Web bengali.cri.cn   
হুলুদাও থেকে শাংহাইকুয়ান হয়ে ছিনহুয়াংদাও - ৫
  2010-09-22 20:03:18  cri

সমুদ্র তীরে আসলেই নাকি খিদে পায়, তা সত্যি। এখানে হুলুদাওয়ে আসার পর খাবারের ক্ষেত্রে সামুদ্রিক খাবারের পরিমাণই বেশি। তার কারণ হলো আমার চীনা সংগীরা সবাই নতুন স্থানের নতুন সব খাবার চেখে দেখতেই আনন্দ পাচ্ছে বেশি। আমাদের এসব খাবারের প্রতি কোন আকর্ষণই নেই। আমাদের দেশে মিষ্টি পানির মাছ এত বেশি যে, আমরা পানিতে বিচরণকারী অন্য সব খাবারের কথা চিন্তাই করতে পারি না। তবে সামুদ্রিক খাবারে পুস্টির পরিমাণ বেশি থাকার কথা চিন্তা করে শহরের কিছু লোক এখন সামুদ্রিক খাবারের প্রতি ঝুঁকতে শুরু করেছে। যদিও তা তেমন একটা উল্লেখ করার মত নয়। এখন আমাদের দেশের রাজধানীতে গুলশান বনানী এলাকায় সামুদ্রিক খাবারের দোকান চালু হয়েছে। এখানে আমাদের খাবারের টেবিলে তিরিশ থেকে পয়ত্রিশ রকমের খাবারের মধ্যে আশি ভাগই সামুদ্রিক খাবার। বিভিন্ন রকমের শামুক, ঝিনুক, সি অনিয়ন, অক্টোপাশ, হাঙ্গর, কাটাযুক্ত সমুদ্রের কিউকাম্বার, শেওলা, জেলি ফিস, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছসহ নাম না জানা কয়েক ধরনের শাক শবজী এবং খুব ছোট পেয়ালার একবাটি ভাত। সেই সাথে তাজা ফলের রস বা কোমল পানীয়। অনেক দিন ধরে চীনে আছি, তাই আমার এসব খাবার দেখে খেতে কোন অসুবিধা হয় নি। পছন্দ মত বাছাই করে খেয়ে নিয়েছি।। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি, যে খাবারটা আমার পছন্দ, সে খাবারটি তারা সাথে সাথে আরো বেশি অর্ডার দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে অপছন্দের খাবার যদি খান তবে আপনাকে তা ভালোবেসে আরো খেতে হতে পারে। এতে ওরা খুব খুশি হয়।

যাই হোক, আমাদের জন্য অবাক করার মত আরো একটি বিষয় যে রয়েছে তা প্রথমে বুঝতে পারি নি। টের পেলাম একটু পরেই। আমাদের এবারের এ সফরের উদ্যোক্তা মধ্যমনি চাং ই জানালেন, তার একজন বন্ধু আছেন। তিনি এখন একটা সংগীত বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া তিনি নিজেই একজন শিল্পী। সারা চীনে তিনি খুবই বিখ্যাত। বিশেষ করে এ অঞ্চলে তাকে চেনে না এমন কেউ নেই। আমরা তার বাসায় যাচ্ছি তার সাথে দেখা করতে এবং তার সাথে নৈশ ভোজে অংশ নিতে। একজন গুণী ব্যক্তির সাথে কথা বলতে পারাটাও একটা আনন্দের বিষয়। বলা যায় সৌভাগ্য। তার বাড়িটি শহরের মধ্যবিত্ত্ব এলাকায়। এলাকাটা দেখে আমার কাছে তাই মনে হয়েছিল। শহরের আঁকা বাঁকা পথ ঘুরে এসে একটি গলি পথের সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো বাসটি। গলি পথের প্রবেশ মুখেই তখন কাজ চলছিল সংস্কারের। তাই আমাদের একটু পাশ কাটিয়ে ঢুকতে হলো। এ পথ দিয়ে আসলে একটা খুব ছোট গাড়ি অর্থাত্‌ টয়োটা আলটো জি এল টাইপের গাড়ি ঢুকতে পারবে। আমরা এ আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করেই দেখলাম, প্রতিটি বাড়িতে যাতায়াতের জন্য রয়েছে ছোট ছোট সংযোগ পথ। দেখলাম দু'একটি গাড়িও পার্ক করা রয়েছে। প্রবেশ পথেই আমাদের স্বাগত জানিয়েছিলেন হালকা একটি চীনা ফতুয়া পড়া শিল্পী নিজেই। যাকে সবাই একনামে চেনে আঙ্কেল বার্ড হিসেবে। তার কারণ শিল্পী অসংখ্য পাখির ডাক্‌কে অবিকল সুরে ডাকতে পারেন। দেখে মনে হলো সহজ সরল একজন সাধারণ মানুষ। অহংকার বা গাম্ভির্যের এতটুকু ছোঁয়াও তাঁর চেহারায় যেন নেই। তাঁকে দেখে বোঝাই যায় না যে, তিনি একজন বড় মাপের শিল্পী। তাঁর বাসায় যাওয়ার পর মনে হলো আমার দেশের সেই প্রবাদ বাক্যটি 'ভরা কলস বেশি বাজে না'। তাঁর বাসায় যেতে যেতে ভাবছিলাম বেশ কিছুক্ষণ থাকতে হবে। চীনা ভাষাতো জানি না। কী করবো এতটা সময়। তাঁর বাসায় ঢুকে পারিপার্শিক অবস্থা দেখেই মনে হয়েছিল এখানে দু'একটা দিন বেশ ভালোভাবেই এখানে কাটিয়ে দেয়া যায়। তাঁর বাড়িতে ঢোকার সরু পথটিও সুন্দর করে সাজানো। সারাটা দেয়াল জুড়ে লেপ্টে রয়েছে গাঢ় সবুজে ছাওয়া লতা। ভেতরে ঢুকেই মনে হলো আমি যেন গাছ গাছালীর আলো ছায়ায় ঘেরা নি:ঝুম গায়ের একটি ছিম ছাম কুটীরে ঢুকেছি। এতটুকুন একটু জায়গা কী সুন্দর করে তাকে শহরের মাঝখানে গ্রামীণ পরিবেশে তৈরি করে রাখা হয়েছে। একটি ছোট্ট কুকুরের সাথে আরো দুটি বেশ বড় গ্রে হাউন্ড রয়েছে। দেখেই ভয় লাগছিল। ভাগ্যিস দু'টিই শিকলে বাধা ছিল। অচেনা আমাদের মত বিদেশিদের দেখে সে ঘেউ ঘেউ করে চিত্কার জুড়ে দিলে তার প্রভুর নির্দেশে একেবারে চুপসে গেল। বাইরের লনেই দেখলাম অনেক ধরনের সংগ্রহ করা পাথর ও প্রাচীন পুরাকীর্তি। ঘরের ভেতর ঢুকে আরেক দফা চক্ষু চড়কগাছ। এত সুন্দর করে সাজানো স্বামী স্ত্রী মিলে দু'জনের সংসার। মনে হচ্ছিল আমি কোন এক জাদুঘর পরিদর্শন করছি। চীনের সব আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী সংগীত যন্ত্রের সমাহার। তার পাশাপাশি রয়েছে প্রাচীনকালের এন্টিকের জিনিসপত্র। চা গাছের গুড়ি দিয়ে তৈরি টেবিল।–আবাম. ছালাউদ্দিন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040