Web bengali.cri.cn   
হুলুদাও থেকে শানহাইকুয়ান হয়ে ছিনহুয়াংদাও – ১০
  2010-10-27 20:06:19  cri

ছিনহুয়াংদাও'র উপকন্ঠে সকালে যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করছে বয়স্ক নাগরিকরা

এবার আমাদের যাত্রা বেইদাইহো হয়ে ছিনহুয়াংদাওর সোনালী বালুর সৈকতে। ছিনহুয়াংদাও থেকেও প্রায় ঘন্টা দেড়েকের পথ। শহরটি পেইচিং এবং থিয়েনচিনের পাশেই হোবেই প্রদেশের উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত। এ শহরটির আয়তন হচ্ছে ২২ হাজার ১শ' ১২ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে মূল শহর এলাকা হচ্ছে ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারেরও বেশি। শহরটি আবার তিনটি ছোট ছোট জেলা শহর নিয়ে গঠিত। এর একটি হলো শানহাইকুয়ান, যেটি আমি ঘুরে এসেছি কিছুক্ষণ আগেই। এই শানহাইকুয়ান শহরটি তৈরি হয়েছিল মিং ডাইন্স্টির সময়। তখন রাজত্ব করছিলেন হুং উও'র (Hong Wu)। তার শাসনামলের ১৪ বছরের মাথায় অর্থাত্‌ ১৩৮১ সালে এটি নির্মিত হয়। আরেকটি হলো বেইদাইহো। এ অঞ্চলটি গ্রীষ্মকালিন সমুদ্র স্নানের জন্য বিখ্যাত এবং এখানকার সমুদ্র তীরের অবকাশকালিন কেন্দ্রে চীনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রায়শই নেয়া হয়ে থাকে। তৃতীয় জেলাটি হলো হাইকাং। এ জেলাটিকে বলা হয় বন্দর শহর। এখানেই রয়েছে হোবেই প্রদেশের অন্যতম ইয়ান শান বিশ্ববিদ্যালয়। আরো রয়েছে নানদাইহোতে আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক বাগান।

 

বেইদাইহোর একটি সড়কের সামনে লেখক

ছিনহুয়াংদাও'র আবহাওয়া বেশ চমত্কার। বলা যায় কিছুটা ইয়ুন্নান প্রদেশের সাথে মিল রয়েছে। বসন্তকালে এখানকার আবহাওয়া একটু শুষ্ক থাকে। এসময় হালকা বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, তবে তা ততটা বেশি নয়। শরত্কালে ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকে। এবং শীতকালে এখানে ঠান্ডার প্রভাব বেড়ে যায় তবে তা উত্তরাঞ্চলের মত অতটা নয়। এখানকার গড়পরতা আবহাওয়া হলো ১১.২ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকে জুলাই মাসে ২৪.৯ ডিগ্রি আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে জানুয়ারী মাসে মাইনাস ৪.৩ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড। এ তাপমাত্রা সবার কাছেই বেশ আরামদায়ক। এখানে দেখলাম টেক্সি ভাড়াও বেশ সস্তা। গাড়িতে উঠলে শুরুতে মাত্র ৫ ইউয়ান। সারা শহরে তেমন একটা যানজটের ভীড় দেখলাম না। জানতে পারলাম এখানে হোটেল ভাড়াও অনেকটা কম।

 

৯৫ বছরের বেশি বয়সের একজন বৃদ্ধা

এছাড়া এ শহরেই রয়েছে দৃষ্টি নন্দন অলিম্পিক স্টেডিয়াম। রয়েছে অনেক পর্যটন স্থানের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক 'মেং চিয়াংনু মন্দির। এ মন্দিরটি নিয়ে একটি লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। ছিং ডাইনাস্টির সময়ে প্রথম সম্রাট ছিন শি হুয়াং (Qin shi Huang) এখানে আন্ডার পাস গ্রেট ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করেন। আর এ নির্মাণ কাজে বাধ্যতামূলকভাবে কাজ করতে হয়েছিল মেং চিয়াংনুর স্বামীকে। যিনি ছিলে একজন সুঠাম দেহের তরুণ সৈনিক। তার কখনই বাড়ি ফেরার অনুমতি ছিল না। তাই মেং চিয়াং নু বহুদিন পর তাকে দেখার জন্য মাইলের পর মাইল নির্জন পথে একাকী হেঁটে হেঁটে একদিন গ্রেট ওয়ালের কাছে পৌঁছুলেন। সেখানে পৌঁছে তিনি জানতে পারলেন যে, তার স্বামী এ দেয়াল নির্মাণ করতে গিয়ে কঠোর পরিশ্রমের কারণে মারা গেছেন। এবং দেয়ালের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়েছে। এ সময় তার বুক ফাটা কান্নায় আর চোখের পানিতে নির্মিত দেয়ালের বেশিরভাগ অংশই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে পরে গেছে। এরপর একদিন মেং চিয়াংনু গভীর শোককে সংগী করে সাগরে ঝাপ দিয়ে আত্মাহুতি দেন নিজেকে। যখন তিনি আত্মাহুতি দেন তখনই সেখানে গড়ে ওঠে একটি বিশাল মন্দির। আর সে সময়ই তিনি সাগর থেকে উঠে এসেছিলেন নিরবে। তখন তার চোখে মুখে ফুটেছিল প্রিয়জনকে হারানোর বুক ভরা মর্ম যন্ত্রণা আর দারুণ ঘৃণা মিশ্রিত ক্ষোভ। এ মন্দিরের সামনেই গড়ে ওঠেছে মাটির তৈরি তার একটি ভাষ্কর্য। কালো গাউন পরা এ ভাষ্কর্যটি দেখে মনে হয় তিনি যেন তার স্বামীর প্রতিক্ষায় এখনো তাকিয়ে আছেন সুদুরের পানে। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে চীনের একমাত্র বন্য প্রাণীর চিড়িয়াখানা। আমার সেখানে যাবার খুব ইচ্ছে ছিল। কারণ, খোলামেলা প্রান্তরে বন্য প্রাণীর বিচরণ দেখা সত্যিই এক আনন্দপূর্ণ মজার বিষয়। আমার সহযাত্রীদের বললাম, আবার এখানে আসবো এখানকার চিড়িয়াখানা ও শানহাইকুয়ানের আন্ডার পাস গ্রেট ওয়ালের বিশেষ জাদুঘর দেখার জন্য। ওরাও আমার সাথে সায় দিল তখন আমার সাথে থাকার জন্য। ঘুরে ঘুরে দেখার সময় আমার কাছে মনে হলো এত সুন্দর পরিবেশ, তাই এখানে সব সময়ই পর্যটকের ভীড় লেগে থাকার কথাইতো। (চলবে)–আ বা ম. ছালাউদ্দিন

 

বেইদাইহো রেলস্টেশন

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040