|
সংস্কৃতি সড়কে লেখক আ বা ম ছালাউদ্দিন
পেইচিংয়ের উপকন্ঠেও দেখেছি এসব জমকালো পশরার দোকান। একটা বিষয়ে খুবই অবাক হলাম যে, বহুদিন ধরেতো চীনে আছি। রাস্তা, ঘাটে বা পার্কে সব জায়গায়ই দেখছি সবার সাথে কুকুর রয়েছে। বেশিরভাগই তার ছোট আকারের। দেখলাম না শুধু অহেতুক কুকুরের ঘেউ ঘেউ চিত্কার আর তাদের আক্রমণাত্মক ভঙ্গী। সামাজিক অবস্হার সাথে তারাও যেন বেশ ভালোভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছে। পেইচিং বা থিয়েনচিনে কোন নারকেল বা শুপারির গাছ একটিও দেখলাম না। তবে পেইচিং-এর মত এখানেও দু'একটি দোকানে দেখলাম ডাব নারিকেল বিক্রি করছে। তবে এসব ডাব নারিকেল সুন্দর করে ছিলে তারপর সাজিয়ে রেখেছে। খাবার সময় একটু ফুটো করে আমাদের দেশের মতই স্ট্রপাইপ দিয়ে খাওয়া যায়। হাঁটতে হাঁটতে পিপাসা লাগায় ডাব কিনে খেয়ে দেখলাম আমাদের মতই। তবে মিস্টি একটু কম। কেটে দেখি ভেতরে মজাদার মোটা লেই (পাতলা নারিকেল) হয়েছে। এসব ডাব সাধারণত দক্ষিণ চীন থেকে আসে। আসলে উত্তরাঞ্চল বা পাহাড়ি অঞ্চলের লোকজন গাছ না থাকায় এসব খেতে অভ্যস্ত নয়।
মন্দিরের একাংশ
পেইচিং-এর মত থিয়েনচিনেও ভ্যানগাড়িতে করে বিক্রি করছে নানান ধরনের ডিম, শাক-শবজি, ফলমূল এবং যে খাবারের জন্য থিয়েনচিন প্রসিদ্ধ সেই সামুদ্রিক খাবার, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন রকমের মাছ, সার্ক, অক্টোপাশ, স্টার ফিস ও জেলিফিসসহ আমার কাছে অচেনা দারুণ দারুণ সব খাবার। এই ফাঁকে একটা কথা না বললেই নয় যে, চীনে আসার পর আমার গিন্নীতো এক সময় ইলিশ মাছের জন্য অস্হির হয়ে উঠলো। কী আর করা। কারো ঢাকা থেকে আসার কথা শুনলেই তাকে অনুরোধ করতে হতো ইলিশ মাছ নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু হঠাত্ করে পেইচিংয়েই আবিস্কার করা গেল রসনা প্রিয় মাছে ভাতে বাংগালীর প্রিয় মাছ ইলিশ। এ মাছটিও নিয়মিতই পাওয়া যায় রাজধানী পেইচিংয়ে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলে যে ক'টি মাছ ধরা পড়ে তার প্রায় সবটাই চলে আসে এখানে। সপ্তাহে সব মিলিয়ে হয়তো গোটা বিশেক মাছ আসে। আর এ মাছ কেনার জন্য সাত সকালে নির্ধারিত বাজারে গিয়ে হাজির হতে হয়, তা নইলে নিমিষেই তা কিনে নিয়ে যায় এখানে বসবাসরত দক্ষিণ এশিয়ার লোকজন। চীনের উত্তরাঞ্চলের অধিবাসিরা সাধারণত কাটা বেশি হওয়ার জন্য এ মাছটি খেতে পছন্দ করে না। দামও কিন্তু বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা সস্তা। তবে বাংলাদেশের মত অত বড় পাওয়া যায় না। কখনো সখনো হঠাত্ করে দু'একটা দেড় কেজির মত পাওয়া যায়।
মন্দিরে বিশ্রামরত পায়রা
যা বলছিলাম থিয়েনচিনের এসব খাবারের মধ্যে কোনটা শব্জি দিয়ে আবার কোনটা মাংশ দিয়ে তৈরি মশলা যুক্ত এবং মশলা ছাড়া সুস্বাদু খাবার। কোনটা সুপের মত এবং কোনটা আবার বার্বিকিউ করা। আমাদের দেশের মত শিককাবাবও এখানে দারুণ প্রিয় সবার কাছেই। দেখার সাথে সাথে সুগন্ধে জিভে পানি এসে যায়। আমার সংগী অনীলতো আগ্রহের আতিসয্যে সামুদ্রিক চিংড়ি দিয়ে তৈরি একটা খাবারের অর্ডার দিয়েই বসলো কুয়াশা ঢাকা শীতের এ আবছায়া সন্ধ্যার লগ্নে।
আমাদের দেশে বার মাসে তের পার্বণের মতই চীনের থিয়েনচিনে বলতে গেলে অনুষ্ঠিত হয় বার মাসে বেশ কয়েকটি পার্বণ। তবে তা আমাদের মত তেমন করে সব কাজ ফেলে ছুটি নিয়ে করতে হয় না। সাধারণ পার্বণগুলো তারা স্বাভাবিকভাবেই পালন করে থাকে দু'তিনটি উত্সব ছাড়া। এরমধ্যে ইংরেজী নববর্ষ, চীনা চান্দ্র নববর্ষ (Chu Xi) ও বসন্ত উত্সব (Chun Jie) উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ল্যান্টার্ন উত্সব (Yuan Xiao), ছিংমিং (Qingming) উত্সব, চীনা গোলাপ উত্সব, পাহাড়ে চার দিনের সুমিস্ট কেক উত্সব যাকে থিয়েনচিনে চাং চৌ (Chang Chau) বলে এবং তা প্রতি বছর চতুর্থ পূর্ণিমার পর আট তারিখ থেকে শুরু হয়, আরো রয়েছে থিন হও (Tin Hau) উত্সব, ড্রাগন বোট উত্সব (Duanwu Jie), ভূতের মাস (Ghost Month) যা চান্দ্র বর্ষের সপ্তম মাস জুড়ে এরা পালন করে থাকে। এছাড়াও রয়েছে মধ্য শরত উত্সবসহ আরো কয়েকটি আন্তর্জাতিক উত্সব। এসব উত্সব থিয়েনচিনের নাগরিকরা খুব আনন্দ আর উল্লাসের সংগে উপভোগ করে থাকে।
দেখতে দেখতে অন্ধকারে ছেয়ে গেছে থিয়েনচিনের আকাশ আর শহর জুড়ে জ্বলে উঠেছে নানান রঙের হাজারো বাতির আলো। কুয়াশা ঘেরা শীতের রাতের মায়াবী আলোর খেলায় কার না হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ফিরে যেতে হবে নীড়ে। মিশে যেতে হবে আবার কাজের ভীড়ে, ব্যস্ততার পৃথিবীতে। এটাই স্বাভাবিক আর এটাই নিয়ম। পৃথিবীর দ্রুতগামী ট্রেনের আরাম কেদারায় আলতো করে গা'টা এলিয়ে দিয়ে বললাম বিদায় থিয়েনচিন, থিয়েনচিন তোমাকে সালাম।–আ বা ম ছালাউদ্দিন ।
সংস্কৃতি সড়কে একজন সম্রাটের ভাষ্কর্য্য
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |