার্ড ধোয়ার পর প্রস্তুত করেন। শুকনা রাইস নুডল গরম পানিতে একটু রাখুন। একটা বড় সাইজের পাত্রে গরম মুরগীর সুপ দেন, কাঁচা মাংস ও কোয়েলের ডিমসহ প্রথমে গরম সুপে রাখুন এবং তাড়াতাড়ি তা সুপের সঙ্গে মিশিয়ে নিন, গরম সুপের তাপমাত্রায় মাংসগুলো সহজেই রান্না হয়ে যাবে। তারপর আস্তে আস্তে শাকসবজি ও রাইস নুডল সুপের মধ্যে রাখুন। সবশেষে অল্প সয়া সস ও মরিচ তেল রাখুন। এ ডিশ খাওয়ার সময় আপনারা গরম সুপ খাওয়ার সময় সাবধানে খেতে হবে। সুপের মধ্যের খাবার খাওয়া শেষে সুপের তাপমাত্রা ঠিক হবে। মুরগীর মাংসের সুগন্ধীসহ সুপ খেতে বেশ মজা লাগে এবং নানা ধরনের মাংস ও সবজি মিলে এ খাবার বেশ পুষ্টিকর। কুও ছিয়াও রাইস নুডলের মাধ্যমে ইউয়ুন নান প্রদেশের খাবারের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়, সুযোগ পেলে আপনারাও এ ডিশ রান্না করুন। আশা করি, সবাই মজা পাবেন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |