|
'তুংফাং নিউ চি কু চেং ইউ থুয়ান' সংগীত স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা সবাই
দেখলাম একজন শিক্ষিকা মনোযোগ দিয়ে যন্ত্র সংগীত শেখাচ্ছেন। তারা আমাদের চীনের ঐতিহ্যবাহী সংগীতের সুর বাজিয়ে শোনালো। একই সাথে এ কমিউনিটির একজন কর্মকর্তা আমাদেরকে তাদের এ স্কুলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানালো। এখানে নিয়মিত ক্লাস হয় এবং সবাই ভবিষ্যতে একজন শিল্পী হবেন বলে আমাদের জানালো। আমাদেরও আমন্ত্রণ জানালো তাদের সংগীত যন্ত্র বাজানোর জন্য। আমাদের ভেতর থেকে আফ্রিকার বেনিন-এর প্রতিনিধি আফ্রিকার সুর বাজিয়ে শোনালো। আমি যন্ত্র সংগীত বাজাতে না পারলেও চীনা সংগীত যন্ত্রের সামনে বসে একটু টুং টাং করে বাজানোর চেষ্টা করলাম। আসলে স্কুলে পড়াকালিন একবার মিলন নামে একজন যন্ত্রশিল্পীর কাছে ম্যান্ডোলিন বাজানো শেখার চেষ্টা করেছিলাম কয়েক মাস। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। যাই হোক পারি আর না পারি সবার সাথে অংশ নিতে পেরে মনটা বেশ উত্ফুল্ল হয়ে উঠলো। অনেক জায়গায় যেতে হবে। ভেতরে একটা শক্তি খুঁজে পেলাম। সবার সাথে কুশল বিনিময়ের পর আমরা বেড়িয়ে পড়লাম হুলুদাওয়ের শিংছাং হাই বিচের পথে মানে সমুদ্র পাড়ের উদ্দেশ্য।শিল্পী ইয়ান ফুশিং-এর সাথে আমি এবং শেন ইয়াং আন্তর্জাতিক সংক্কৃতি বিনিময় কেন্দ্রের পরিচালক চাং ই
কড়া রোদের মাঝে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে প্রবেশ পথেই দেখলাম দু'পাশে গাছের সারি, ছায়া ঢাকা পথে দোকান পাটে ব্যস্ত সমস্ত সবাই কেনা বেচায়। আসার পথে আনেক দূর থেকেই দেখলাম রং বেরংয়ের লাইফ জ্যাকেট, বড় বড় বেলুন ও গাড়ির টিউবের মত আকর্ষণীয় সব চাকতি তার বেশিরভাগই শিশু বুড়ের হাতে। আমাদের কক্সবাজারের বীচও বেশ কয়েকবার ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। তবে তা এখানকার মত এতটা বর্ণিল নয়। দোকানপাটও এতটা জমকালো নয়। রাতের বেলায় এখানকার মত আলোর ঝলকানি নেই। আমাদের দেশে বিদ্যুতের সমস্যা বড় বেশি।
শিংছেং সমুদ্র তীরের নারী ভাষ্কর্যের সামনে শেন ইয়াং নরমাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তুং ছুই
বিজয় দিবস বা স্বাধীনতা দিবসে যা একটু আধটু দেখা যায়। চীনসহ পৃথিবীর বড় বড় দেশগুলোয় না গেলে এটা অনুভব করা যাবে না। বাসে বসেই চোখে পড়লো বসে থাকা নারীর একটি বিশাল ভাষ্কর্য। দূর থেকে মনে হয় যেন সুন্দরী এ নারী বিশাল সাগরটাকে আড়াল করে রেখে নিশ্চিন্ত নির্ভাবনায় নিমগ্ন নিজের অস্তিত্বের গভীর থেকে। চীনা নারীর এ আবক্ষ ভাষ্কর্যটিকে কাছে এসে দেখে মনে হলো যেন কত দিনের চেনা। তার কারণ হয়তো এ সৌমকান্তি ও কোমলতা ভরা মুখাবয়বে ফুটে আছে স্বজাতির নির্মল প্রতিফলন। রং বেরংয়ের মাঝে সমুদ্রের নেশার হাতছানির মাঝে আমরা মাত্র আধা ঘন্টার মত কাটালাম। আমাদের কেউই সাগরের পানিতে নামার সুযোগ পাই নি এখানে। সবাই মিলে ঘুরে বেড়ালাম, কেউ কেউ সমুদ্র স্নানে আগত বিকিনি পড়াদের সাথে ঘটা করে ছবি তুললো স্মৃতির এ্যালবামে ধরে রাখার জন্য। সাগরের গর্জনের সাথে মানুষের শব্দের প্রগলভতার আনন্দ ছাপিয়ে সৃস্টি হয়েছিল যেন ভেদা ভেদ আর দুখ ও বেদনাকে ভুলে গিয়ে ফেনিল ঢেউয়ের মাঝে নিজেকে ধুয়ে মুছে পবিত্রতায় ভরে নিতে। এ যেন এক অপার আনন্দ। অসীম ভালোলাগা। সমুদ্রের তীরে আসলেই কাজ আর টানা পোড়নের ভীড়ে আস্টে পৃষ্ঠে লেপ্টে থাকা হৃদয় নামের বস্তুটা ফুলে ফেপে যেন বিশাল একটা গ্যাস বেলুনের আকার ধারণ করে। মনে হয় পৃধিবীটা ছা[ড়িয়ে স্বপ্নের দেশে ভেসে বেড়াই দু'টি ডানা মেলে।
লেখকের চীনা সংগীত যন্ত্র কু চেং-এ সুর তোলার চেষ্টা
আমাদের সবাই বাসে উঠে পড়লেও আমি ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলাম। আমাদের গাইডের ডাকে সম্বিত ফিরে পেয়ে দ্রুত বাসে উঠে পড়লাম। এ বাসের ভেতর মুখোমুখি বসার জন্য চার জনের একটি টেবিল আছে। সেখানে জমিয়ে গল্পের আসর বসানো যায়। উঠেই দেখি আমার তরুণ বন্ধু লিয়াও নিং প্রদেশের আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি বিনিময় কেন্দ্রের পরিচালক চাং ই অনেক ফল মূল নিয়ে বসে আছেন হাসি মুখে। মিষ্টি ভাষি এ মানুষটির মুখে সব সময়ই হাসি খুশি লেগে থাকে এবং সবার সাথে মিলে মিশে গল্প করেতে পছন্দ করেন। এত মিশুক আর লেখা পড়া করেন তা আমার চোখে খুব কমই পড়েছে। তাছাড়া তাকে দেখেছি সবার প্রতি সহায়তার হাত নি:সংকোচে বাড়িয়ে দিতে। এ কথা বলতেই হয় যে চীনের উত্তরাঞ্চলীয় এলাকা দেখার আমার যে প্রবল ইচ্ছে ছিল তার বেশিরভাগই তার অকৃত্ত্বিম বন্ধুত্বের কারণেই সম্ভব হয়েছে। তিনি লিয়াওনিং প্রদেশে এতটাই জনপ্রিয় যে, তাকে কাছে থেকে না দেখলে বোঝা যাবে না। বাসে উঠতেই সহাস্যে তিনি এগিয়ে দিলেন এক বোতল ঠান্ডা পানি। এই এক বোতল ঠান্ডা পানি আমার দীর্ঘক্ষের তৃষ্ণা মিটিয়ে চাঙ্গা করে তুললো। তার সাথে আঙ্গুর আর টক মিষ্টি স্বাদের ছোট আকারের আপেল ও আখরোট খিদের ইচ্ছেটাকেও চেপে রাখলো। (চলবে)-আবাম. ছালাউদ্দিন।
সংগীত স্কুলের শিক্ষার্থীরা
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |