|
চাংচিয়াচিয়ের নাম শুনলে অনেকে হয়তো মনে করেন, এখানকার অধিকাংশ মানুষের পারিবারিক নাম 'চাং' হবে। আমি আমাদের পথনির্দেশক আছাইকে এ প্রশ্নটি করেছি। তিনি উত্তরে বলেন, 'চাংচিয়াচিয়ের নামের উত্স বলতে গেলে পশ্চিম হান যুগের কথা বলতে হয়। তখন লিউ পাং পশ্চিম হান রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর অধীনে কয়েকজন জেনারেল ছিলেন। চাং লিয়াং নামের এক জেনারেল লিউ পাংকে রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পদ গ্রহণ না করে গ্রামে ফিরে যান। চীনের নানা জায়গায় পরিভ্রমণের পর অবশেষে তিনি এখানকার সুন্দর নদনদী ও পাহাড়ের দৃশ্যে মুগ্ধ হন। তিনি এখানে স্থায়ীভাবে থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং 'চাংচিয়াচিয়ে' নামে একটি পাথর ফলক এখানে স্থাপন করেন।'
আজ আমরা প্রথমে ভূগর্ভস্থ চাচিয়াচিয়ে নামে সুপরিচিত হুয়াংলোং গুহাতে যাবো। কাহিনীতে বলা হয়, অতীতে হুয়াংলোং গুহাতে একটি হলুদ রঙের ড্রাগন লুগিয়ে ছিল। ১৯৮৩ সালে স্থানীয় আট জন যুবক এ গুহা আবিষ্কার করেন। ১৯৮৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তা উন্মুক্ত করা হয়। এ গুহার ভিতরে বিস্তীর্ণ স্থান, গভীর নদী, বড় জলপ্রপাত, হাজারটি মণি পুকুল ও স্ট্যালাকটাইট পাথর আছে বলে এটা বিশ্বের চুণাপাথরের গুহার মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে। আছাই জানিয়েছেন, একটি আন্তর্জাতিক চুণাপাথরের গুহা সমিতির অনুসন্ধান গ্রুপ প্রতি বছর হুয়াংলোং গুহা পরিদর্শন করে। গুহায় প্রবেশের আগে আছাই আমাদের জানিয়েছেন, স্ট্যালাকটাইট পাথর এক বছরে কেবল এক মিলিমিটার বাড়ে। কিন্তু হাজার হাজার বছর অতিবাহিত হওয়ার পর এসব স্ট্যালাকটাইট পাথর নানা আকারের প্রাকৃতিক স্থাপত্যে পরিণত হয়।
হুয়াংলোং গুহায় প্রবেশের দুটি দরজা রয়েছে। চওড়া দরজার নাম দেয়া হয়েছে 'দীর্ঘায়ু দ্বার', আর পাতলা দরজার নাম 'সুখী দ্বার'। পথনির্দেশক আমেই জানিয়েছেন, 'কিংবদন্তি অনুযায়ী, সুখী দ্বার দিয়ে প্রবেশ করলে পরিবারে সুখ-শান্তি আসবে এবং বৈবাহিক সম্পর্ক মধুময় হবে। দীর্ঘায়ু দ্বার দিয়ে প্রবেশ করলে শত বছর বেঁচে থাকা যাবে। আপনি দীর্ঘায়ু হতে চান, নাকি সুখী জীবন অর্জন করতে চান – সে ইচ্ছামতো দরজা বাছাই করতে পারেন। কিন্তু মনে রাখবেন, কেবল একটি দরজাই আপনি বাছাই করতে পারবেন।'
হুয়াংলোং গুহার ভিতরে ১৩টি বড় হলের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটি আয়তনই ৬ হাজার বর্গমিটার। সেটা দেখতে একটি মঞ্চের মতো। অনেকে বলেন, এটি ছিল ড্রাগন রাজার নৃত্যমঞ্চ। প্রতি বছরের ৩ মার্চ ড্রাগন রাজা এখানে একটি বড় আকারের নৃত্য পার্টির আয়োজন করতেন।
এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হুয়াংলোং গুহার মোট আয়তন ১ লাখ বর্গমিটার। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে সাত কিলোমিটার। উচ্চতা ১৪০ মিটার। এর ভিতরে দুতলা শুষ্ক গুহা ও দুতলা পানি গুহা আছে।
আমরা নৌকা করে সিয়াংসুই নদীতে ভ্রমণ করেছি। এ নদীর দৈর্ঘ্য ২৮২০ মিটার। তবে পর্যটকরা কেবল এর মধ্যে ৮০০ মিটার অংশে ভ্রমণ করেন। এটা ভ্রমণে সময় লাগে মাত্র ৮ মিনিট। এ নদীর গভীরতা গড়ে ছয় মিটার - সবচেয়ে গভীর জায়গায় ১২ মিটার। এর পানির তাপমাত্রা সবসময় ১৬ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে থাকে।
এখানে রয়েছে চীনের জাতীয় প্রথম শ্রেণীর গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণ প্রাণী অ্যান্ড্রিয়াস ডেভিয়ানাস বা বৃহদাকার চীনা স্যালামানডার বেঁচে থাকার সবচেয়ে উপযুক্ত পরিবেশ। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |