|
ফুরো নগর হচ্ছে চাংচিয়াচিয়ের একটি থু জাতি অধ্যুষিত প্রাচীন নগর। দু'হাজার বছর আগে থু জাতির সর্বোচ্চ প্রশাসক - তুসি ওয়াংচেন এখানে বসবাস করতেন। এ কারণে ফুরো নগরের আরেকটি নাম রয়েছে। সেটা হলো ওয়াং গ্রাম। এ নগরে এখনো ভালোভাবে সংরক্ষিত রয়েছে প্রাচীনকালের সবুজ পাথর সড়ক ও মাচান ঘর। গত শতাব্দীর ৮০'র দশকে চীনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সিয়ে চিন এখানে 'ফুরো নগর' নামে একটি চলচ্চিত্র তৈরি করেন, যেটি নানা পুরস্কার অর্জন করে। ওই চলচ্চিত্রের পর এ ক্ষুদ্র নগরের নাম বদলে হয়ে যায় ফুরো নগর।
'ফুরো নগর' চলচ্চিত্রের পোস্টকার্ড
'ফুরো নগর' চলচ্চিত্রে গত শতাব্দীর ৬০ থেকে ৭০'র দশকে চীনের এক ক্ষুদ্র নগরের কয়েকজন সাধারণ মানুষের জীবনের উত্থান-পতনের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র হু ইয়ু ইন মিতোফু অর্থাত্ চাল দিয়ে তৈরি চীনের এক ধরনের স্থানীয় পিঠা বিক্রি করে জীবন চালাতেন। চীনের অভিনেত্রী লিউ সিয়াও ছিং ও অভিনেতা ছিয়াং ওয়েন এ চলচ্চিত্রের কারণে সারা চীনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। তা ছাড়া, এ চলচ্চিত্রের কারণে এ ছোট নগরের নিয়তিও বদলে গেছে।
আমাদের সংবাদদাতা ফুরো নগরে ভ্রমণের সময় সিয়াও হুয়া নামে একজন থু জাতির মেয়ে পথনির্দেশক হিসেবে তার সঙ্গে ছিলেন। সিয়াও হুয়া আমাদের নিয়ে চলচ্চিত্র 'ফুরো নগর' এর প্রধান চরিত্র হু ইয়ু ইনের মিতোফু দোকানের সামনে আসেন। চলচ্চিত্রের আগে থেকে এখানে একটি মিতোফু দোকান ছিলো। চলচ্চিত্র হচ্ছে এ দোকানের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞাপন। সিয়াও হুয়া আমাদের বলেন, 'মিতোফু হচ্ছে চাল ও প্লাস্টার দিয়ে তৈরি খাবার। এখানকার মিতোফু দেখতে চিংড়ি মাছের মতো। কিন্তু অন্য জায়গার মিতোফু কেবল চৌখুপি আকারের।'
মিতোফু হচ্ছে স্থানীয় থু জাতির এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী বিশিষ্ট খাবার। এতে টক ও ঝালের স্বাদ থাকে। পর্যটকরা তা খাওয়ার পর প্রশংসা করে বলেন, 'খুব ভালো। এর ভিতরে পিঁয়াজ আছে। টক ও ঝাল খেতে খুব সুস্বাদ।'
'এর সূপ আমার কাছে খুব ভালো লাগে। একটু টক, একটু মিষ্টি। চীনের দক্ষিণাঞ্চলের অধিবাসীদের রুচির সাথে খাপ খায়।'
মিতোফু
ফুরো নগরের '১১৩ নম্বর' নামক দোকানে মিতোফু খাওয়ার পর আমরা ফুরো নগরের প্রাচীন সড়কে প্রবেশ করি। সিয়াও হুয়া বলেন, 'এ সড়ক নদীর জাহাজঘাটা থেকে শুরু হয়েছে এবং এর দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটার। এটা হচ্ছে এ পর্যন্ত সবচেয়ে ভালোভাবে সংরক্ষিত একটি পাথর সড়ক। এর ইতিহাস দু'হাজার বছরেরও বেশি। এ নদীর নাম মেংতুং নদী। বিখ্যাত লেখক শেন ছুং ওয়ন এ নদীকে পাই নদী বলতেন। প্রাচীনকালে এ এলাকার যোগাযোগ প্রধানত নদীপথ নির্ভর ছিল। মেংতুং নদীর মাধ্যমে সিছুয়ান, কুইচৌ, হুনান ও শাংহাইসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এ নগরটির। এ কারণে এটাকে ক্ষুদ্র নানচিং বলে ডাকা হতো।'
শিল্পী সোং চু ইংয়ের গানের তালে তালে আমরা সবুজ পাথর সড়কে হাঁটি। এ সবুজ পাথর সড়কের দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার। এ সড়ক ধরে হাটলে প্রায় পুরো প্রাচীন নগরটি পার হয়ে যাওয়া যায়। এ গলির নাম নেই। স্থানীয় লোকেরা কেবল এটাকে পাঁচ মাইল সড়ক বলে ডাকে।
এ রাস্তায় থু জাতির একটি লোকনীতি জাদুঘর আছে। এখানে হাত দিয়ে চালিত তুলা উত্পাদনের যন্ত্র ও কাঠের ওপর সুন্দরভাবে খোদাই করা খাটসহ শতাধিক প্রাচীনকাল থেকে সংরক্ষিত আসবাবপত্র রয়েছে, যার মধ্য দিয়ে থু জাতির প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ইতিহাস প্রতিফলিত হয়। জাদুঘরের একজন কর্মকর্তা জানান, থু জাতির এক যুবক নদনদী ও পাহাড় পার হয়ে অনেক কষ্টে এসব প্রদর্শনী সংগ্রহ করেন। এ প্রদর্শনী এখানে নিরবে এ প্রাচীন নগরের অতীতকালের গল্প বর্ণনা করে। এখানে আরো কয়েকটি রেশমী দোকান রয়েছে। দোকানের দেওয়ালে রঙিন কাপড়ের ব্যাগ, দেওয়াল ছবি, বিছানার চাদর, ইত্যাদি সাজানো রয়েছে। পর্যটকরা মেয়েদের কাপড় বোনার কৌশল দেখার পাশাপাশি প্রদর্শন পণ্যগুলোর বৈশিষ্ট্য জানতে পারেন।
সিয়াংসুই নদী
প্রাচীন রাস্তার পাশে অবস্থিত কোন একটি থু জাতির মাচান ঘরে বসে, পায়ের নিচে নিরবে মেংতুং নদীর পানি বয়ে যাচ্ছে। টেবিলে এইমাত্র রান্না হওয়া মাছের সুগন্ধ বের হচ্ছে। নদীর ওপারে গুচাং জেলার সবুজ চা পাতা দিয়ে তৈরি চা খাই। কী আরামদায়ক অভিজ্ঞতা। রহস্য ও প্রাচীন চিয়াংশি প্রদেশের সুন্দর নগরে আমরা আনন্দ মনে বসে আছি। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |