|
২০০৮ পেইচিং অলিম্পিক গেমসের নৌচালনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ছিংতাও অলিম্পিক সমুদ্রযাত্রা কেন্দ্র দেশে বিদেশে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এরপর ছিংতাও অলিম্পিক নৌচালনা কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়। উন্মুক্ত হওয়ার পর অলিম্পিক নৌচালনা কেন্দ্র ক্রমে ক্রমে ছিংতাওয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে। ছিংতাওয়ের এই নৌচালনা কেন্দ্রে এসে একবার 'অলিম্পিক সমাবেশ-স্থান ভ্রমণ করা' ছিংতাও বা অন্য কোন শহরের অধিবাসী এমনকি বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি মনোমুগ্ধকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছিংতাও অলিম্পিক নৌচালনা কেন্দ্র পরিদর্শন করার পর পর্যটকরা জাহাজে প্রমোদভ্রমণের মধ্য দিয়ে সমুদ্র ভ্রমণের আনন্দ, দ্বীপে রোমাঞ্চকর ও শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের অনুভূতি এবং সমুদ্রে বঁড়শি দিয়ে মাছ ধরাসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যময় সামুদ্রিক পর্যটনের আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন।
ছিংতাও আন্তর্জাতিক প্রমোদতরী-বাইচ ক্লাবের 'এক দিন দ্বীপ ভ্রমণ' পর্যটন প্রকল্প খুব দ্রুততার সঙ্গে প্রস্তুত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে পর্যটকরা তা কোং দ্বীপ ও জু ছা দ্বীপে গিয়ে রহস্যময় দ্বীপ ভ্রমণের আনন্দও উপভোগ করতে পারবেন। ক্লাবের মহাব্যবস্থাপক তোং ইয়ং ছুয়ান বলেন,
(রি-১)
"এখন দ্বীপের পর্যটনের অনেক উন্নতি হয়েছে। তা পুরোপুরিভাবে প্রকৃতিকে উপলব্ধি করার এক রকম তত্পরতা। প্রাথমিকভাবে দিনে ৪টি খেয়ানৌকা ঘুরে বেড়ায়। এতে চড়তে মাথা পিছু প্রায় ১শ' ইউয়ান লাগে।"
মাত্র ১শ' ইউয়ান ভাড়ায় ছিংতাওয়ের দ্বীপ ভ্রমণ আর বেশি দূর নয়। সামুদ্রিক ভ্রমণের বিষয়কে আরো সমৃদ্ধ এবং মানুষের কাছে নিয়ে আসার জন্য প্রমোদতরী-বাইচ ক্লাব কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে যারা নৌচালনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করতে চান, তারা সহজ প্রশিক্ষণের মধ্যদিয়ে সমুদ্রে নৌচালনায় তাদের মনের ইচ্ছা পুরণ করতে পারেন।
নতুন নতুন বিষয় পছন্দ করেন এমন পর্যটকদেরকে আরেকটি পর্যটন প্রকল্প ব্যাপকভাবে আকর্ষণ করছে। এটা হচ্ছে 'রোমাঞ্চযাত্রা হাঁস'। এটি আসলে একটা উভচর বাস। অলিম্পিক নৌযাত্রা কেন্দ্রের কাছাকাছি হাঁসের মত আকৃতির এই বাসটি মাঝেমাঝে সৈকতে চলে, আবার মাঝে মাঝে সমুদ্রে চলে যায়। পর্যটকরা মাত্র ১২০ ইউয়ান দিয়ে এই বাসে চড়ে ৪০ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর ও উত্তেজনাকর সমুদ্রযাত্রার এবং সমুদ্র থেকে স্থলে ফিরে আসার আনন্দ উপভোগ করার পাশাপাশি মনোহর উপকূলীয় দৃশ্যও উপভোগ করতে পারেন। ছিংতাও শেং শি ফেই ইয়াং পর্যটন কোম্পানির বিক্রয় ব্যবস্থাপক নান নান বলেন,
(রি-২)
"এই বাসে ভ্রমণ করতে প্রায় ৪৫ মিনিট লাগে। পর্যটকরা সমুদ্র থেকে স্থলে ফিরে আসার অভিজ্ঞতা লাভ করার পাশাপাশি সমুদ্রে বা স্থলে পুরো ছিংতাওয়ের দৃশ্যও উপভোগ করতে পারেন।"
ছিংতাও অলিম্পিক নৌচালনা প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ছিংতাওয়ের আন্তর্জাতিক জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। এখানে আসা পর্যটকের সংখ্যাও প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর অলিম্পিক সমাবেশ-স্থান এবং সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যময় সমুদ্র ভ্রমণ উপভোগ করার পর পর্যটকরা স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী সুস্বাদু খাবারও খেতে পারেন।
খাওয়ার প্রসঙ্গ এলে বলতে হয় ছিংতাও বিয়ার ও সামুদ্রিক খাবার ভুলেও খেতে ভুলবেন না। আপনি যদি সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ছিংতাও বিয়ার ও ঝাল ঝিনুক খেতে চান, তাহলে অবশ্যই ছিংতাও বিয়ার সড়কে যেতে হবে। রাত যত বাড়বে, ছিংতাও শহরের তেং চৌয়ের বিয়ার সড়ক আস্তে আস্তে আড়ম্বরপূর্ণ হয়ে উঠবে। ছোট হোক বা বড় হোক সড়কের দু'পাশের সব দোকানই থাকবে পানাহার প্রিয় ক্রেতায় ঠাসা। শতাধিক বছরের বিয়ার সংস্কৃতি, গভীর স্থানীয় বৈশিষ্ট্য এবং বিয়ার কারখানা থেকে সরাসরিভাবে প্রতিদিন আসা টাটকা বিয়ার অব্যাহতভাবে ছিংতাওয়ের অধিবাসী ও প্রচুর পর্যটককে আকর্ষণ করে। মিস্টার চাং ছিংতাওয়ের একজন অধিবাসী। তিনি ও তার বন্ধুরা সব সময় এখানে এসে মিলিত হন। তিনি বলেন,
(রি-৩)
"এখানে বেড়াতে যাওয়ার জন্য পরিবহণ ব্যবস্থা খুবই সহজ। এখানকার খাবার ও বিয়ার খুবই মজাদার। দামেও সস্তা; পরিবেশও ভালো। সবাই এক সাথে মিলে এখানে আরামে সময় কাটাতে পারি।"
ছিং তাওয়ের বিয়ার সড়কের ইতিহাস সম্পর্কে বিয়ার সড়কের প্রশাসন কেন্দ্রের পরিচালক ছেং চুন সংবাদদাতাকে জানান,
(রি-৪)
"শতাধিক বছরের ইতিহাস থাকা বিয়ার সড়কে ছিংতাও বিয়ার কারখানা অবস্থিত। বিয়ার সড়কের প্রতি বহু ছিংতাওবাসীর বিশেষ অনুরাগ রয়েছে। বিয়ার সড়ক সম্পর্কে ছিংতাওবাসীদের ধারণা হলো যে, এগুলো সাধারণ বাড়ি। কিন্তু অন্য শহর বা দেশের পর্যটকদের কাছে তা ইতিহাস ও আধুনিকতা মিলে এক ধরনের দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপনা।"
বিয়ার ও ঝিনুক খাওয়ার পর আপনি সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য ছিংতাও থিয়ান মু ছেংয়ে যেতে পারেন। থিয়ান মু শেং হচ্ছে পুরানো কারখানা থেকে রূপান্তরিত একটি নতুন দর্শনীয় স্থান। এখানে দৃশ্য দর্শন, পরিবেশনা, অবকাশ কাটানো ও পর্যটন সব সুবিধাই রয়েছে। থিয়ান মু শেংয়ে প্রবেশ করলে যে কোন দিক থেকে পর্যটকরা অন্য ধরনের নতুন দর্শনশক্তি উপভোগ করতে পারেন।
'অলিম্পিকোত্তর যুগের' ছিংতাও পর্যটন সত্যি সত্যিই এখানকার পর্যটনে এমন এক নতুন প্রাণশক্তি এনে দিয়েছে যে, অন্য শহরের পর্যটকরা এখানে এলে আর যেতে চান না। অলিম্পিক ও ন্যাশনাল গেমস - এ দুটো ক্রীড়া প্রতিযোগিতার কল্যাণে ছিংতাওবাসীদের গণ ও আধুনিক স্বাস্থ্যরক্ষা ব্যবস্থা ক্রমে বিস্তৃতি লাভ করেছে। এই পর্যটন শহরে অবকাশ যাপনের পরিবেশ দিন দিন গভীর হয়ে উঠেছে। চীনের ১১তম ন্যাশনাল গেমসের আইস স্পট ইভেন্টের স্থান হিসেবে ছিংতাও ক্রীড়া কেন্দ্রের বহুমুখী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র উন্মুক্ত হয়েছে। আইস স্পটের উন্মুক্তকরণে ছিংতাওবাসীদের অংশগ্রহণ বিপুল সংখ্যক পর্যটককে আকর্ষণ করে। শুধুমাত্র এক দিন সকালেই প্রায় ৫শ' লোক তাদের আইস ভ্রমণ অনুভব করেন। এখানকার অধিবাসী মিস্টার লি বলেন,
(রি-৫)
"বলা যায়, এই স্থানটি থাকা খুবই ভালো। মাঝে মাঝে শিশুদের নিয়ে চর্চা করা খুব ভালো ক্রীড়া।"
২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে ছিংতাও সাফল্যের সঙ্গে তার ১১তম ন্যাশনাল গেমসের স্বল্পদূরত্বের দ্রুতগতি স্কেটিং ও ফিগার স্কেটিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ছিংতাওয়ের অধিবাসীরা কাছে থেকে আইস ইভেন্টের বৈশিষ্ট্যময় আকর্ষণশক্তি অনুভব করেছেন। ফলে আরো বেশি শহরবাসী আইস ইভেন্টের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন।
আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বকে একটি চিত্তাকর্ষক অলিম্পিক নৌচালনা প্রতিযোগিতা উপহার দেওয়ার পর আরো ফ্যাশনদুরস্ত নৌযাত্রা নগর হিসেবে ছিংতাও নিজেকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |