|
উত্তর চীনের হোপেই প্রদেশের ছেংদে শহরের মুলান ওয়েইছাং অর্থাত মুলান ঘোড়দৌড়ের মাঠকে 'পেইচিংয়ের আদি বাগান' বলে গণ্য করা হয়। এটা হচ্ছে ছিং রাজবংশের বিখ্যাত রাজকীয় শিকারের স্থান এবং ছবি তোলা অনুরাগীদের স্বর্গ।
মুলান মাঠ ছেংদে শহরের ওয়েইছাং মান জাতি মঙ্গোলীয় জাতি ও স্বায়ত্তশাসিত জেলায় অবস্থিত। পেইচিং থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার। মাঠের মোট আয়তন ২ হাজার ৩শ' বর্গকিলোমিটারেরও বেশি এবং সমুদ্রসমতল থেকে ১ হাজার ৪শ' থেকে ২ হাজার মিটারের মধ্যে।
ওয়েইছাং জেলার পর্যটন ব্যুরোর উপ-পরিচালক ওয়াং দেমিন ব্যাখ্যা করে বলেন, পর্যটন শিল্প হচ্ছে এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ মেরুদণ্ড স্থানীয় শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। ওয়েইছাং জেলা 'প্রাকৃতিক, রাজকীয় ও লোক রীতিনীতি'র বৈশিষ্ট্য হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক অবসর বিনোদন পর্যটন উন্নয়ন করে এবং প্রাথমিকভাবে সাইহানবা জাতীয় বন পার্ক, ইয়ুতাওখৌ তৃণভূমি দর্শনীয় স্থান এবং হোংসোংওয়া প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল-এ ৩টি কেন্দ্রীয় দর্শনীয় স্থানকে কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করে কৃষক পরিবার ভ্রমণকেপরিপূরক হিসেবে পর্যটন কাঠামো গঠিত হয়।
ওয়াং দেমিন বলেন, মুলান মাঠের এরকম দৃশ্য দেখে বর্তমানে শহরবাসীদের একেবারে অন্য ধরনের ও বিস্ময়কর মনে হয়। এ মাঠে ৩ হাজার বর্গকিলোমিটারের বাশাং দর্শনীয় স্থান রয়েছে, উত্তরাঞ্চলে বৃহত্তম কৃত্রিম বন কেন্দ্র ও সবচেয়ে বিখ্যাত প্রাকৃতিক সংরক্ষণ অঞ্চল রয়েছে।
এখানকার বৈশিষ্ট্যময় জলবায়ু ও ভৌগোলিক অবস্থানের সঙ্গে এ মাঠের গ্রীষ্ম, শরত ও শীত্কালের দৃশ্যের আকর্ষণীয় শক্তি রয়েছে। সময় পেলে পর্যটকরা এখানে এসে এখানকার বায়ুতে মুক্তভাবে শ্বাস-নিশ্বাস নেন, এখানকার প্রকৃতি উপভোগ করেন এবং এত বড় অবকাশে নিজেদের মনের ভাব খুলে দেন। তাদের মনে হয় এটাই খুবই দুর্লভ এবং আধুনিক মানুষের জন্য এটাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।
ওয়াং দেমিনের ব্যাখ্যায় 'বাশাং' মানে হোপেই প্রদেশের চাং চিয়া খৌ'র উত্তরে ১শ' কিলোমিটার থেকে ছেংদে শহরের উত্তরে ১শ' কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা। তাকে 'বাশাং অঞ্চল' বলে গণ্য করা হয়। মুলান মাঠ হচ্ছে বাশাং অঞ্চলের আকর্ষণীয় দৃশ্য। এখানকার গ্রীস্মকাল তেমন গরম নয়, ঠাণ্ডাও সহনীয়, জল ও ঘাস সমৃদ্ধ ও সুন্দর। এটি পর্যটন, অবসর বিনোদন, গরমকাল ও ছুটি কাটানোর উপযুক্ত স্থান।
ওয়েইছাং জেলার পর্যটন ব্যুরোর উপ-পরিচালক ওয়াং দেমিন বলেন, ওয়েইছাংয়ের আকর্ষণীয় শক্তি দিন দিন বাড়ছে। রাজপথসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পর্যটকদের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় তা দ্বিগুণ এবং পর্যটন আয় দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষ করে নিজস্ব গাড়িতে করে আসা পর্যটকের সংখ্যা এবং থাকার সময় বেড়েছে। পর্যটন আয় গত বছরের ২২ কোটি থেকে চলতি বছরে ৪৫ কোটি ইউয়ানে উন্নীত হয়েছে। পর্যটন শিল্পের সুষ্ঠু বিকাশের প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়েইছাং জেলা বরাবরই পর্যটন 'কৃষক পরিবার ভ্রমণ' উন্নয়নের চেষ্টা করছে। বর্তমানে সারা জেলায় ১৫টি পর্যটন মহকুমা রয়েছে। এখানকার প্রতিটি পরিবারের মাথাপিছু আয় বেড়ে ১০ হাজার ইউয়ানে এসে দাঁড়িয়েছে।
শুধু চলতি বছরেই ৩শ'রও বেশি পর্যটককে অভ্যর্থনা জানানোর সামর্থ্যবান কৃষক পরিবার বেড়েছে। এখানে কোনো শিল্প নেই বললেই চলে। স্থানীয় অধিবাসীরা শান্তি ও সন্তোষের সাথে জীবনযাপন ও কাজ করে পর্যটন শিল্প সম্প্রসারণ করেছে। সংশ্লিষ্ট থাকা, খাওয়া, দোকান ও সংখ্যালঘু জাতি'র বৈশিষ্ট্যময় পণ্যদ্রব্যের উন্নয়ন, পথনির্দেশক ও গাড়ি ভাড়া, গ্রাস স্কেটিং ও বালু স্লাইডিং, ঘোড়ায় চড়া ও ভাসমান নৌকাসহ বিভিন্ন তৃণভূমির বিনোদন প্রকল্পের সবই অব্যাহতভাবে উন্নয়ন হচ্ছে।
ওয়েইছাং পর্যটন ব্যুরোর উপ-মহাপরিচালক ওয়াং দেমিন বলেন, চলতি বছর ওয়েইছাং জেলা সরকার শতাধিক মাইল আর্ট গ্যালারি প্রকল্প চালু করেছে। বরাবরই অনেক পর্যটন গ্রামে ব্যাপক কৃষক পরিবারকে ফল গাছ ও অলঙ্কারসমৃদ্ধ বৃক্ষ ও ফসল লাগাতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে পর্যটকরা ওয়েইছাংয়ে প্রবেশ করলেই সঙ্গে সঙ্গে সবুজ আবাসভূমির আমেজ অনুভব করতে পারবেন। কৃষক পরিবারের আয় বাড়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও পর্যটন শিল্পের ক্ষেত্রেও অবদান রেখেছে।
সংবাদদাতা মুলান ওয়েইছাংয়ে সাক্ষাত্কার দেয়ার সময় লক্ষ্য করেছেন যে, কিছু দর্শনীয় স্থানের মেটো পথ পিচ সড়ক হিসেবে নির্মিত হচ্ছে। পরিবহন পূর্ণাঙ্গ হওয়ার পর নিজস্ব গাড়িতে চড়া পর্যটকের সংখ্যা বিপুলমাত্রায় বাড়বে। এছাড়া হোংশানচুন ঘোড়া প্রশিক্ষণ মাঠে একটি নতুন ফিলিং স্টেশন বসানো হয়। আগে পর্যটকরা গাড়িতে তেল নেয়ার জন্য ১০ কিলোমিটার দূরে লুয়ানহো উত্সের কাছাকাছি যেতে হতো।
এখন তা অনেক সুবিধাজনক। পর্যটক চাং পেইচিং জলসেচ ব্যুরোতে কাজ করেন। তিনি বলেন, আমি অনেক বার এখানে এসেছি। ছবি তুলতে ভালো লাগার পর আমার মনে হয় মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সম্প্রীতিময় থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংশাং এলাকা হচ্ছে পেইচিং থেকে সবচেয়ে কাছের ছবি তোলার ভালো জায়গা। পেইচিংয়ের দু'টি প্রধান নদী আছে। একটি হচ্ছে ছাওবাই নদী এবং আরেকটি হচ্ছে ইয়ুংতিং নদী। ছেংদের অববাহিকা ছাওবাই নদীর পর পেইচিংয়ের মিইয়ুন জলাধারে আসে। চাংচিয়াখৌ এলাকার পানি ইয়ুংতিং নদীর মধ্য দিয়ে পেইচিংয়ের কুয়ানথিং জলাধারে আসে। পেইচিংয়ের পানির জন্য তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং পরিবেশের স্বার্থে তা সত্যিই ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
ওয়েইছাং জেলার পর্যটন ব্যুরোর উপ-পরিচালক ওয়াং দেমিন বলেন, ওয়েইছাং জেলা প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রাধান্য কাজে লাগিয়ে ব্যাপকভাবে পর্যটন শিল্প উন্নয়ন করে। এই পর্যটন শিল্প উন্নয়নের পূর্ব শর্ত হচ্ছে প্রকৃতি সংরক্ষণ।
এতক্ষণ আমি আপনাদের জন্য 'পেইচিংয়ের আদি বাগান'—হোপেই প্রদেশের মুলান ওয়েইছাং সম্পর্কে ব্যাখ্যা করলাম। আমি বিশ্বাস করি ওয়েইছাং প্রাকৃতিক পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পেইচিংয়ের আদি বা অতি পুরানো বাগান নিশ্চয়ই আরো সুন্দর হয়ে উঠবে। আজকের ভ্রমণ এপর্যন্তই। খোদা হাফেজ।
খোং চিয়া চিয়া
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |