|
থিয়েনচিনের মন্দিরে চীনের আগামী প্রজন্মের একটি শিশু
বাংলাদেশের রসগোল্লা আর সন্দেশের মত মিস্টি এখানে নাই। তবে খুব আশ্চর্য হলাম চিকন চিকন জিলিপি দেখে। খেতেও খুব সুস্বাদু। বলা যায় প্রায় একই রকম। ময়দার সাখে নানান উপাদান মিশিয়ে তৈরি করে তেলে ভাজার পর চিনির সিরায় চুবানো হালকা মিস্টি জাতীয় খাবারটি থিয়েনচিনের খাবারের মধ্যে অন্যতম একটি। আমরা একটা ছাদহীন খোলা খাবারের দোকানের সামনে রাখা বেঞ্চিতে বসে খাবারের অর্ডার দিলাম শিক কাবাবের মত এক ফুটের সমান লম্বা বাশের কঞ্চিতে গাথা আস্ত চিংড়ি মাছের কাবাব ও মিস্টি জাতীয়সহ কিছু খাবারের সাথে দু'ভাগ করে তার উপর মাখন দেয়া মিস্টি আলুর। একেতো খিদে তার ওপর এসব খাবার সত্যিই মুখরোচক আর মজাদার। আমাদের অশুদ্ধ উচ্চারণের চীনা ভাষা দোকানীসহ আশপাশের লোকজনের বেশ আনন্দের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর ফলে সারা দিনের যে ক্লান্তি ছিল তা দূর হয়ে গেল।সংস্কৃতি সড়কে ভাষ্কর্যের মেলা
সেখান থেকে বেরিয়ে থিয়েনচিন রেল স্টেশনের খুব কাছাকাছি হ্যাপেই জেলায় অবস্হিত একটি বৌদ্ধ মন্দিরে। এ মন্দিরটিও বেশ বড় এবং ঝকঝকে তকতকে ও কারুকার্যময়। দর্শরনার্থী ও পূণ্যার্থীরা সারিবদ্ধ হয়ে মন্দিরে প্রবেশ করছে। এ মন্দিরে ঢোকার জন্য কোন প্রকার টিকিট কেনার প্রয়োজন নেই। এ মন্দিরটি ছিং ডাইনাস্টির সময় (১৬৪৩ – ১৫৬১) সুনচি (Shunzhi) শাসনামলে নির্মাণ করা হয়েছিল। চীনের বিশিষ্ট শুয়ানচাং বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মাথার খুলির জন্য দীর্ঘদিন আগে থেকেই বিখ্যাত। ১৯৫০ সালের দিকে এ মন্দির থেকে একজন ভিক্ষুর খুলি ভারতের পাটনা জাদুঘরকে উপহার হিসেবে দেয়া হয়েছিল যা এখনো পাটনা জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।
খাবার সড়কে চীনা পরিবারের ভাষ্কর্য
মন্দির থেকে বেরিয়ে থিয়েনচিন রেডিও এবং টিভি টাওয়ার দেখার জন্য একটা টেক্সি নিলাম। থিয়েনচিনের এই রেডিও টিভি টাওয়ারটি এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উঁচু এবং সারা বিশ্বে তা তৃতীয় সর্বোচ্চ। নানখাই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি এ টাওয়ারটি বেশ কয়েক মাইল দূর থেকে দেখা যায়। টিকিট কেটে এ টাওয়ারে ওঠলে পাখির চোখে দেখা থিয়েনচিন শহরের চারদিকের দৃশ্য দেখা যায়। টিকিট কেটে এ টাওয়ারটিতে ওঠার পর চারদিকের দৃশ্য দেখে মনে হলো জাপানের কথা। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর চারুকলা বিভাগের পরিচালক থাকাকালীন জাপানের ফুকুওকায় গিয়েছিলাম তাদের ত্রিবার্ষিক চারুকলা প্রদর্শনীতে একজন সংগঠক হিসেবে অংশগ্রহণ করার জন্য। সেবারে তারা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল ফুকুওকা টাওয়ারে। একপাশে সাগর আর একপাশে আলো ঝলমলে শহর। লিফটে ওঠার পর আবার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়েছিল।
বরক হয়ে যাওয়া নদীর সামনে ইউরোপীয় স্টাইলের বাড়ি
জীবনে প্রথমবার বলে সেবার গা'টা কেমন যেন ঝিম ঝিম করেছিল। এর আগে সেই ১৯৯৪ সালে রাশিয়া সফরের সময় মস্কোয় দেখেছিলাম উঁচু টাওয়ারে ঘূর্ণায়মান রেস্তোরাঁ। তখন সময়ের অভাবে তাতে ওঠা সম্ভব হয় নি। থিয়েনচিনের এ টাওয়ারটিও অনেক আকর্ষণীয়। ফুকুওকায় দেখেছি রাতে আর এখানে দিনে। আসলে সকালের দিকটাই এ টাওয়ারে ওঠার জন্য ভালো বলে সেখানকার পরিদর্শক জানালো। টাওয়ারসহ আশে পাশে কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ালাম। আর উপভোগ করলাম প্রকৃতি আর আধুনিক বাস্তবতাকে। বড্ড তেস্টা পেয়েছিল আর তাই কাছের একটি দোকান থেকে জেসমিন চায়ের দু'টো বোতল কিনে নিলাম। কখনই তেমন একটা মনে হয় নি ক্লান্তি আর দু'দন্ড বিশ্রাম নিই। পানির তেস্টার চেয়েও দেখার তেষ্টা যেন আরো বেশি।
থিয়েনচিন রেল স্টেশনের সামনে সূর্যাস্ত
চারুকলার প্রতি আমার আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকেই। তখন ছবি আঁকতাম। আর শিশুদের বেশ ক'টি প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পেয়েছিলাম। সেই শুরু আর সেই শেষ। তবে পরবর্তি জীবনে এ শিল্পকলার ওপর পড়াশুনা করেছি এবং চারুকলার ওপর 'আর্ট হিস্ট্রি এন্ড আর্ট এ্যাপ্রিসিয়েসন কোর্স'ও করেছি শিল্পকলা একাডেমীতে আমার কর্মকালিন সময়। আমি যেখানেই যাই সময় পেলে সেখানকার আর্ট গ্যালারী দেখতে ভুলি না। হাতে যদিও সময় খুব কম তারপরও একঝলক ঘুরে আসা থিয়েনচিন আর্ট মিউজিয়াম। এ মিউজিয়ামটি ১৯৫৭ সালে তার যাত্রা শুরু করেছে। সুন্দর স্হাপত্যশৈলিতে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। দেখলে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হয়। মিউজিয়ামটিতে ইউয়ান ও ছিং ডাইন্যাস্টির আমলের দৃষ্টিনন্দন চিত্রকলার পাশাপাশি অনেক পুরাকীর্তি রয়েছে।
ভবনটির তৃতীয় তলায় প্রদর্শিত হচ্ছে লোক শিল্পকলার সাথে মূল্যবান পোর্সেলীন, খোদাই এবং সুক্ষ্ম কারুকাজে ভরা নানা ধরনের ফিগার। এছাড়াও সাজানো রয়েছে প্রাচীন ও বর্তমানকালের বিভিন্ন আকৃতির ও রংয়ের সাথে বিশাল বিশাল ঘূড়ি। দেখলে চোখ ধাধিয়ে যায়। চতুর্থ তলা হলো বিভিন্ন চারু শিল্পীদের প্রদর্শনীর জন্য। সব সময়ই এখান কারো না কারো প্রদর্শনী চলছে । এছাড়াও রয়েছে বিশিষ্ট শিল্পীদের স্হায়ী প্রদর্শনী। এখানে রয়েছে চীনের ঐতিহ্যবাহী জল রং, তেল রং, ড্রইং, ক্যালিগ্রাফি এবং ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন জিনিস। (চলবে)—আ. বা. ম ছালাউদ্দিন
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |