|
পূর্ব চীনের জেচিয়াং প্রদেশের রাজধানী হাংচৌয়ে। সুন্দর পশ্চিম হ্রদের পশ্চিম দিক বরাবর চলে যাওয়া চা বাগানের মধ্যে যেন এক একটি লাল ছাদ ও সাদা দেয়াল চিত্রিক বিশৃঙ্খলার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। এটা হচ্ছে চীনের চা জাদুঘর। জাদুঘরে প্রবেশ করলে খুব আরাম বোধ হয়। কারণ এর কোনো পরিবেষ্টন নেই। ফলে জাদুঘর চায়ের মধ্যে এবং চা জাদুঘরের মধ্যে থাকার মতো বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীন চা জাদুঘরের প্রধান ওয়াং চিয়ানরোং ব্যাখ্যা করে বলেন,
(রি-১)
"আমাদের চীনা চা জাদুঘর ১৯৯১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা হয়। এ পর্যন্ত প্রায় ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। বর্তমান আমরা চায়ের ইতিহাস, চায়ের সংস্কৃতি, চা ও স্বাস্থ্য এবং চীনের বিখ্যাত চা ব্যাখ্যা করি। প্রতি বছর কিছু অস্থায়ী প্রদর্শনী হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক অস্থায়ী প্রদর্শনী হাংচৌয়ের লাল চীনেমাটি সম্পর্কিত। হাংচৌ'র নিকটবর্তী এলাকায় লাল চীনেমাটি তৈরীর উপকরণ আবিষ্কৃত হয়। প্রতি বছর আমাদের দশ-বারটি এরকম অস্থায়ী প্রদর্শনী হয়। বর্তমানে আমাদের জাদুঘরের বার্ষিক দর্শকের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। এর মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ হাজার বিদেশী অতিথি। কারণ চা চীনের রাষ্ট্রীয় সার এবং চীনা সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বস্থানীয় বিষয়গুলোর মধ্য অন্যতম। সুতরাং বিভিন্ন দেশের দর্শক তাকে খুবই পছন্দ করেন।
চা জাদুঘরের সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী হচ্ছে খুব আকর্ষণীয়। এটা হচ্ছে জাদুঘরের সার। জাদুঘরের প্রধান ওয়াং চিয়ানরোং ব্যাখ্যা করে বলেন, পুরো প্রদর্শনীর ছ'টি অংশ আছে। বলা যায় বহু দিক, বহু-পর্যায় ও ত্রিমাত্রিকভাবে চা সংস্কৃতির অসীম আকর্ষণীয় শক্তি দেখানো হয়েছে। তিনি বলেন,
(রি-২)
"আমাদের জাদুঘর ইতিহাসকে আবার দেখিয়ে দিতে চায়। তার মানে আগে আমরা কীভাবে চা খেতাম এবং চা কীভাবে চা আবিষ্কৃত হয়। কারণ চীন হচ্ছে চায়ের উত্স স্থান, চীনে প্রথম চা আবিষ্কৃত হয়। বিশ্বের অনেক জায়গার চা সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে চীন থেকে রপ্তানি হয়। সুতরাং বলা যায় চায়ের ক্ষেত্রে চীন বিশ্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। চীনের বিখ্যাত চা ১ হাজার ২শ'রকমেরও বেশি। আমাদের জাদুঘরে প্রধানত ২শ'রকমেরও বেশি চা প্রদর্শিত হয় এবং ২০ থেকে ৩০ ধরনের চা খাওয়া যায় এখানে।"
প্রদর্শনী হলে বেড়াতে গেলে চীনের বিভিন্ন এলাকার চা রীতিনীতি দেখে দর্শকরা এখান থেকে অন্য কোথাও যেতে চাইবেন না। এক একটি প্রাণবন্ত প্রতিমূর্তির মধ্য দিয়ে চীনের বিভিন্ন জাতির মানুষদের চা খাওয়া ও চা ভালোবাসার দৈনন্দিন জীবনযাপন বর্ণনা করা হয়। যেমন তিব্বতী জাতির মাখন চা অর্থাত সু ইয়ো ছা - দর্শকরা নিজের হাতে তা তৈরী করতে পারেন। এছাড়া অস্তমান সুর্যের আলোয় হুইচৌ ব্যবসায়ীদের চা দোকানের সামনে বাতাসে বয়ে যাওয়া 'চা' অক্ষর লেখা পতাকাটি দেখে মনে হয় ১৯ শতাব্দীর শেষ অথবা ২০ শতাব্দীর প্রথম দিক যুগে ফিরে গেছি।
বেড়াতে বেড়াতে যদি আপনার ক্লান্তি লাগে, তাহলে আপনি বসে বসে চীনা চা জাদুঘরের সংগ্রহ থেকে বিখ্যাত চা খেয়ে দেখুন। জাদুঘরের চা শিল্প দলের প্রধান স্যুই জেমেই আমাদের জন্য তা হোং পাও বাছাই করেন। চায়ের কাপ ও চা ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাদেরকে বলেন, চা তৈরীর একটি মৌলিক নীতি আছে। চা পাতা যত পুরনো হবে, পানির তাপমাত্রা তত উঁচু হতে হবে। তিনি বলেন,
(রি-৪)
"তা হোং পাও উলোং চা সে রকমের। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পাতা তুলনামূলকভাবে স্হূল হয়। এবং সবজু চায়ের তুলনায় স্হূলতা একটু বেশি। আমি সবসময় পানি সিদ্ধ করার পর চা তৈরী করি। আমরা বলি যে, চা খেলে প্রথমে পানির রঙ দেখতে হবে, তারপর তার ঘ্রান নিতে হবে এবং সবশেষে স্বাদ নিতে হবে। আপনি খেয়ে দেখতে পারেন।"
চা খাওয়ার পর একটু এগুলেই ছাছুই ভবনে পৌঁছানো যায়। এখানে সবুজ চা, লাল চা, উলোং চা, সাদা চা, হলুদ চা ও কালো চা-এ ৬ জাতের ৩শ'রও বেশি ধরণের বাস্তব চা প্রদর্শিত হয়। ৬ জাতের চা পৃথক পৃথকভাবে সংশ্লিষ্ট চা গাছের মতো টেবিলে রাখা হয়। পাশে বোতাম রয়েছে। দর্শকরা এয়ারফোন পরে নমুনার পাশের বোতাম চাপ দিলে সংশ্লিষ্ট চা সম্পর্কে তথ্য ও ব্যাখ্যা শুনতে পারেন। এছাড়া উন্মুক্ত এলাকায় বিভিন্ন রকমের ঘনিভূত চা প্রদর্শিত হয়। দর্শকরা আগ্রহী হলে নিজের হাতে তা স্পর্শ এমনকি তার ঘ্রানও নিতে পারেন।
চা জাদুঘরে আরেকটি বৈশিষ্ট্যময় ও উন্মুক্ত চা গাছের জাত ও সম্পদ বাগান - চিয়া মু ইউয়ান রয়েছে। এটা একটি প্রাণবন্ত বিশেষ প্রসঙ্গের চা বাগান। এতে শতাধিক ধরনের চা গাছ প্রদর্শিত হয়। অনেক ধরনের চা গাছের মধ্যে পার্থক্য খুবই স্পষ্ট। সচরাচর দেখতে পাওয়া ঝোপ ধরনের চা গাছ ছাড়াও বড় আকারের চা গাছ দেখা যায় এখানে। যেমন উ নিউ জাও, হুয়াং ইয়ে জাও, রৌকুই, মাওসিয়ে, ইয়ুননান বড় পাতার চা গাছ ইত্যাদি। চিয়া মু ইউয়ানে বসানো পেই সিয়াং ই-এ চা পাতা তোলার ঋতুতে দর্শকদেরকে চা শুকানো ও চা পাতা উত্পাদনের গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া দেখানো হয়। ফলে পর্যকদের চা তৈরী ও উত্পাদনের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ধারণা স্পষ্ট হয়। এটা প্রদর্শনী হলে প্রদর্শিত জিনিসপত্রের প্রাণবন্ত পরিমার্জন।
প্রদর্শনী ছাড়া চা জাদুঘরে বিশেষ চা শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। পর্যটকরা নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী আধাদিন বা আরো বেশি সময় বাছাই করে সে বিশেষ চা শিল্প প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন। এ প্রকল্পটি অনেক পর্যটকের প্রশংসা কুড়িয়েছে। জাদুঘরের প্রধান ওয়াং চিয়ানরোং বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানুষদের জীবনযাপনের মান উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানে প্রশিক্ষণ নেয়া ব্যক্তির কাঠামো পরিবর্তিত হচ্ছে। তিনি বলেন,
(রি-৫)
"গত কয়েক বছর এই কাজে লিপ্ত মানুষেরা, যেমন চা ঘর বা চা দোকানের মানুষের, প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য এখানে এসেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শুধু কর্মচারী নয়, বরং অনেক অনুরাগী, যেমন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী, এখানে প্রশিক্ষণ নিতে এসেছেন। তারা সাধারণ জীবনযাপনে চায়ের কিছু তাত্পর্য বাড়াতে চান। অধিকাংশই অনুরাগী। এটা একটি বিরাট পরিবর্তন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |