ইয়াং লেই ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসের মাঝা মাঝি সময় সম্ভবত: ১৪ অক্টোবর সকাল ন'টায় কানসু প্রদেশের গোবি মরুভূমিতে অবস্থিত চিউছুয়ান উপগ্রহ উত্ক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে সেন চৌ – ৫ রকেটের সাহায্যে উড়াল দিয়ে ১৫ অক্টোবর সকাল সাতটায় অন্তর্মঙ্গোলিয়ার মধ্যাঞ্চলের তৃণভূমিতে সাফল্যের সাথে অবতরণ করেন। চীনের পাঁচ হাজার বছরের সংস্কৃতির ইতিহাসে এ যেন এক অনন্য অগ্রগতি। সত্যিই কি কেউ ভেবেছিল এই চীন এত দ্রুত সাফল্যের শিখরে উঠে যাবে! ইয়াং লিওয়েই মহাকাশে ২১ ঘন্টা অবস্থানকালে পৃথিবীটাকে ১৪ বার প্রদক্ষিণ করেছেন এবং এ সময় তিনি পৃথিবীকে ঘীরে ৫ লাখ কিলোমিটার পথ পারি দিয়েছেন। তাঁর এ সাফল্য সকল চীনা জাতিকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেছে নিজের দেশকে গর্বের সাথে গড়ে তুলতে। আসলে কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় হলো সাফল্যের সূচক। আমাদের গ্রুপে থাকা অন্যান্য দেশের মধ্য ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও দেখলাম খুব আগ্রহ সহকারে ইয়াংলি ওয়েইর ভাষ্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তুললো। অসীম সাহসী এ মহাশুন্যচারীর ভাষ্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে আমার নিজেকেও যেন সাহসী সৈনিক মনে হচ্ছিল। এসময় আমার একটা কথা মনে হলো ঢাকা প্রেস ক্লাবে আড্ডা দেয়ার সময় অনেকেই আমার সাথে তর্ক জুড়ে দিত নিজের মাতৃভাষায় জ্ঞান বিজ্ঞানের বই না থাকায় আমরা আধুনিক বিশ্বের থেকে আকাশ পাতাল পিছিয়ে আছি। কিন্তু এই চীন যাদের ভাষায় প্রায় পাঁচ হাজার অক্ষর মানে চরিত্র রয়েছে, যার মধ্যে সাড়ে তিন হাজারের মত না জানলে বই পত্রিকা পড়া যাবে না, অথচ তার মধ্যে একটি শব্দ বা অক্ষর অন্য কোন বিদেশী ভাষার নেই। পৃথিবীর তাবত্ জিনিসই চীনা ভাষায় রয়েছে। তাদের তো এক অক্ষরও জ্ঞান অর্জনের জন্য অন্য ভাষার কাছে হাত পাততে হয় নি এখনো হয় না। তারাতো আজ শিল্প, সাহিত্য, অর্থ ও বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীটা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আমার সাথে এখানকার অনেক ডক্টরেটের সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, কারো কারো সাথে দু'একটা ভাংগা ভাংগা ইংরেজীতে আর এঁদের বেশিরভাগের সাথেই দোভাষির মাধ্যমে কথা হয়েছে। দেখেছি তারা তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে বিশাল জ্ঞানের অধিকারী। আসলে মাতৃভাষায় শিখলে যতটা তাড়াতাড়ি শেখা যায়, অন্য ভাষায় তা ততটা অর্জন করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সে যাই হোক, এ চত্বরে আমরা প্রায় আধা ঘন্টার মত কাটালাম আমাদের আরো অনেকগুলো দর্শনীয় স্থানে যেতে হবে বলে সবাই গাড়িতে উঠে পড়লাম। এখানে আসার আগে আমরা একটি পার্ক পরিদর্শনে গিয়েছিলাম।পার্কটি বিশাল একটা পাহাড় জুড়ে। গাড়িতে কাছা কাছি যাওয়ার পর হেটে উপরে উঠতে হয়। এ পাহাড়ের ওপর থেকে হুলুদাওয়ের চারদিকের দৃশ্য খুব ভালোভাবে দেখা যায়। দেখা যায় দুরের সমুদ্র আর তার বালুকাবেলা। চারদিকের রং বেরংয়ের সব দালান কোঠা।আধুনিক স্থাপত্যের মাঝে আঁকা বাঁকা পাহাড়ি পথের সারি। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার। সিঁড়ি ঘুরে ঘুরে ওপরের গোলাকার ব্যলকনিতে উঠতে হয়। একটু ভয় ভয় লাগলেও চোখ জুড়িয়ে যায়। আর পাহাড়ে ওঠার সময় সবুজে ছাওয়া বনভূমি হৃদয়কে আবেগ প্রবন করে তোলে। অপূর্ব সে সব দৃশ্য। মনে হয় পাখির চোখে দেখছি। এ পার্কটির নাম লুংপেই সান। এটি হলুদাওয়ের নতুন করে গড়ে তোলা শিন ছুই জেলায় অবস্থিত। এ পার্কটির প্রবেশ পথটি এমনভাবে সাজানো যে, খুব সহজেই পর্যটকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
আমরা সবাই চলে এলাম শিংছাং জেলার পুরানো শহরের লুংছান হুয়াইউয়ান কমিউনিটিতে। এটি একটি আবাসিক এলাকা। পাঁচতলা অনেকগুলো ফ্ল্যাট বাড়ি রয়েছে এখানে। এরই মাঝে রয়েছে তুং ফাং নুইজি গু শুয়ে সি শুয়ে লা ইউয়ান নামের একটি ঐতিহ্যিক সংগীত শিক্ষার স্কুল। উচ্চারণের কারণে আমার লেখায় নামটি হয়তো একটু এদিক ওদিক হতেও পারে। স্কুলটি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য। তবে সবেধন নীলমনি একটি কিশোরকেও এখানে দেখলাম যন্ত্র সংগীতে তালিম নিতে। এখানে মূলত: যন্ত্র সংগীত সেখানো হয়। তবে এসব শিক্ষার্থীদের কন্ঠ সংগীতেও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে থাকে। আমরা সেখানে পৌঁছার সাথে সাথেই কমিউনিটির প্রধান আমাদের স্বাগত জানালো। –আ বা ম ছালাউদ্দিন