Web bengali.cri.cn   
তুষার বরফের জীবন সংস্কৃতি--আধুনিক জীবন ধারায় হেইলুংচিয়াং - ৫
  2010-07-20 16:37:31  cri
    সেই সুদুর অতীতে দূর্যোগময় তুষার আর বরফের পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে বেড়ে উঠতে হয়েছিল এ অঞ্চলের মানুষকে। কিন্তু দিন বদলে গেছে। এ অঞ্চলের মানুষ এখন সেই ভয়াবহ তুষার বরফকে নিজেদের আয়ত্বে এনে সারা বিশ্বের কাছে জীবন সংস্কৃতির হৃদপিন্ড হিসেবে গড়ে তুলেছে। গড়ে তুলেছে সৃজনশীল সংস্কৃতির প্রতিমূর্তি হিসেবে। হেইলুংচিয়াং তার বিগত বিশ ব্ছরের কঠোর সংগ্রাম ও অধ্যবসায়ের মধ্য দিয়ে তুষার বরফ সংস্কৃতির সমন্বয়ের দ্বারা গড়ে তুলেছে তুষার বরফের সুকুমার শিল্পকলা, তুষার বরফের অর্থনীতি ও বাণিজ্য, শীতকালীন ক্রিড়া, শীতকালীন পর্যটন ব্যবস্হা এবং তুষার বরফের মনোরম বিনোদন। আর এসবই এখন বিশ্ববাসীকে দারুণভাবে টেনে নিয়ে আসছে এ প্রদেশে। এখানকার মানুষের খাওয়া দাওয়া, চাল চলন, বেশ ভূষাসহ বৈচিত্রময় জীবনধারা চীনের অন্যান্য অঞ্চলসহ সবার কাছেই খুব দৃষ্টি নন্দনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরফ, পাহাড় আর নদীর পাশাপাশি পাহাড়ি ঝরণা ধারা। সমতলের সাথে ঢেউ খেলানো অসমতল। জীবন চলার পথে আমাদের দেশের ঢেউ তোলা নদীতে পাল তোলা নায়ে দুলবার মত এক

    সংগ্রামী জীবন। বলতে গেলে অনেকটা চট্টগ্রামের মতই।

    হেইলুংচিয়াং তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য বিশ্বমেলায় নিয়ে এসেছে তাদের সংস্কৃতিময় পণ্যের পসরা। সাজিয়েছে তাদের প্যাভিলিয়ন ঠিক তাদের বরফ সংস্কৃতির মত করেই।। দিনের সূর্যের আলোয় বরফ যেমন ঝিলিক দিয়ে ওঠে, তেমনি করেই প্যাভেলিয়নের দিকে তাকালে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মনে হয় থরে থরে সাজানো জমাট বাধা বরফের পাহাড়। দিনের আলোয় সূর্যের আর রাতের নিয়ন ও পারদ বাতির রঙিন আলোয় স্বর্গীয় সুসমায় এত সুন্দর হয়ে দেখায় যে, মন প্রাণ আনন্দ আর উল্লাসের উত্ফুল্লতায় নেচে ওঠে। বিশ্বমেলার ঝলমলে আসরে দাঁড়িয়ে মনে হয় না যেন আমার কোন দু:খ, জ্বালা যন্ত্রণা বা চাওয়া না চাওয়া ও পাওয়া না পাওয়ার ঝির ঝিরে বেদনা হৃদের মাঝে কোথাও লুকিয়ে আছে। প্যাভিলিয়নের পর প্যাভিলিয়ন আর অসংখ্য মানুষের ঢল। যাকে আমরা বলি বণ্যার পানির লাহান আসছে আর যাচ্ছে।

    এবারের বিশ্বমেলায় হেইলুংচিয়াংয়ের প্রতিপাদ্য হলো 'তুষার আর বরফ আমাদের সংস্কৃতির বৈশিষ্ট'। একই সাথে মাঞ্চু সংস্কৃতির জনগণের শক্তির উত্স হলো 'স্বপ্নের বরফের বিশ্ব'। আমি যখন বিশ্বমেলায় ৮ জুন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম তখন জানতে পারলাম যে, গতকাল ৭ জুন পর্যন্ত গত এক মাসে বিশ্বমেলায় টিকিট কেটে আসা ৮০ লাখ সাধারণ দর্শকের মধ্যে পাঁচ লাখ দর্শক হেইলুংচিয়াং প্যাভিলিয়ন পরিদর্শন করেছে। আমার এ লেখা পর্যন্ত হয়তো এ সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি ছাড়িয়ে গেছে। প্যভিলিয়নের অভ্যন্তরীণ সাজ সজ্যার ভেতরেও বরফ ভাষ্কর্যের সংস্কৃতির উপস্থাপনা এতটাই নিখুঁত যে মনে হয় না আমি প্যাভিলিয়নে আছি। প্যাভিলিয়নের ভেতরকার হীম শীতল ঠান্ডা হাওয়া মনে করিয়ে দেবে উত্তরের কথাই। চীনের পেইচিংয়ে আমার ভাতিজাতুল্য বাবর বাস করে স্থায়ীভাবে। এখানে সে বিয়েও করেছে। একটি পুতুলের মত আদুরে ছেলেও আছে। সে আবার একজন চারুশিল্পী। বাংলাদেশের প্রথম গ্লাস আর্টিস্ট। সে হারবিনে যখন মহাশীত তখন সেখানে আয়োজিত বরফ ভাষ্কর্যের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়েছিল। তার কাছ থেকে শুনেছি মাইনাস ৪০/৪৫ ডিগ্রীতে কীভাবে ভাষ্কর্য তৈরী করেছিল। কীভাবে ফলমূল গরম পানিতে ভিজিয়ে খেতে হতো। সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। সিআরআই'র আমার একজন সাবেক সহকর্মীর কাছ থেকেও হারবিনের শীতের আনেক মজার গল্প শুনেছি।

    বলছিলাম হেইলুংচিয়াংয়ের কথা। এবারের সংবাদ সম্মেলনে এসে আমার পরিচয় হলো চীনের বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান খেলোয়াড়ের সাথে। আসলে যাদের সাথে আমার পরিচয় হওয়াটা সুখকরই বটে। এতদিন যার নাম শুনেছিলাম সেই 'ইয়াং ইয়াং'। টিভির পর্দায় বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও তার অনেক অভিনয় দেখেছি। সংগত কারণেই আমার একটা ধারণা ছিল যে চীনের অনেক নামী দামী শিল্পী ও খেলোয়াড়রা ইংরেজী জানে না বা ইংরেজীতে দূর্বল। সাংবাদিক সম্মেলনে তার বক্তব্য আর বিকেলে অনুষ্ঠিত তুষার বরফের সংস্কৃতি শীর্ষক ফোরামে তার সার্বিক উপস্থাপনা দেখে ও শুনে সত্যিই আমাকে অবাক হতে হয়েছে। এত সুন্দর ও নিখুঁত উচ্চারণ আর সাবলীল পরিবেশনা সত্যিই মনে রাখার মত। সিসিটিভি নিউজের কয়েকজনের উপস্থাপনা ও খবর পাঠ আমার দারুণ ভালো লাগে। অনেক সময় তাদের উপস্থাপনা ও খবর শোনার জন্যই টিভি ছেড়ে বসে থাকি। ইয়াং ইয়াং'র প্রাঞ্জল ইংরেজী শুনে তার সংগে আলাপ করলাম। সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগে থাকা মিষ্টি ভাষি তিনি যে এত মিশুক তা তার কাছে না গেলেও বোঝা যায়। তিনি এমনভাবে কথা বললেন যে মনে হলো আমি যেন তার কত কালের আপনজন। অনেক দিন পর যেন দেখা হলো। (চলবে) –আ বা ম ছালাউদ্দিন 

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040