|
থিয়েনচিনেও গ্রেট ওয়াল আছে। তা একই মিউনিসুপালিটির মধ্য হলেও শহরের বেশ বাইরে হুয়াংইয়া পাসে অবস্হিত। গ্রেট ওয়াল দেখতে যেতে হলে যথেস্ট সময়ের প্রয়োজন। আমাদের হাতে তত বেশি সময় নেই। আমাদের আবার রাত ন'টার মধ্যেই ফিরতে হবে। পরের দিন সকাল থেকে অফিস। এ গ্রেট ওয়ালের ঐতিহাসিক তাত্পর্যও রয়েছে। এ গ্রেট ওয়ালটি ৫৫৬ খ্রীস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল। পরে মিং ডাইনাস্টির সময় এ গ্রেট ওয়ালের হুয়াংইয়া পাসের কিছু অংশ প্রায় ৪১ কিলোমিটার নতুন আংগিকে নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। এ দেয়ালটিতে ধাপে ধাপে রয়েছে ছোট ছোট দূর্গ। যেখান থেকে সেনার কামান বা তীর ধণুক দিয়ে শত্রুদের প্রতিহত করতো। গ্রেট ওয়ালের পাশেই রয়েছে খোদাই করা বিভিন্ন ধরনের পাথরের জাদুঘর। টিকিট কেটে জাদুঘর দেখতে হয়। আমরা পরেরবার এখানে আসবো তা দেখার জন্য।
সময়াভাবে আরো একটি প্রিয় স্হান আমাদের দেখা হয় নি। তা হলো থিয়েনচিনের হুংছিয়াও জেলার তাসিছিয়ান (Dasiqian street) সড়কে অবস্হিত মুসলিম স্হাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন বিখ্যাত গ্র্যান্ড মসজিদ। যদিও যাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিল দেখার। থিয়েনচিনের দর্শনীয় স্হানের মধ্যে এটিও একটি অন্যতম দর্শনীয় স্হান। এ মসজিদটি আঠারো শ' শতকে নির্মাণ করা হয়। দৃষ্টি নন্দন এ মসজিদটির ভেতরে দু'টি অংশ রয়েছে। একটি হলো 'শিমা লু' (Xima Lu) আরেকটি হলো পেইমা লু ( Beima Lu)। মসজিদটির ভেতরে ইসলামী ও চীনা শিল্পকলার মিশ্রণে মনোরম অলঙ্করণে সাজানো রয়েছে। এছাড়া বাইরে এবং বিশেষ করে ভেতরে কোরআনের পবিত্র আয়াতসমূহ ক্যালিগ্রাফিতে লেখা রয়েছে। থিয়েনচিনে অনেক মুসলিম পরিবার রয়েছে। তার সবাই এ মসজিদটিতে তাদের পবিত্র জুম্মার নামাজসহ ঈদের নামাজ পড়েন। তাছাড়া ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয় এখানে। মুসলিম পন্ডিতরা এখানে বিভিন্ন আলোচনায় অংশ নিয়ে থাকেন। এ মসজিদটি পরিদর্শন করতে হলে দর্শনার্থীদের মুসলিম শিষ্টাচার মেনে পবিত্রতার সাথে ভেতরে ঢুকতে হয়। এছাড়া মহিলাদের শরীরের অংগ প্রত্যংগ সুন্দর পোষাকে যথাযথভাবে ঢেকে তারপর প্রবেশ করতে হয়। এ মসজিদটি পরিদর্শনেও কোন টিকিট কিনতে হয় না।
থিয়েনচিনের নাগরিকদের আনন্দ বিনোদনের জন্য রয়েছে অনেক পার্ক। এসব পার্ক বাংলাদেশের মত অনাহুত আর অবাণ্ছিত ভবঘুরেদের জন্য নয়। এসব পার্কে প্রবেশ করতে টিকিট কিনতে হয় না এবং যতক্ষণ খুশি ততক্ষণ থাকা যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সত্যিকার অর্থেই এসব পার্ক একজন মানুষের সাপ্তাহিক কর্ম-ক্লান্তিকে ভুলিয়ে দেয়। পরিবরের সবাইকে নিয়ে এখানে পিকনিকের মত দিন কাটানো যায়। দেখলাম যে যার মত বাসা থেকে নানা ধরনের খাবার তৈরি করে নিয়ে এসেছে। ঘুরে বেড়ানোর অবসরে তারা পার্কের ভেতরে নিরিবিলি কোন একটি জায়গা বেছে নিয়ে সবাই মিলে কতইনা আনন্দের সংগে খেয়ে নিচ্ছে। সারা পার্কের কোথায়ও একটু বাই ছিটে ফোটা ময়লা খুঁজে পাওয়া যাবে না। যার যার মত সবাই ময়লাগুলো কুড়িয়ে নিয়ে যথাস্হানে অর্থাত নিকটস্হ ডাস্টবিনে ফেলছে। আমরা আমাদের দেশে এমন কথা এখনও চিন্তা করতেই পারি না। এখানেও দারিদ্র্যতা এখনও আছে, কোথাও কোথাও মাঝে মাঝে দু'একজন ভিক্ষুকও দেখা যায় । তারপরও নেই কোন প্রকার ঝক্কি ঝামেলা। রাতের বেলায়ও এসব জায়গা এতটাই নিরাপদ যে আমাদের মানুষের জন্য তা ভাবা একটু কষ্টকর বটেই। সারা চীনেই একই অবস্হা। এখানেও যে দূর্ণীতি ও চুরি চামারি নেই তা বলা যাবে না। তবে তার হার এত কম যে, বলতে গেলে চেখেই পড়ে না। রাস্তা ঘাটে অহেতুক মারা মারি বা চিল্লাপাল্লা খুব একটা ঘটে না। চার বছরে আংগুলে গোণা কয়েকটি ঘটনা আমার দৃষ্টি গোচর হয়েছে মাত্র। (চলবে) –আ বা ম ছালাউদ্দিন ।
![]() |
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |