|
সান সিং গ্রাম দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়ান প্রদেশে অবস্থিত। গাড়িতে করে রাজধানী ছেংতু থেকে প্রায় ১ ঘন্টা সময় লাগে। ১৯৭৯ সালের আশ্চর্য আবিষ্কারের কারণে ১০/১২ বছর আগে, এর আগের স্থানে সান সিং তুই নামে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সানসিংতুই জাদুঘরের পথনির্দেশক ছিউ স্যুয়ে ছিং ব্যাখ্যা করে বলেন, উত্তর অক্ষাংশের ৩০ ডিগ্রীতে এই সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষের আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে। তিনি বলেন,
(রি-১)
এই অক্ষাংশে আরো রয়েছে ছুমোলাংমা পর্বত, মায়া সংস্কৃতি এবং বারমুদা ত্রিভুজ। তাদের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রহস্যময়। যার কোন কুল কিনারা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। সানসিংতুই হচ্ছে চীনের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের এ পর্যন্ত পাওয়া পুরাকীর্তি নিদর্শনের অঞ্চল। এ অঞ্চলের পুরাকীর্তি অনেক বেশি। এ সব পুরাকীর্তি অনেক অনেক প্রাচীনকালের। এ সব সাংস্কৃতিক বিষয়বস্তু নিয়ে সবচেয়ে সমৃদ্ধ একটি প্রাচীন নগর ও অতি প্রাচীন রাজ্য।
পুরাকীর্তি নিদর্শন আবিষ্কারের ফলে, প্রায় ৩ হাজার বছর আগে তখনকার স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি প্রাচীন নগর হঠাত দৃষ্টিতে উঠে এলো। এই উন্নত সান সিং তুই সংস্কৃতি অতীতে হঠাত একদিন ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তবে ২ হাজারেরও বেশী বছর পর এই সমুজ্জল নগরটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সত্যিকার কারণের প্রতি বহু ধরনের অনুমান কাজ করছে। কেউ কেউ বলে বন্যার জন্য, কেউ কেউ বলে যুদ্ধের জন্য আবার কেউ কেউ বলে মহামারির কারণে ধ্বংস হয়েছিল। তবে ইতিহাসের পাতায় লেখা না থাকার কারণে এ পর্যন্ত এটা একটি ধাঁধাই রয়ে গেছে।
সানসিংতুই'র খননকার্য থেকে প্রাপ্ত পুরাকীর্তি এ ধাঁধাকে আরো বেশী বাড়িয়ে দিয়েছে। জাদুঘরের পথনির্দেশক ছিউ স্যুয়ে ছিং বলেন, সানসিংতুই'র খননকার্যের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে ব্রোন্জের জিনিসপত্র। ব্রোনজ দিয়ে কিছু মানুষের মূর্তি আধুনিক মানুষের কল্পনারও বেশি। বড় বড় চোখ, খাঁড়া নাক, এশিয়ান মানুষের চেয়ে অনেক পার্থক্য আছে তার সঙ্গে। তিনি বিশেষ করে জাদুঘরের সবচেয়ে নিদর্শণ পুরাকীর্তি ব্রোনজের মুখোশের ওপর ব্যাখ্যা করেছেন। জানা গেছে, এটা শু রাজ্যের প্রথম রাজার চেহারার আমল রূপ। তিনি বলেন,
(রি-২)
এটা বিশ্বের বৃহত্তম একটি ব্রোন্জের মুখোশ। পাশাপাশি এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় মূল্যবান সম্পদ। মুখোশটি বিশেষ করে মুখমগুল বিশিষ্ট। চোখ হচ্ছে গোল এবং ফোলা। কানও বড় এবং খাঁড়া। পর্যটকরা তাকে 'ছিয়ান লি ইয়ান, শুন ফেং আর' ডাকে। এর মানে হাজার মাইল থেকে দেখা যায় এবং অনেক দূর থেকে শোনা যায়।
জাদুঘরের প্রদর্শিত আরেকটি জিনিস হচ্ছে থোং থিয়ান সু অর্থাত আকাশে স্পর্শী গাছ। ফরাসী পর্যটক হামবার্ট ড্রোজকে দারুনভাবে আকর্ষণ করেছে। তিনি বলেন,
(রি-৩)
কয়েক বছর আগে এ সব পুরাকীর্তি ফ্রান্সে প্রদর্শিত হয়েছিল। যদিও আমি জানি, চীনের সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। তবে যখন আমি আবার এ সব দেখি তখন আমার বিস্ময় আরো বেড়ে যায়।
থোং থিয়ান গাছকে বিশ্বের বিস্ময় বলে গণ্য করা হয়। এ গাছটি ৩.৬ মিটার উঁচু হয়। প্রাচীনকালে চীনা মানুষের মনে এ গাছ ছিল সারা পৃথিবীর প্রতীক। সুর্য চাঁদ এবং তারা হচ্ছে গাছের ফল। পথনির্দেশক ছিউ স্যুয়ে ছিং বলেন,
(রি-৪)
এত উচ্চ গাছটি তৈরী করা খুব কঠিন। কারণ এই রকমের আকার বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। এতো বড় ব্রোন্জের জিনিস একবারে তৈরী করা সম্ভব নয়। বার বার তৈরী করা দরকার। আমাদের এখানে খনন করে পাওয়া ৮টি ব্রোন্জের গাছের মধ্যে পুরোপুরিভাবে মেরামত করা হয়েছে শুধুমাত্র দুটি। দুটি গাছ মেরামত করতে আমাদের ৩ বছর লেগেছে।
আসলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ছাড়া এ সব ব্রোন্জের গাছ প্রাচীনকালে পৃথিবী সম্পর্কে চীনা মানুষের ধারণার প্রতিফলন ঘটিয়েছে। জাদুঘরের উপদেষ্টা আও থিয়ান চাও বলেন,
(রি-৫)
সানসিংতুই খননের ফলে প্রাপ্ত এ সব ব্রোনজের মানুষের মূর্তি ও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার জিনিস থেকে দেখা গেছে, সানসিংতুই প্রাচীন রাজ্য সবচেয়ে আগে আদিকালের ধর্মের মধ্য দিয়ে, প্রাকৃতিক, টোটেম ও পিতৃপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে মতাদর্শ, সচেতনতা ও নিজেদের কেন্দ্রীভূত ও নিয়ন্ত্রণ করা। সম্ভবত প্রাচীন শু রাজ্য সব সময় কিছু কিছু বিরাটাকারের যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে কাছের ও দূরের বিভিন্ন পূজারির উপজাতীয় আচার আচরণকে তুলে ধরেছে।
বলা যায়, ব্রোনজের জিনিস হচ্ছে সানসিংতুই খনন করে পাওয়া জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক। তা পুরোপুরিভাবে সে যুগের উত্কৃষ্ট শিল্পের মান প্রদর্শন করছে। তবে সানসিংতুই ধ্বংসাবশেষ থেকে বিরাট সংখ্যক হাতির দাঁত ও ঝিনুকের খোল খনন করে পাওয়া গেছে। এটা আরেকটি ধাঁধা। বর্তমান সিছুয়ানের ভৌগোলিক অবস্থা থেকে হাতি এখানে ছিল তা মনে হয় না। কারণ সিছুয়ান সমুদ্র থেকে অনেক দূরে। জাদুঘরের পথনির্দেশক ছিউ স্যুয়ে ছিং-এর কথা থেকে সম্ভবতঃ পর্যটকরা কিছু অজ্ঞাত জিনিসের পরিচয় পাবে। তিনি বলেন,
(রি-৬)
কয়েকজন বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন, হাতির দাঁত 'দক্ষিণ সিল্ক রোড'-এর মাধ্যমে এসেছিল। হাতির দাঁত ছাড়া এ সড়কের মাধ্যমে নিয়ে আসা আরেক ধরনের দ্রব্য হচ্ছে ঝিনুকের খোল। প্রায় ৫ হাজার ঝিনুকের খোল খনন করে পাওয়া গেছে। আন্তদেশীয় শহর ছেংতু'তে ঝিনুকের খোল থাকা ছিল প্রায় অসম্ভব। এটা প্রতিফলিত হয়েছে যে, প্রাচীন শু রাজ্যের বাণিজ্যিক সড়কটি খুব লম্বা ছিল। তা পশ্চিম এবং দক্ষিণ এশীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তখনকার ব্যবসার উন্নয়নের কথা এ সব জিনিস প্রাপ্তি থেকে বোঝা যায়।
চালু হওয়ার দশ-বারো বছরের মধ্যেই জাদুঘর অসংখ্য মানুষকে আকর্ষণ করেছে। সানসিংতুই পুরাকীর্তি নিদর্শন আফ্রিকা ছাড়া অন্য ৪টি মহাদেশেও প্রদর্শিত হয়েছে। সানসিংতুই জাদুঘরের উপ-প্রধান চাং চি চৌং ব্যাখ্যা করে বলেন,
(রি-৭)
সানসিংতুইর প্রাচীন এবং রহস্যময় সংস্কৃতি পর্যটকদের আগ্রহের বস্তু। এখানকার অতিসূক্ষ্ম পুরাকীর্তি নিদর্শন সারা বিশ্বের একমাত্র সম্পদ। প্রাচ্য ও সিছুয়ানের স্থানীয় প্রাচীন শু সাংস্কৃতিক সভ্যতা দেশী-বিদেশী পর্যটকদের হৃদয়ে তীব্র আকর্ষণের সৃষ্টি করেছে।
ফিনল্যাণ্ডের সিরকা কোরেলা বহু বিদেশী পর্যটকদের মধ্যে একজন। সানসিংতুই দেখে তিনি অত্যন্ত বিস্মিত রোধ করেন। তিনি বলেন,
(রি-৮)
জাদুঘরের সাজসজ্জা তূলনাহীন। অবশ্যই সে সব প্রদর্শনীর জিনিস, বিশেষ করে রহস্যময় মুখোশগুলো তাকে আকর্ষণ করেছে। ব্রোনজের গাছ ও পবিত্র পাখিও খুবই মজার।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |