|
সেদিন আমি আমার একজন বন্ধুর সঙ্গে অন্ধকার রেস্তোরাঁয় খেতে চেয়েছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দু'জনের মধ্যে দেখা সাক্ষাত্ না হওয়ার কারণে আমরা কেউই জানতাম না কোথায় সেই রেস্তোরাঁ আছে। হঠাত্ আমার মনে পড়লো, পেইচিংয়ের সিদান শপিং এলাকায় একটি অন্ধকার রেস্তোরাঁ আছে। শুনেছি ওখানে গিয়ে সবাই অন্ধকার পরিবেশে খাবার খেতে পছন্দ করে এবং খাবারও খুব মজার। এ কথা শুনে আমার বন্ধুটিও রাজি হয়ে যায়, সে জন্যই আমরা একসাথে অন্ধকারের ভুতুরে ট্রজান রেস্তোরাঁয় এসেছি।
রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করার পর প্রথমে দেখেছি নানা রংয়ের দোয়াল। এর ওপর বর্ম পড়া সৈনিক , ট্রজান ও দূর্গের ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে। দোয়ালের অন্য পাশে আগত নবীন প্রবীণ অতিথিদের রেস্তোরাঁ সম্পর্কে তাদের অনুভূতি ও মজার মজার লেখা মন্তব্য ঝোলানো রয়েছে এবং রেস্তোরাঁর দোয়ালের এক কোণায় ছবি তোলার জন্য বেশ কিছু নিজেকে সাজিয়ে তোলার জিনিস রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের চশমা ও মুখোশসহ নানা প্রকার উপকরণ। আর এসব দৃশ্য দেখে আমাদের কৌতূহল বেড়ে সেদিকেই আকর্ষণ করে থাকে। তখন আন্তরিকতার সাথে রেস্তোরাঁ পরিসেবক আমাদের সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো, 'আপনারা কি অন্ধকার এলাকায় না অল্প আলোর এলাকায় বসবেন?' প্রথমবার আসার জন্য আমরা অল্প আলোর এলাকায় বসার সিদ্ধান্ত নেই। এতবেশি অন্ধকার যে আমাকে পরিসেবকের কাঁধে হাত রেখে এবং আমার বন্ধু আমার কাধে হাত রেখে ট্রেনের মতো এক লাইনে দাঁড়িয়ে আমরা হেঁটে হেঁটে অল্প আলোর এলাকায় প্রবেশ করি। হঠাত্ আসায় দু'চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না, আমাদের সামনে শুধু অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ। পরিসেবকের মাথায় একটা নাইট ভিশন যন্ত্র লাগানো থাকায় আমরা তার মাথার সামনের ছোট লাল স্পট দেখতে পারি। কয়েক মিনেটের মধ্যেই দোয়ালটা যেন আকাশ হয়ে গেল। আর আমরা দেখতে পেলাম অল্প উজ্জ্বল তারারা জল জল করছে। মনে হলো আমরা যেন মহাকাশে প্রবেশ করছি। তখন হালকা সংগীতের সুরে,আমাদের মন আরো শিথিল হয়ে গেছে, মনে হলো আমরা দু'জন নিঃসীম আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছি।
পরিসেবকের পদক্ষেপ অনুসরণ করে আমরা টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াই, তবে কীভাবে চেয়ারে বসবো? এটাওতো সহজ ব্যাপার নয়। তাই তার নির্দেশ অনুযায়ী, আমি প্রথমে একটি বেশ বড় কাঠের বোর্ড স্পর্শ করি, এটি অতিক্রম করার পর বসবার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি।
উল্লেখ্য যে, অতিথিদের নিরাপদে খাওয়ার জন্য রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষ প্রত্যেককে শুধু মাত্র একটি করে চামুচ সরবরাহ করে। তবে কীভাবে খেতে হবে সে সম্পর্কে আপনাদের কোন চিন্তা করাতে হবে না। কারণ, এ রেস্তোরাঁর প্রধান খাবার পাশ্চাত্য স্টাইলের এবং পাচক সকল খাবার রান্না করার পর ছোট ছোট করে কেটে পরিবেশন করেন। ১০ মিনিট পর আমাদের চোখ আস্তে আস্তে কাছাকাছি পরিবেশের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। দেখতে পাই ছোট লাল স্পট আস্তে আস্তে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে এবং সে আমাদের প্রথম খাবার পাউরুটি নিয়ে আসছে। তারপর পরিসেবক আমাদের জন্য ব্যাঙ আকারের একটি ফ্লোরসেন্ট আলোর টেবিল ম্যাট দেয় এবং বলে দেয় যে, এ জিনিসটি হল হালকা আলোর এলাকা এবং সম্পূর্ণ অন্ধকার এলাকার পার্থক্য। পরে আমরা আস্তে আস্তে পেঁপে, চিংড়ি মাছ সালাদ, আলুর সালাদ, মাশরুশ ক্রিম সুপ, কড মাছ ভাজা ও মাংসের স্টেক এবং চকলেট ও চিজ দিয়ে তৈরি কেক খেয়েছি। আলো না থাকলেও আমরা অনুভব করতে পারি এভাবে খাবার গুরুত্বকে। এভাবে আমরা যখন হাত ও চামচ ব্যবহার করে এ অন্ধকারের মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করি। তখন শুনেছি আমাদের পাশে বসা অন্য টেবিলের অতিথিরা অন্ধকারের ভেতর পরস্পরের প্লেটের খাবার চুরি করে খেয়ে হেসে লুটোপুটি খেয়েছে, তা কিন্তু অনেক বেমি মজার, তাই না?
খাবার শেষে আমরা যখন বের হয়ে আসি তখন টিম টিমে আলোর এলাকার প্রস্থানের পথটি পরিসেবকের দরজা খোলার সাথে সাথে অনেক পরিস্কার হয়ে ওঠে। আর আমাদের চোখ উজ্জ্বল আলোয় সংকুচিত হয়ে আসে। দু'এক মিনিটের মধ্যেই আবার সব কিছু আগের মত হয়ে যায়। তখন পরিসেবক আমাদের জন্য দোয়ালের কোণায় রাখা সাজানোর উপকরণ দিয়ে আমাদের সাজিয়ে অনেক ছবি তোলে। আনন্দ আর উত্তেজনাময় অন্ধ্যকার রেস্তোরার ভোজন পর্ব শেষ হয়।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |