|
এখানে এসে একটি জিনিস আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। আর তা হলো গ্রেট ওয়ালের ভেতর ও বাইরের বেশির ভাগ বাড়ি ঘর ও দোকান পাটের ছাদে শোভা পাচ্ছে সোলার সিস্টেম বা সৌর শক্তি'র বিদ্যুতের সব যন্ত্রপাতি। দেখে মনে হলো বিদ্যুত সমস্যার কি অপূর্ব সমাধান। আমরা সবাই মিলে গ্রেট ওয়ালের ওপর উঠে কিছুক্ষণ হাঁটা হাঁটি করলাম ও ছবি তুললাম। এ গ্রেট ওয়ালের বিভিন্ন অংশে দেখলাম প্রাচীনকালের সেই নানা আকারের কামান। মনে হয় যেন এখনো এ দিয়ে যুদ্ধ করা যায়। আমার মনে পড়লো আমার দেশে ঢাকায় গুলিস্তানের সামনে থাকা মীর জুমলার কামানের কথা। যার পাশে হেলান দিয়ে ভারত বর্ষের অন্যতম ও আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তরুণ বয়সে ছবি তুলেছিলেন। যে ছবিটি আমাদের দেশের সবার কাছেই পরিচিত। এ কামানটি এখন ওসমানি উদ্যানে রাখা হয়েছে। যে কথা বলছিলাম, হুলুদাও'র আগের নাম ছিল জিংশি কাউন্টি। এই জিং শি কাউন্টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯০৬ সালে। পরে ১৯৯৪ সালে এর নামকরণ করা হয় হুলুদাও। আর এই হুলুদাওই ছিল আগ্রাসী জাপানীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রথম রণক্ষেত্র। এর পর ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত এস্থানটিই ছিল চীনা গণমুক্তি ফৌজ ও কুওমিনটাং-এর মধ্যেকার যুদ্ধ ক্ষেত্র। যুদ্ধের শেষ দিকে গণমুক্তি ফৌজের হাতে বন্দী ১০ লাখ জাপানী সেনা ও তাদের সহযোগিকে যুদ্ধের পর জাপানে ফেরত পাঠানো হয়। যুদ্ধোত্তর হুলুদাও নগরী তালিয়ান, ইংখোউ, ছিংহুয়াংদাও ও ছিংদাও'র মতই বোহাই সাগরের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। গ্রীষ্মকালে এখানে এসেছি দেখলাম বেশ গরম এখানে। এখানকার বাতাসে পেইচিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি জলীয় বাষ্প রয়েছে। গা ঘেমে যায়। তবে তা আমাদের দেশের মত নয়। এখানে জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারণ হলো বোহাই সাগর। আবার এখানে শীতকালে যথেস্ট ঠান্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়া থাকে।
হুলুদাও প্রধানত: ছ'টি উপ পৌর কর্তৃপক্ষীয় বিভাগ অর্থাত্ জেলা নিয়ে গঠিত।
এগুলো হলো:-
১. লুংফাং জেলা () ২. লিয়াংশান জেলা () ৩. লান ফিয়াও জেলা () ৪. শিং ছাং শহর () ৫. সুই চুং কাউন্টি () ও ৬. জিয়ান ছাং কাউন্টি () । চীনের উত্তরাঞ্চলের হুলুদাও খনিজ সম্পদেও সমৃদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে সোনা, দস্তা, মলিবডেনাম (), চুন এবং ম্যাঙ্গানিজ ()। এছাড়াও এ অঞ্চলে রয়েছে,প্রচুর পরিমাণ গ্যাস ও তেল । বোহাই সাগরের তীরের হুলুদাওয়ের রয়েছে দীর্ঘ ২৩৭ কিলোমিটার লম্চা বালুকা বেলা অর্থাত্ সী বিচ। গ্রীষ্মকালে সারা চীন ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন সাগর তীরের স্বচ্ছ পানিতে শরীরটা একটু ভিজিয়ে নিতে। একই সাথে এখানকার নির্মল প্রকৃতিকে উপভোগের পাশাপাশি বন্ধু প্রতীম লোকজনের উদার আতিথ্য নিতে। এখানে আপেল, নাশপাতি, বদরি ও আঙ্গুরসহ বিভিন্ন ধরনের সুমিষ্ট ফল ফলাদি এখানে প্রচুর হয় ও পাওয়া যায়। আবহাওয়াও ফলের গাছের জন্য উপযুক্ত। আর বোহাই সাগর জুড়ে রয়েছে অফুরাণ জলজ সম্পদ। বিশেষ করে মাছ, চিংড়ি ও শামুক প্রজাতির সম্পদের যেন শেষ নেই। পথ চলতে চলতে দেখছি আর ভাবছি পাহাড় আর সমতলের ঢেউ খেলানো প্রকৃতির বাগানে শ্রস্টার কতই না মন কাড়া সব চোখ জুড়ানো সৃষ্টি।
এই সেই হুলুদাও যেখানে জন্মে ছিলেন চীনের প্রথম মহাশুন্যচারী। যার সাহসিকতা পূর্ণ অভিযানের কথা চীনের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে আরেকটি মাইল ফল স্থাপন করলো। তিনি হলেন সুই চুং কাউন্টির ইয়াং লিওয়েই () । আমার সৌভাগ্য যে আমি তাঁর কাউন্টিতে এসে তাঁর স্মরণে নির্মিত ইয়াং লি স্কোয়ারের চৌরাস্তার মাঝের দ্বীপে বর্ণিল আধুনিক ডিজাইনের মহাকাশ যাত্রার ভাষ্কর্যের সাথে তাঁর মহাশুন্যের পোষাক পড়া ভাষ্কর্যটি দেখতে ও তার পাশে দাঁড়িয়ে নানা ভঙ্গীতে ছবি তুলতে পারলাম। এ স্কোয়ারে হেঁটে হেঁটে দেখার সময় আমার চোখে ভাসছিল টিভির পর্দায় দেখা রাশিয়ার দুই মহাশুন্যচারী সবার আগে চাঁদের মাটিতে পা রাখা নীল আর্মস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিনের হেঁটে বেড়ানোর দৃশ্যাবলি। সত্যিই সে ছিল এক হৃদ যন্ত্রের কাঁপুনি বাড়িয়ে তোলা শিহরণ ভরা রোমাঞ্চকর উপলব্ধি। মনে হয়েছিল আমিই যেন চাঁদে হাঁটছি। তখন রকেটের ভেতরে থেকে যিনি সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলেন তিনি ছিলেন মাইকেল কলিন্স। ইয়াং লেই'র ভাষ্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হলো তিনি যেন বলছেন, আমরাও পারি আকাশটাকে ছুঁয়ে স্বপ্নিল গ্রহ নক্ষত্রের ভূবনে ঘুরে বেড়াতে। তাকিয়ে দেখলাম এ স্কোয়ার ঘীরে গড়ে উঠেছে আধুনিক একটি শহর। যার একদিকে আকাশ ছোঁয়া বাড়িঘর আর একদিকে ফুলেল সবুজ প্রকৃতি। -আবাম. ছালাউদ্দিন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |