Web bengali.cri.cn   
তুষার বরফের জীবন সংস্কৃতি//অতীত ঐতিহ্যের ধারক : হেইলুংচিয়াং (২)
  2010-06-22 20:34:47  cri

 

 

বিশ্বমেলায় হেইলুংচিয়াং প্রদেশের প্যাভেলিয়ন

একটু পরেই ভীড়ের মাঝে ইংরেজী জানা একটি মেয়ের কাছ থেকে জানলাম যে, বিশ্বমেলা রাত সাড়ে এগারোটায় বন্ধ হয়ে যায়। আর রাত দশটার পর দর্শকরা প্রবেশ করতে পারে না। তাই মেলার বিভিন্ন গেট দিয়ে বের হওয়া হাজারো জনতার ঢল। দেখলাম শিশু, বুড়ো, প্রতিবন্ধী সবাই এ সারিতে আছে। রাতের আলোঝলমলে মেলার দিকে তাকিয়ে মনে হলো অন্ধকারের মাঝে জেগে থাকা একটি স্বপ্নপুরি। মেলার উপর দিয়ে চলে যাওয়া উড়াল সেতু দিয়ে চলাচলকারী গাড়িগুলোর হেড লাইটের আলো ঝলমল করছে আলোর বন্যার মত। উড়াল সেতুর ওপর রাতের আঁধার ফুটে জেগে উঠেছে বাঁকা রংধনুকের চোখ ধাঁধানো রঙের ঝিলিক। আমরা যেখানে আছি সেখানকার রাস্তাগুলো পেইচিংএর মত ততটা চওড়া নয়। রাস্তার দু'পাশে রং বেরংয়ের অসংখ্য ফুলের সমাহার। একেবারে তরতাজা। লাইট পোস্টগুলোতে ও দু'পাশের টবগুলোতে ঝুলছে চোখ জুড়ানো সারি সারি নানান রঙের ফুল। পুতং নদীর বুক চিরে কুল ছাপানো ঢেউ তুলে শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত রঙীন জলযানগুলো এঁকে বেঁকে ছুটে যাচ্ছে তার গন্তব্যের দিকে। সত্যিই দেখে দেখে মুগ্ধতার আবেশে প্রতিটি মুহূর্তে শিহরিত হয়ে উঠতে হয়। রাত গভীর হয়ে গেছে। তবুও শাংহাই'র এপথে নরনারীর ভীড়ের যেন শেষ নেই। সবাই ছুটছে উর্ধশ্বাসে যার যার নীড়ের টানে। কাল হেইলুংচিয়াং সপ্তাহের উদ্বোধন। খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে যেতে হবে মেলায়। মেলায় ঢোকার প্রথম বাস ছাড়বে সকাল ঠিক ন'টায়। আর আমাদের প্রথম বাসটিই ধরতে হবে হেইলুংচিয়াংএর সংবাদ সম্মেলনে যথা সময়ে উপস্হিত হবার জন্য।

শাংহাই বিমান বন্দরে লেখক

৯ জুন সকাল সাড়ে আটটায় আমরা সবাই একসাথে হোটেলের লবি থেকে বেরিয়ে হেঁটেই চলে গেলাম মেলার গেটে নিরাপত্তা কেন্দ্রে। সেখানে ঠিক বিমানের মত নিরাপত্তা পরীক্ষার পর আরেকটু হেঁটে বিনামূল্যের টিকিট নিয়ে উঠে পড়লাম মেলার বাসে। দিনের ফুটফুটে আলোয় আমদের যাত্রাপথের দু'পাশে দেখলাম ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন সব প্যাভেলিয়ন। মিনিট বিশেক যাত্রার পর আমরা পৌঁছে গেলাম ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাষ্টিং সেন্টার আইবিসি'তে। সেখানেও নিরাপত্তা পর্ব সেরে সোজা সেন্টারের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে চলে এলাম। ভেতরে আগে থেকেই দেশ বিদেশের বিভিন্ন রেডিও ও টিভিসহ সংবাদ মাধ্যমের অনেকই আছেন। আমরা আসন গ্রহণের কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম সামনের সারিতে সংরক্ষিত আসনে হেইলুংচিয়াংয়ের সব নামীদামী খ্যাতিমান খেলোয়াড়রা এসে আসন নিলেন, আর সংগে সংগে ব্যস্ত হয়ে উঠলো আলোকচিত্র কর্মীরা। নিজেও দু'একজনের ছবি তুলতে ভুলি নি। যথাসময়েই সংবাদ সম্মেলন শুরু হলো। হেইলুংচিয়াং স্হানীয় সরকারের তথ্য দপ্তরের মহাপরিচালক ম্যাডাম ইয়ান ইউ হুং-এর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে হেইলুংচিয়াং প্রদেশের প্রথম নির্বাহী ভাইস গভর্নর দু চিয়া হাও হেইলুংচিয়াং প্রদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে দীর্ঘ বক্তৃতা দেন। এতে হেইলুংচিয়াংয়ের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, পর্যটন ও সামাজিক জীবন ব্যবস্হা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরেন। তার বক্তব্যের শুরুতেই তিনি চীনের পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাসের কথা তুলে ধরে বলেন যে, সে সময় থেকেই চীনের জনগণ তাদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলের সাথে সম্প্রীতির দৃঢ় বন্ধন গড়ে তুলে উন্নত অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে অতি দ্রুততার সংগে নিজেদের আজকের এ অবস্হানে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। আর শাংহাই বিশ্বমেলায় তাদের প্যাভেলিয়নের মাধ্যমে তা তুলে ধরার সঠিক সময় এখনই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

 

হেইলুংচিয়াং-এ লেকের চার পাশে পাহাড় আর মাঝখানেও পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য

সাংবাদিক সম্মেলনের পরপরই আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় হেইলুংচিয়াং সপ্তাহের মূল উদ্বোধনস্হল 'বাওকাং স্টেজে'। সেখানে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা হলে ঢোকার আগেই হলের সামনের পাকা করা উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে দেখলাম আগত অতিথি ও সাংবাদিকদের সম্মানে আয়োজিত শিশু কিশোরদের সামরিক ব্যন্ড শো। বিউগিল, ক্ল্যারিওনেট, আর নানা ধরনের বাদ্য যন্ত্রের সমন্বিত সুমধুর ধ্বনি সবাইকে একমিনিটের জন্য হলেও দাঁড়াতে বাধ্য করেছিল। মিডিয়ার লোকজনকে দেখলাম ছবি ও সুর ধারণ করতে। হলে প্রবেশ করেই ছিল আরেক চমক। মিলনায়তনের পেছনের পুরোটা জুড়ে বর্ণিল পোষাকে সজ্জিত কন্ঠ শিল্পীরা পরিবেশন করছিল হেইলুংচিয়াংয়ের ওপরসহ চীনের জনপ্রিয় বিভিন্ন দেশাত্মবোধক সংগীত। সংগীতের পাশাপাশি আমন্ত্রিত নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিকবর্গ ও হেইলুংচিয়াংয়ের মুখ উজ্জ্বল করা খেলোয়াড়রা প্রবেশের সাথে সাথেই তুমুল করতালির সাথে স্বাগত সম্ভাষণ। নেতৃবৃন্দের বক্তব্যের পালা শেষে হেইলুংচিয়াং প্রদেশের গভর্নর লি চান সুন আনুষ্ঠানিকভাবে হেইলুংচিয়াং সপ্তাহের উদ্বোধন করেন, আর সংগে সংগে শুরু হয়ে যায় হেইলুংচিয়াং প্রদেশের শিল্পীদের বর্ণ্যাঢ্য নৃত্য ও সংগীতানুষ্ঠান। অনুষ্ঠান শুরুর আগে ও অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে খ্যাতিমান শিল্পীদের সাক্ষাত্কার নিতে আমরা ভুল করি নি।

শরত্কালে হেইলুংচিয়াংয়ের পাহাড় জুড়ে রংয়ের মেলা

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040