Web bengali.cri.cn   
কুয়াংচৌয়ে প্রাতকালীন চা উপভোগ
  2010-06-08 15:48:45  cri

    চীন হচ্ছে চায়ের জন্মস্থান। দক্ষিণ চীনের কুয়াংচৌয়ের অধিবাসীরা চা খেতে খুবই পছন্দ করেন। কুয়াংচৌয়ে চা খাওয়া মানে শুধু চা খাওয়া নয়, বরং সঙ্গে কিছু সুস্বাদু হালকা খাবারও খাওয়া এবং বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারা। এটা যেন এক ধরনের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে আমি আপনাদেরকে কুয়াংচৌয়ের প্রাতকালীন চা সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাবো।

    সকাল ৭টায় কুয়াংচৌয়ের পুরনো রেস্তোঁরা 'থাও থাও চু' খুব সরগরম হয়ে ওঠে। এখানকার অধিকাংশ রেস্তোঁরা সকালে প্রাতকালীন চা পরিবেশন করে। থাও থাও চু রেস্তোঁরা সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে খোলা হয়। মাত্র ১৫ মিনিট মধ্যে ১ তলা থেকে ৪ তলা পর্যন্ত সব টেবিলই ভরে যায় খদ্দেরে। এর পরে কেউ আসলে তাকে অন্য মানুষের সঙ্গে টেবিল ভাগাভাগি করে বসতে হয়। একজন খাদ্য পরিবেশিকা জানান, খদ্দেররা সাধারণত রেস্তোঁরা খোলার আগে থেকেই দরজার বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। তিনি বলেন,

    "সাধারণত সাড়ে ৫টার আগেই খদ্দেররা চলে আসেন। তারা দরজার বাইরে অপেক্ষা করেন।

    প্রাতকালীন চা খাওয়া খদ্দেররা আসন পাওয়ার পর সাধারণত প্রথমে এক বোতল চা ফরমাইশ দেন। চীনের অন্যান্য এলাকার মানুষ যে চা খান কুয়াংচৌবাসীরা একই চা খান। যেমন সবুজ চা, ক্রিস্যান্থিম্যাম চা, জেসমিন চা ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ইয়ুননান প্রদেশের পু আর চা।"

    ৬০ বছরেরও বেশি বয়সী ছাও প্রতিনিধিস্থানীয় কুয়াংচৌ অধিবাসী। দশ-বার বছর বয়স থেকে তিনি তাঁর বাবার সঙ্গে চা ঘরে চা খেতে শুরু করেন। প্রতিদিন প্রাতকালীন চা খাওয়া বৃদ্ধ ছাওয়ের জন্য রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে। তিনি বলেন,

    "দশ-বার বছর বয়স থেকে আমি এখানে চা খেতে শুরু করি। এর পর বহু বছর কেটে গেছে। কুয়াংচৌবাসীদের প্রাতকালীন চা খাওয়ার রেওয়াজ হলো খাবারটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, কিন্তু চা না খেলে মনে হয় কিছু কাজ বাকি রয়েছে।"

    ছাও বলেন, কুয়াংচৌ অধিবাসীদের চা পরিবেশনের নিয়ম আছে। যেমন, গৃহকর্তা অতিথিদের চা দেয়ার পর অতিথিরা ধন্যবাদ জানানোর জন্য তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে হালকাভাবে টেবিল ঘা দেন। এখানে কাপ ভরে চা দেয়া হয় না। তিনি বলেন,

    "সাধারণত কাপের ৮০ শতাংশ ভরে চা দেয়া হয়। কিন্তু মদ দেয়ার সময় কাপের মুখ পর্যন্ত ভরে দেয়া হবে। কারণ তা মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক।"

    চা দেয়ার পর আগে আসা অতিথিরা চা খাওয়ার পাশাপাশি দিনের কাগজ পড়েন। কয়েক কাপ চা খাওয়ার পর তারা কাউন্টারের সামনে এসে চিংড়ি মাছের ডাম্পলিং ও ওনটন নুডলস‌সহ কুয়াংচৌয়ের বৈশিষ্ট্যময় হালকা খাবারের ফরমায়েশ দেন। দিনের পর দিন চা খেতে খেতে অতিথিদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দেখা হওয়ার সময় বর্তমান জীবনযাপন নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে মানসিক প্রশান্তি উপভোগ করেন। যদি কোন একজন বন্ধু কয়েক দিন না আসেন, তো তাঁর কথা সবার মনে পড়ে। ছাও বলেন,

    "আমি প্রতিদিন এই টেবিলে বসি। যদি কয়েক দিন না আসি, তাহলে পরে দেখা হলেই অন্যজন আমার অসুস্থ হয়েছিলাম কিনা জিজ্ঞেস করা হয়। পরিবেশক-পরিবেশিকা প্রতিদিন আমার জন্য চায়ের কাপ প্রস্তুতি করেন। তাঁরা অন্য মানুষদেরকে এখানে বসতে বারণ করেন না। কয়েক ডজন বছর ধরে আমি এখানে চা খাই, অনেক পরিবেশক-পরিবেশিকা এর মধ্যে বদলেছে।"

    চা ঘরে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা ছাড়াও অনেক পরিবার এক সাথে চা ও কেক খেতে আসে এখানে। চলতি বছর দাদি ছেনয়ের বয়স ৮০ বছর হলো। তিনি প্রতিদিন থাও থাও চুয়ে এসে প্রাতকালীন চা খান। আজ তার মেয়ে কুয়ান ইয়ানচি ও জামাইও তাঁর সঙ্গে এসেছেন চা খেতে। দাদি ছেন প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে জাগেন। বাসায় থাইজি-মুষ্টিযুদ্ধ করার পর তিনি চা খেতে যান। সম্ভব প্রতিদিন প্রাতকালীন চা খাওয়ার কারণে দেখতে তিনি খুবই সুস্থ-সবল। তারঁ প্রকৃত বয়স যা দেখতে তাঁকে ততটা বয়সী মনে হয় না। প্রতিদিন এখানে আসার কারণ সম্পর্কে দাদি ছেন পরপর ৩ বার 'আনন্দ' উচ্চারণ করেন। তিনি বলেন,

    "আনন্দ, আনন্দ, আনন্দ। কয়েক ডজন বছরে এটা রেওয়াজে পরিণত হয়ে গেছে।"

    তাঁর মেয়ে কুয়ান ইয়ানচি বলেন, প্রাতকালীন চা খাওয়া প্রথমত, কুয়াংচৌবাসীদের অভ্যাস; দ্বিতীয়ত, শরীরের জন্য এটা ভালো - পেট পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তিনি আরো বলেন, তার মা প্রতিদিন চা খেতে আসেন। পরিবারের অন্য মহিলারা তাঁর সঙ্গে আসেন। কিন্তু তাদের ছেলেমেয়ে অর্থাত তরুণ প্রজন্ম খুব ভোরে চা খেতে আসে না। তিনি বলেন,

    "বাচ্চারা প্রাতকালীন চা খেতে পছন্দ করে না। সাধারণত তারা আমাদের সঙ্গে আসে না। কারণ তাদের ভাল লাগে না।"

    প্রজন্মের ব্যবধান ছাড়াও তরুণ-তরুণীদের কাঁধে কাজের চাপ অনেক বেশি। খুব ভোরে চা ঘরে সময় কাটানো তাদের জন্য খুবই কঠিন ব্যাপার। সুতরাং কুয়াংচৌবাসীদের প্রাতকালীন চা খাওয়ার পুরনো ঐতিহ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। অনেক চা ঘর অফিস-কর্মচারীদের জন্য দুপুর চা এবং সন্ধ্যা চা ব্যবস্থা করে। দাদি ছেনের পাশে বসে আছে সিয়াও সুন এ দিন প্রাতকালীন চা খেতে এসেছেন। তবে এটা তার প্রথমবারের মত প্রাতকালীন চা খেতে আসা। বেশিরভাগ সময় সে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে রাতে আসে। সিয়াও সুন বলেন,

    "আজ প্রথমবারের মত এখানে প্রাতকালীন চা খেতে এসেছি। বেশি আসি রাতে। সন্ধ্যা চা খেতে আসি রাত ১০টায়। মধ্যরাতের খাবার খাই ভোর ৩/৪টার দিকে। আমার স্বামী ও ছেলে সবাই এক সাথে আসে। । আমাদের তাড়াতাড়ি ঘুমানোর অভ্যাস নেই।"

    জানা গেছে, কুয়াংচৌয়ের প্রাতকালীন চা খেতে আসা অতিথিদের জন্য আসনের ব্যবস্থা ১ লাখেরও বেশি। এখানে প্রতিদিন বিভিন্ন বয়সের নতুন বা পুরোনো চায়ের অতিথিদের অভ্যর্থনা জানানো হয়। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াংচৌবাসীদের চা খাওয়ার অভ্যাসে পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু যার পরিবর্তন হয়নি, তা হলো এ চা খাওয়ার মাধ্যমে গড়ে উঠা এক ধরনের মৈত্রী।  

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040