|
প্রাচীনকালে এমনিভাবেই মালামাল নিয়ে সবাই বাড়ি যেতেন। তারই পাশে দাঁড়িয়ে শানহাইকুয়ানের একটি পরিবার
শানহাইকুয়ানের আন্ডার পাসের এ গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে চতুর্ভূজ আকৃতিতে ৩৯ ফুট উচ্চতায়। আর এ গেটের ওপর যে প্ল্যাট ফর্ম তৈরী করা হয়েছে তার ওপর রয়েছে প্রায় পঞ্চাশ ফূট উচ্চতা বিশিস্ট পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এ টাওয়ারটিতে রয়েছে ছোট ছোট ৬৮টি জানালা। এসব জানালায় চোখ রাখা হতো তখনকার দিনে উত্তর, পূর্ব আর দক্ষিণ দিক দিয়ে আগমনকারীদের প্রতি। এতে প্রবেশ করে দেখলাম এর ভেতর খুব সুন্দর হস্তাক্ষরে খোদাই করে লেখা রয়েছে শানহাইকুয়ান পাস নামটি চীনা ভাষায় 'থিয়ান শিয়া তি ই কুয়ান'। আসলে এটি লিখেছিলেন মিং ডাইনাস্টির সময় সর্বোচ্চ রাজকীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিয়াও শিয়েন। যিনি ক্যালিগ্রাফিস্ট হিসেবে সে সময় বিখ্যাত ছিলেন। সে লেখাটিই এখানে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ১০২০ সালে আর মূল লেখাটি সংরক্ষণ করা হয়েছে। টাওয়ারে পাশেই রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি চীনা ঢোলক। যাকে বলা হয় ঢাক। সেটা এতবড় যে, উচ্চতায় প্রায় দু'জন লোকের সমান। চওড়ায়ও তাই। দেখলাম বেশিরভাগ লোকজনই লাল কাপড় জড়ানো কাঠের হাতুরি দিয়ে সেটা বাজাচ্ছে। কয়েকজনকে দেখলাম তাদের শিশুদের উঁচু করে ধরে তা বাজাতে সাহায্য করছে। একজনকে জিজ্ঞেস করায় সে আমাকে জানালো অতীতের কথা স্মরণ করে এ ঢাক বাজালে নাকি পূণ্য হয়। আমার কাছে মনে হলো এ ঢাক বাজানোর মধ্য দিয়ে একটি জাতি তার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে হৃদয়ে লালন করে আগামী দিনের পথ চলার অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।
কুয়াশায় ঢাকা ছিনহুয়াংদাওর একটি বহুতল ভবন
লিং গ্রেট ওয়ালে গিয়ে দেখেছি। সে দিনটি ছিল ছুটির দিন। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না কী পরিমাণ ভীড় হতে পারে। চীনাদের এত ভীড় যে তার ভেতর বিদেশিদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রতিটি মানুষ একে অপরের গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। সেই ভীড়ের মাঝে ঢাকার দৈনিক যুগান্তরের সিনিয়ার রিপোর্টার হেলাল উদ্দীন ও সমকালের বিশেষ সংবাদদাতা আবদুল্লাহ আল ফারুকের সাথে একবার আমার যেতে হয়েছিল । তারুণ্যে ভরা দু'জনের ইচ্ছে ছিল নিচ থেকে হেঁটে উপরে ওঠার। কিন্তু ভীড়ের জন্য কেবল কারে গ্রেট ওয়ালের মাঝা মাঝি ওঠার পর তারা বলতে গেলে আর খুব ভীড় ঢেলে বেশি একটা উপরে উঠতে পারে নি।
প্রাচীন সৈনিকের ভূমিকায় জীবন্ত ভাষ্কর্য
শানহাইকুয়ান পাসে আমরা তিনজন হেঁটে হেঁটে দেখছি আর ভাবছি প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রকেও কতটা শিল্পসম্মত করে গড়ে তোলা হয়েছিল বিস্ময়কর এ দেয়ালটিকে। আমরা যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন আকাশ অনেকটা পরিস্কার ছিল। সেই সাথে হালকা বাতাসও ছিল। টাওয়ারের দোতলায় ওঠে আমি উত্তরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম সুদূরে মিশে যাওয়া জিয়াওশান গ্রেট ওয়ালের দৃশ্য। এপাশে দক্ষিণ দিকের জানালা দিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম সবুজ নি:সর্গ পেরিয়ে দূরের বোহাই সাগরের ফেনিল জলরাশি দেখে। আবার নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম চার পাশের দেয়ালের মাঝখানে বিশাল সব সবুজ বৃক্ষের সারি। মনে হয় যেন একটা সবুজ চাদর বিছানো। আরেক পাশের গেটের সামনের চত্বরে দেখলাম চারপাশ ঘিরে নানান ধরনের সুভ্যেনিরের অস্থায়ী দোকান। এরই মাঝখানে সন্ধ্যার পর বসে চীনের ঐতিহ্যবাহী সংগীত ও নৃত্যের আসর। হঠাত্ করে আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো একটি সেকালের পোষাকে সজ্জিত টগবগে তরুণ সৈনিকের ভাষ্কর্যের দিকে। দেখলাম অনেকেই তার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে আর তার সামনের পাত্রে কিছু দক্ষিণা দিচ্ছে। দাঁড়িয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম আমিও একটা ছবি তুলি তার পাশে দাঁড়িয়ে। এসময় তার পাশে হুইল চেয়ারে আসা একজন মাঝ বয়সী তরুণী তারই সাথে ছবি তোলার সময় ভাষ্কর্যটি তার হাত অকষ্মাত্ তরুণীটির কাধের ওপর রাখলো । আমি অবাক হয়ে গেলাম। অবাক হলাম এ জন্য যে একজন মানুষ কী করে ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আর তা সামান্য কিছু অর্থের জন্য! মেক আপ আর তার স্থির ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকা এতটাই নিখুঁত যে কারো পক্ষেই সে নিজে না নড়লে বোঝার সাধ্য নেই। বেরিয়ে আসার পথে মন কাড়া দৃশ্যের এ সব কিছুই আসলে পর্যটকদের টেনে নিয়ে যায় সেখানে। (চলবে) –আ বা ম. ছালাউদ্দিন
ছিনহুয়াংদাও শহরের উপকণ্ঠ
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |