|
শিশাহাই হচ্ছে পেইচিং নগরের একগুচ্ছ হ্রদের পুরো নাম। পেইচিংয়ের কেন্দ্রস্থলের উত্তর-পশ্চিম দিকে পর পর ছিয়ানহাই, হোহাই ও শিশাহাই নামে তিনটি হ্রদ আছে। বছরের চার ঋতুতে এখানকার দৃশ্যের স্পষ্ট পরিবর্তন দেখা যায়। হ্রদের নীল রঙের পানি স্বচ্ছ। তীর ঘেষে এক একটি উইলো গাছ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দুটি হ্রদের মাঝখানের ইনডিং সেতুর উপর দাঁড়িয়ে পেইচিংয়ের উত্তর-পশ্চিম দিকে তাকালে স্পষ্টভাবে দূরের পশ্চিম পাহাড় দেখা যায়। এখন আসুন, আমরা শিশাহাই হ্রদের তীরে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়াই। আর সেই সাথে আমরা পেইচিং শহরের ৭০০ বছরের পরিবর্তনকে অনুভব করি।
বর্তমানের শিশাহাই অতি নিরিবিলি ও শান্ত। তা দেখে আপনি ভাবতেও পারবেন না যে, চীনের ইউয়ান রাজবংশের সময় এখানে একটি অতি ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক বন্দর ছিল। কারণ পেইচিং থেকে হাংচৌগামী মহাখালের সম্মিলন স্থান এখানে ছিল। ফলে তখনকার দিনে এখানে সবসময় দক্ষিণ চীন থেকে আসা নানা ধরনের বাণিজ্যিক জাহাজগুলো এখানে এসে ভিড়তো। রেশম ও চা পাতাসহ নানা পণ্য দক্ষিণ চীন থেকে এখানে পরিবহণের পর রেশমী পথ ও চা রোড দিয়ে পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকায় পাঠানো হতো। ৭০০ বছর পার হয়ে গেল। অতীতের ব্যস্ত বাণিজ্যিক দৃশ্য আর দেখা যায় না। তবে যত্ন সহকারে দেখলে এখানকার চার দিকে অতীতের কিছু কিছু দৃশ্য আবিষ্কার করা যায়।
চিয়ানহাই হ্রদের পশ্চিম তীরে বিভিন্ন রকমের অনেক বার রয়েছে। তার মধ্যে ১০০ বছর আগের একটি বিখ্যাত রেস্তরাঁর অস্তিত্ব এখনও আছে। এর নাম হুইসিয়ানথাং। এ পুরনো ভবনটির কেবল দু'তলা আছে। তবে প্রাচীনকালে এটাকে একটি মহাভবন বলা হতো। হুইসিয়ানথাংয়ের দক্ষিণ দিকে রয়েছে হ্রদ। অনেক শিল্পীরা এখানে এসে আড্ডা জমাতো। সত্তর থেকে আশি বছর অরক্ষিত পরে থাকার পরও এ স্থাপত্য কর্ম অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় রয়েছে, তা সত্যিই ভাবার মত। ভালো কথা, এখন এ ভবনের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। এ ভবনের মালিক ফুরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র সংগঠন মেরামতের দায়িত্ব বহন করছে। এখানে কর্মরত লি রোং লিয়াং বলেন, 'ফুরেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদের সংগঠনের অধীনে কেবলমাত্র এমন একটিই পুরনো ভবন আছে। আমরা এটিকে একটি তাত্পর্যসম্পন্ন স্মৃতিময় স্থানে পরিণত করতে চাই। এখন আমরা মেরামত করছি। কারণ এ ভবনটি একটি পুরাকীর্তি।'
বলতে পারি না, কবে থেকে শিশাহাই পেইচিংয়ে বিদেশী পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের স্থানে পরিণত হয়েছে। নানা রকম বার ও স্মারকবস্তুর দোকান এখানে খোলা হয়েছে। এখানকার ছোট ছোট গলিতে প্রায়শই সোনালী রংয়ের চুল ও নীল রং চোখের বিদেশী পর্যটকদের দেখা যায়। শিশাহাই'র পূর্ব দিকে অবস্থিত ইয়ানতাইশিয়ে সড়কে সবচেয়ে বেশি ভিড় হয়।
ইয়ানতাইশিয়ে সড়কের দৈর্ঘ্য মাত্র দু'থেকে তিন শ' মিটার। এটা হচ্ছে শিশাহাই থেকে পাশের প্রধান রাস্তায় যাওয়ার একটি গলি। এ গলিতে পুরনো পেইচিংয়ের নানা জিনিসপত্র পাওয়া যায়। এটা হচ্ছে পেইচিংয়ের একটি বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান এবং চীনের ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক রাস্তা।
গলিতে আমরা লক্ষ্য করেছি, একটি বিশেষ দোকান। বাইরে থেকে দেখতে একটি পুরনো ডাক ঘরের মতো। এখানে আমরা ডাক ঘরের প্রধান মিঃ ওয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করি। তিনি জানান, এখানে একটি ক্ষুদ্র ডাক জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ছবি ও নানা পণ্য দিয়ে আধুনিক চীনের ডাক বিভাগের ইতিহাস তুলে ধরা হবে।
শিশাহাই'র শেষপ্রান্তে একটি পাথরের সেতু আছে। এ সেতুটি পেইচিং নগরের মধ্য লাইনে অবস্থিত। রাজপ্রাসাদ জাদুঘর ঠিক এ সেতুর দক্ষিণ দিকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ সেতু ছিল ইউয়ান রাজবংশের ওয়াননিং সেতু। তত্কালীন স্থপতিরা এ সেতুকে কেন্দ্র করে তত্কালীন বিশ্বের বৃহত্তম শহর – ইউয়ান রাজবংশের রাজধানী নির্মাণ করেন। সেতুর নিচে হ্রদের পানি এখনো নিরবে বইছে। আগের মত ব্যস্ততা আর দেখা যায় না। কিন্তু সেতুর ওপরে আগের মতো ভিড় ঠিকই হচ্ছে।
বন্ধুরা, পেইচিংয়ে আসার সুযোগ পেলে শিশাহাইতে আসতে ভুলবেন না যেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এখানে রাস্তার দু'পাশে নানা রঙের চোখ ধাধানো বাতি জ্বালানোর পর রাত্রির দৃশ্য আরো সুন্দর হয়ে যায়। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |