|
সোনালী ফসলের শরত্কালে হাজার মাইল অতিক্রম করে আমাদের সংবাদদাতারা অন্তর্মঙ্গোলীয় তৃণভূমির সবচেয়ে পশ্চিমাঞ্চল -- আলাশান শহরে যান। এটি বাতানচিলিন, থেংগেলি ও উলানবু - এ তিনটি মরুভূমির মধ্যে একমাত্র জায়গা যেখানে প্রাচীন ও রহস্যময় ডাইভারসফলিওন পপলার গাছ অর্থাত্ হুইয়াং গাছ জন্মে। জায়গাটি 'মরুভূমির নৌকা' বলে খ্যাত উটেরও জন্মস্থান। আপনি যদি নিজের চোখে আলাশানের মনোরম দৃশ্য না দেখে থাকেন, তাহলে প্রকৃতির সৃষ্টি এবং আমাদেরকে এনে দেয়া বিস্ময়কে কল্পনাও করতে পারবেন না। জায়গাটি দেখলে মনে হয়, বিশাল মরুভূমিতে যেন এক একটি চূড়া দাঁড়িয়ে আছে। আগুনের মতো সুর্যের আলোয় এক একটি হ্রদ দেখতে এমন শান্ত ও সুন্দর যে, পর্যটকরা একবার এখানে এলে আর এখান থেকে যেতে চাইবেন না। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদের সঙ্গে আলাশানে গিয়ে সেখানকার পরিবর্তিত আকর্ষণীয় শক্তি উপলব্ধি করবো।
(রি-১)
আপনারা এখন যে গানটি শুনছেন, তার শিরোনাম 'আকাশের মতো আলাশান'। মনোগ্রাহী এ সংগীতে আমরা যেন আলাশান পশুপালকদের জীবনযাপনের ছবিই দেখতে পাব। মরুভূমি, মরুদ্বীপ, উদাত্ত ঝরণা, উট দল, রাজহংস ও ডাইভারসফলিওন পপলার গাছ নিয়ে আলাশানের মনোরম ছবি তৈরি হয়েছে। শরত্কাল ডাইভারসফলিওন পপলার গাছের সবচেয়ে সুন্দর সময়। এ গাছের কাঠিন্য অসাধারণ রকমের এবং একেকটি গাছ হাজার বছর বেঁচে থাকে। মারা যাওয়ার পরও গাছগুলো হাজার বছর দাঁড়িয়ে থাকে। কোন গাছ পড়ে গেলেও, হাজার বছর তা পচে না। চীনের প্রধানমন্ত্রী ওয়েন চিয়াপাও ডাইভারসফলিওন পপলার গাছ দিয়ে চীনা জাতির দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ও কঠিন মনোবলের উপমা দেন। পাশাপাশি আমাদের প্রথম স্টেশন হচ্ছে হাজার বছরের ডাইভারসফলিওন পপলার গাছের জন্মস্থান এ চি না। ২০ হাজারেরও কম জনসংখ্যার এ ছোট জেলায় ডাইভারসফলিওন পপলার গাছ উত্সব চলার সময়টিই সেখানকার সবচেয়ে আড়ম্বরপূর্ণ সময়। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের লক্ষাধিক আলোকিত্রগ্রাহক ডাইভারসফলিওন পপলার গাছের সুন্দর দৃশ্য তুলতে ছবি ও ভিডিও সাজ-সরঞ্জাম নিয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এখানে ছুটে আসেন এ উত্সব চলাকালে।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মরুভূমির আশেপাশে থাকা এ জি না ডাইভারসফলিওন পপলার বনও বিলুপ্তির হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সৃষ্ট সবচেয়ে সাধারণ দেখা প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনাবৃষ্টি ও বালুঝড়। ডাইভারসফলিওন পপলার বন এবং স্থানীয় জলবায়ুর ওপর বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে এ চি না জেলার তা লাই উপজেলার প্রধান বাও বাওলি বলেন,
(রি-২)
"৮০'র দশকের শেষ দিক থেকে ৯০ দশকের শেষ দিক পর্যন্ত এ চি না'র নদীর প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে নদীর তীরবর্তী ডাইভারসফলিওন পপলার বনের অনেক গাছ শুকিয়ে গেছে। ২০০০ সাল থেকে কৃত্রিমভাবে পানি নিষ্কাশন শুরু করা হয়েছে। সে সময় থেকে কৃত্রিম সংরক্ষণ ও পানি সম্পদের পরিপূরণের মধ্য দিয়ে আমাদের ডাইভারসফলিওন পপলার বনের আয়তন পুনরুদ্ধার হয়েছে এবং এরপর আগের চেয়ে বেড়েছে। আমাদের অসমাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ডাইভারসফলিওন পপলার বনের আয়তন ১২৫ একরেরও বেশি।"
ডাইভারসফলিওন পপলার বনের অনাবৃষ্টি সমস্যা সমাধানের পর ২০০০ সালে এচিনা আনুষ্ঠানিকভাবে ডাইভারসফলিওন পপলার পর্যটন ও সাংস্কৃতিক উত্সবের আয়োজন শুরু করে। এরপর থেকে ডাইভারসফলিওন পপলার বনের ওপর মনোযোগ দেয়া বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ডাইভারসফলিওন পপলার সাংস্কৃতিক উত্সব সম্পর্কে তা লাই উপজেলার প্রধান বাও বাওলি বলেন,
(রি-৩)
"আমাদের পর্যটন ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর পর্যন্ত চলতি বছরের ডাইভারসফলিওন পপলার উত্সবে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার। চলতি বছরের পর্যটন আয় হয়েছে ১৩ কোটি ইউয়ান।"
ডাইভারসফলিওন পপলার বন ছাড়া মরুভূমির দৃশ্যও আলাশানের উজ্জ্বলগুলোর অন্যতম। মরুভূমির আশেপাশে জীবনযাপনকারী জনসাধারণদের জন্য মরুভূমির নিয়ন্ত্রণ ও প্রশাসনের সুন্দর দৃশ্য উপভোগের চেয়ে বাস্তব তাত্পর্য আরো বেশি। আলাশান শহরের রাজধানী বা ইয়ান হাও টের প্রাকৃতিক পরিবেশ যদিও আনন্দদায়ক, তবুও মরুকরণ প্রশাসনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিমান থেকে বীজবপন প্রযুক্তিসহ ব্যাপক জনশক্তি ও সরঞ্জামের মাধ্যমে বা ইয়ান হাও টে'র নিকটবর্তী অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ করে।
এছাড়া বা ইয়ান হাও টে'র পরিবহন অবকাঠামো নির্মাণ ও পর্যটন সম্পদের উদ্দীপনাময় উন্নয়ন হচ্ছে। পরিবহন অবস্থার উন্নয়ন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকদের বা ইয়ান হাও টেতে আগমনের ক্ষেত্রে সুবিধা সৃষ্টি করেছে। বা ইয়ান হাও টে জেলার প্রধান মো আর গেন বলেন,
(রি-৬)
"আলাশানের ২ লাখ ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমিতে বৈশিষ্ট্যময় পর্যটন সম্পদ রয়েছে। বিশেষ করে বা ইয়ান হাও টে'র আশেপাশে চাঁদ হ্রদ ও কুয়াংজোং মন্দির ৪-এ পর্যায়ের দর্শনীয় স্থান এবং ফুইন মন্দির ৩-এ পর্যায়ের দর্শনীয় স্থান। ফলে বা ইয়ান হাও টে কেন্দ্র হিসেবে ভালো পর্যটন বাজার গড়ে তোলা হয়েছে।"
প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নত হওয়ার কারণে পর্যটকের সংখ্যা অব্যাহতভাবে বাড়ছে। হো লান শান পাহাড়ের পাদদেশে মঙ্গোলীয় জাতির বৈশিষ্টকে প্রসঙ্গ হিসেবে চালু করা পশুপালক ভ্রমণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের অবসর বিনোদন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে পরিণত হচ্ছে। পাশাপাশি এসব পর্যটন প্রকল্প স্থানীয় পশুপালকদের জীবনযাপনের মান উন্নত করার মতো আয় অর্জনে সহায়তা করছে। প্রাকৃতিক পর্যটন থেকে প্রতি পশুপালক পরিবারের বার্ষিক আয় গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার ইউয়ান। সেখানকার পশুপালকরা নিজেদের ভূমিতে অক্ষতিকর শাকসব্জী ও ফলের পাশাপাশি মিঠা পানি উত্পাদনের ব্যবস্থা করেন। পর্যটকরা সেখান থেকে খাঁটি প্রাকৃতিক খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।
ইউর্ট থেকে বের হলে নীল আকাশের নিচে সোনালী ভুট্টাক্ষেত, ছোট লাল ও হলুদ টোমেটো এবং অতিবিরল আপেল গাছ দেখা যায়। হো লান শান পাহাড়ের ঝরণার পানিতে ধোয়ার পর তা সেসব টোমেটো বা আপেল ঠাণ্ডা হয় এবং খেতে সুস্বাদু হয়।
জেলার প্রধান মো আর গেন উত্সাহব্যঞ্জকভাবে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন,
(রি-৮)
"আমি বিশ্বাস করি যে, আমি যেটা ব্যাখ্যা করেছি তা শুধুই আলাশান অথবা বা ইয়ান হাও টে'র অংশ। তাই আমি আশা করি, দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এখানে দৃশ্য দর্শনে ও বেড়াতে আসবেন। আপনাদের অনুভূতি আমার ব্যাখ্যার চেয়ে অনেক গভীর হবে।"
(রি-৯)
শ্রুতিমধুর গানে গানে আমাদের অনুষ্ঠান একেবারে শেষ প্রান্তে এসে গেছে। আশা করি, আলাশানের স্বর্গতুল্য দৃশ্য চিরস্থায়ী হবে। আরো বেশি মানুষ আকাশের মতো আলাশানের সৌন্দর্য উপভোগ করবেন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |