|
যাই হোক যা বলছিলাম, হেইলুংচিয়াং'র খেলোয়াড়দে কথা। যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। এদের মধ্যে স্কেটার ইয়াং ইয়াং আমেরিকার সল্ট লেক সিটিতে অনুষ্ঠিত উইন্টার অলিম্পিক ২০০২-এ চীনের পক্ষে সর্বপ্রথম অলিম্পিক স্বর্ণ পদক অর্জন করে সারা বিশ্বে চীনের মুখ উজ্জ্বল করেছিলেন এতদিন চীনের ঘরে কোন স্বর্ণ পদক না থাকার বেদনাকে লাঘব করে। তিনি মহিলাদের সর্ট ট্র্যাক স্পিড স্কেটিংয়ের ৫০০ মিটার এবং ১০০০ মিটার ইভেন্টে সবার আগে দু'দুটি স্বর্ণ পদক পান। সল্ট লেক সিটিতে এবং এবারের ভ্যানকুভারের উইন্টার অলিম্পিকে চার চারটি স্বর্ণ পদক পেয়ে হেইলুংচিয়াং-এর পাশাপাশি সারা চীনের গৌরবের আলো বিশ্বে যিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন ওয়াং মাং। তন্বী তনুলতার মত এ তরুণীদের দেখে মনে হয় না যে এদের মধ্যে এতটা শক্তি ও সাহসের আধার রয়েছে। এছাড়াও হেইলুংচিয়াং'র সেন শুয়ে ও চাও হুংবো এবারের ভ্যানকুভারে শীতকালিন অলিম্পিকে ফিগার ও দ্বৈত স্কেটিংয়ে স্বর্ণ পদক পেয়েছেন। সব মিলিয়ে হেইলুংচিয়াং'র খেলোয়াড়রা এ পর্যন্ত দু'টি অলিম্পিক গেমসে ৪টি স্বর্ণ, ২টি রৌপ্য এবং ৪টি ব্রোন্জ পদক পেয়েছেন। পাশাপাশি তারা চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পদক তালিকায় নিজেদের শীর্ষ স্থানে রেখে চলেছেন। হেইলুংচিয়াং'র শিল্পীরাও তাদের মন কাড়া অনুষ্ঠান পরিবেশনার মাধ্যমে তুলে ধরছেন তাদের নিজেদের অঞ্চলের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তাদের সকল সমবেত কন্ঠ সংগীত এবং শেষের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিবেশিত এ্যাক্রোবেটিক এবং বর্ণাঢ্য নৃত্য ও সংগীত ছিল হেইলুংচিয়াং'র প্রকৃষ্ট প্রতিফলন। রঙিন কস্টিউম আর বৈচিত্রময় চোখ ধাধানো আলোর খেলা সত্যিই মনকে আবেগে ও আবেশে ভরে তুলেছিল।
ভাবছিলাম, হেইলুংচিয়াং'র মাটি যেন তার প্রতিটি মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উত্স, সঞ্চারিত আশার আলোকবর্তিকা আর সুন্দর স্বাস্থ্যের একটি সুন্দরতম জায়গা। মনিটরের পর্দায় হেইলুংচিয়াং'র মনোরম দৃশ্যাবলী ও পরিবেশিত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে অনুভব করলাম, তুষার, বরফের এ অঞ্চল নির্মল হিমেল বাতাস, সতেজ সবুজ খাবার, পাহাড়ি ঝরণার বিশুদ্ধ পানি আর শারিরীক ও মানসিক শান্তির নিস্বর্গ ভূমি।
আমরা এসেছি ৭ জুন রাতে আর ফিরে যাবো ৯ জুন সকালে। মাত্র একদিন। তাই নির্ধারিত খাবার না খেয়েই সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম যতটা পারা যায় মেলার প্যাভিলিয়ন গুলো ঘুরে ঘুরে দেখার জন্য। আমরা তিনটে গ্রুপে ভাগ হয়ে গেলাম। দূর্ঘটনায় পাওয়া ডান পায়ের ব্যথা এখনো পুরো ভালো হয় নি। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে হয়। হাঁটতে হাঁটতে কখন যে ভুলে গেছি পায়ের ব্যথা। সেই হলুদ বিকেল থেকে রাতের আলো ঝলমলে মেলার প্রাঙ্গণে একটার পর একটা প্যভিলিয়নে আমরা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। দেখলাম প্রায় প্রতিটি প্যভিলিয়নের সামনেই বিরাট বিরাট লাইন, অর্থাত্ জনতার সারি। বিশেষ করে সৌদি আরবের প্যাভিলিয়ন আর জাপানের প্যাভিলিয়নের সামনে এত বড় লাইন যে, চার/পাঁচ ঘন্টা অপেক্ষা করেও সারির শেষ ব্যক্তিটি আজ ঢুকতে পারবে কি না তাতে বড্ড সন্দেহ আছে। আমার কাছে চীনের লাল রংয়ের প্যভিলিয়নটিকে মনে হলো আকাশে ভাসমান একটি চতুষ্কোণ একটি নৌকা।
সে যেন ধাপে ধাপে উঠে গেছে সিঁড়ি বেয়ে। ঘুরতে ঘুরতে রাত দশটার দিকে এসে পৌঁছুলাম আমার দেশ বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে। আসলে এশিয়ান হলের ভেতর বেশ কয়েবটি দেশের ছোট ছোট প্যাভিলিয়ন। বেশ সাজানো গোছানো। প্রবেশ পথেই রয়েছে নকশী কাঁথার আলোকে আমাদের লোকজ সংস্কৃতির একটি নকশা। বেশ সুন্দর। এ নকশাটি করেছেন আমারই বন্ধু বাংলাদেশের একজন বিশিস্ট শিল্পী মুনিরজ্জামান। ক'দিন আগে মাত্র তিনি সিল্ক রোডের এক অনুষ্ঠানে এসে সাংহাই বিশ্ব মেলাও ঘুরে গেছেন। বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে সাজানো রয়েছে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্য, সিরামিক্স, জামদানি, বেনারসি, তাতের কাপড়, কারিগরি ও বৈদ্যুতিক পণ্য এবং হস্তশিল্পসহ নানা ধরনের পণ্য। এছাড়া রয়েছে সুস্বাদু সব বাংলাদেশের খাবার। দেখলাম বহু চীনা ও বিদেশী এসব খাবার চেখে দেখছে। আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম তড়িঘড়ি করে, কারণ হাতে সময় বলতে গেলে নাই। মেলা থেকে এগারোটার মধ্যেই বেরিয়ে যেতে হবে তা না হলে বাস পাওয়া যাবে না। সর্বশেষ বাস এগারোটায় ছেড়ে যায়। খুব দ্রুত পায়ে হেঁটে হাপাতে হাপাতে বাসে উঠলাম। বাসটিও হরিণের মত ছুটলো বেদনার্ত যন্ত্রণার আকুতিতে ঝলমলে আলোর বণ্যায় ভেসে ঘরে ফেরা জনতার কোলাহলের মধ্য দিয়ে। ক্লান্ত শরীর, ঘুম ঘুম ভাব আর চোখের পাতায় ফুলময় রঙিন সাংহাই'র সব স্বপ্নেরা ভেসে আসতে থাকলো আবহ সংগীতের সুরে সুরে; বিদায় হে প্রিয় বিশ্বমেলা, বিদায় হে সুন্দরতম সাংহাই, তোমার টানে আবার আসবো, আসতেই হবে আমাকে এই হোয়াংপু'র তীরে। –আ বা ম ছালাউদ্দিন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |