Web bengali.cri.cn   
হুলুদাও থেকে শাংহাইকুয়ান হয়ে ছিনহুয়াংদাও - ৭
  2010-10-05 20:15:48  cri

    শিল্পী ইয়ান ফুশিং-এর জন্ম লিয়াওনিং প্রদেশের হুলুদাওয়ের শিংছাং-এ ১৯৫৪ সালে। তিনি লিয়াওনিং সংস্কৃতি ও শিল্পকলা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। চীনের জাতীয় পর্যায়সহ শিল্পকলা সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সংগঠনের সভাপতি ও সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের সমাজ সেবার পাশাপাশি চীনের দরিদ্র জনগণের সংস্কৃতি সেবা প্রদান, বিশেষ করে দরিদ্র শিশুদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে আরো স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন নি:স্বার্থভাবে। সত্যিই সমাজে এধরনের মহান মানুষ আছে বলেই পৃথিবী ও সমাজ আজো তার অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে যেতে পারছে। মানব কল্যাণে আজকের যুগে আমাদের আরো বেশি এমন মানুষই প্রয়োজন। আমার এবারের হুলুদাওয়ের ভ্রমণে অনেক মানুষের সাথে দেখা হওয়ার সাথে সাথে তার সাথে দেখা হওয়াটা সত্যিই সৌভাগ্যের। সেই সাথে আলো ঝলমলে রাতের হুলুদাওয়ের সমুদ্র তীরের একটি জনপ্রিয় রেস্তোরাঁয় ভোজন লিপ্সুদের ভীড়ের মাঝে জীবনে প্রথমবারের মত আমিও আমার পছন্দ মত খেতে পারি এমন অনেক ধরনের সব সামুদ্রিক খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললাম। সাগরের টাল মাটাল ঢেউয়ের আঘাতে বয়ে আসা তীরের হালকা ঠান্ডা বাতাসের সাথে সবুজ পাতার মিস্টি শব্দ যেন হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছিল। ভ্রমণের এমন স্থান সারা চীন জুড়েই ছড়িয়ে রয়েছে। বিশাল সাগর, নদী, মরুভূমি, তৃণভূমি আর সবুজ ও পাথরের পাহাড়ের গা ঘেসে থাকা শান্ত পানির আঁকা বাঁকা হৃদে, পাহাড়ি ঝরণার কল কল শব্দের সাথে পাখির গানের সুর পর্যটককে টেনে আনে নেশার মত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বেড়ানোর মজাই যেন আলাদা।

(নৈশ ভোজে শিল্পী ইয়াং কুমিং এর সাথে আমি,মি:চাং ই এবং চারু শিল্পী লিন শিয়াও মিং)

(হুলুদাও থেকে শানহাইকুয়ান আসার পথে মকস্বলের বাজার)

    সাগর তীরের রেস্তোরাঁয় খাবার শেষে সবাই ফিরে গেলাম লিনহা হোটেলে। ততক্ষণে রাত বেড়েছে অনেক। কিন্তু হলে হবে কী । আরও কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়া চাই। আফ্রিকার বেনিনের সদস্য প্র্রবরটি হোটেলে থেকে গেল। আর আমরা সবাই প্রায় মিনিট বিশেক হেঁটে পৌঁছলাম পাহাড়ের পাদদেশে বিশাল এলাকা জুড়ে বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁর সামনের সামিয়ানাহীন খোলা চত্বরে। রাত তখন আরো গভীর হয়েছে। দেখলাম চত্বরের একটি টেবিলও খালি নেই। লোকে গমগম করছে। তাদের গল্প গুজব দেখে মনে হলো সারা দিনের কর্মক্লান্তির পরে তাদের এ নির্ভেজাল সংলাপ আমাদের দেশের কবি সাহিত্যিকদের অবিরাম আড্ডাকেও হার মানিয়ে দেয়। শেষ পর্যন্ত আমাদের জায়গা হলো একটি পরিবারের সবাই চলে যাবার জন্য। সে এক দারুণ মজা। এবার সব বার্বিকিউ খাবার। তার সাথে সিদ্ধ বাদাম, মটরসুটি আর এক ধরনের ছোট ছোট বিন বা বলতে পারি সীম। এটি অবশ্য আমাদের দেশে পাওয়া যায় না। তার সাথে আরো ছিল ঝিনুকসহ কিছু সামুদ্রিক খাবারও। গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডায় চলেছিল বর্তমান রাজনীতি, সমাজ, শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও মজাদার কৌতুকের ওপর রসালো আলোচনা। কখনো সরবে আবার কখনো বা ঢিমেতালে।

(বাসের দু'জন মহিলা যাত্রী)

(হুলুদাওয়ে চলাচলকারী বৈদ্যুতিক বাহনের দোকান)

    পরের দিন খুব সকালেই যাত্রা শুরু হুবেই প্রদেশের সাংহাইকুয়ান পাসের উদ্দেশ্যে। সেখান থেকে আবার বেইদাহ হয়ে ছিনহুয়াংদাও যেতে হবে। তার সাথে রয়েছে সাগরে সাতাঁর কাটা। একটা পুলকিত আবেগ আমার ভেতর সব সময়ই কাজ করছিল। নির্ধারিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে যাত্রার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো বাংলাদেশ অর্থাত্‌ জ্যাম। তবে আমাদের মত বিশৃঙ্খলা পূর্ণ নয়। যতদূর চোখ যায় ততদূরই দেখা যায় অগণিত গাড়ির সারি। দেখলাম সবাই যে যার লাইনে দাঁড়িয়ে আছে অপেক্ষার প্রহর গুণে। শিশু বুড়ো অনেককেই দেখলাম ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি সকালের নাস্তা সেড়ে নিতে। আমাদের চালক অনেক চিন্তা ভাবনা করে গাড়ি ঘুরিয়ে কাছা কাছি ফ্লাই ওভার দিয়ে যেদিক থেকে এসেছিলাম সে পথেই ফিরে এলো প্রায় মিনিট পনেরো পর। একটা খোলা জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের সকালের নাস্তার পর্বটা সেড়ে নিলাম। সিদ্ধান্ত হলো আর গাড়িতে যাওয়া যাবে না। তার কারণ এ জ্যাম পেরিয়ে যেতে হয়তো সারাদিন লেগে যেতে পারে। দেরি হবে বলে দলের অন্যান্য সদস্যরা শেন ইয়াংয়ে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিল। আমি, আমার বন্ধু চাং ই এবং চিত্রশিল্পী লিনশিয়াওমিং শাংহাইকুয়ান যাবার সিন্ধান্ত নিলাম। বাকী সবাই গাড়ি নিয়ে চলে গেল। আমরা তিনজন বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে শাংহাইকুয়ান যাবার সড়কে এসে পাবলিক বাসের অপেক্ষায় থাকলাম। যদিও এখানে কোন বাস স্টপ নেই। তারপরও শাংহাইকুয়ানগামী একটি বাস আমার ইশারায় রাস্তার পাশে দাঁড়ালো। আমরা সবাই উঠে পড়লাম বাসে। দেখলাম আমাদের দেশের মতই এ লোকাল বাসটি দূরপাল্লার যাত্রায় পথে পথে থেমে যাত্রী উঠাচ্ছ ও নামাচ্ছে। তবে একটি জিনিস লক্ষণীয় যে, এতে যাত্রীদের মাঝে কোন ক্ষোভ নেই। এমন কি নেই বিরক্তির ভাব। বাসটি গ্রামের পথ দিয়ে ছুটে চলছে তার নির্দিস্ট গন্তব্যে। (চলবে) আবাম. ছালাউদ্দিন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040