|
এবারের বিশ্বমেলায় জার্মানী প্যাভিলিয়নের প্রতিপাদ্য হচ্ছে 'সম্প্রীতিময় নগর'। সুতরাং স্থাপত্যের বাহ্যিক আকার অথবা ভেতরের প্রদর্শনী হোক না কেন এতে সম্প্রীতিময় সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে। জার্মানী প্যাভিলিয়নের মেঝের আয়তন ৬ হাজার বর্গমিটার। চারটি অনিয়মিত বৃহদাকার স্থাপত্য একে অপরকে স্পর্শ করে। দেখতে ভাস্কর্যের মত। আর্তি ফেচার বলেন,
জার্মানী প্যাভিলিয়নের স্থাপত্য ও আকার খুবই উল্লেখযোগ্য। বাইরে থেকে দেখলে ভবিষ্যবাদের অনুভূতি পাওয়া যায়। খুবই মজার। আসলে প্যাভিলিয়নের ভেতরে আপনি অনেক প্রদর্শনী দেখতে পাবেন। এসব জার্মানী প্যাভিলিয়নের 'সম্প্রীতিময় নগরের' দৃশ্য প্রতিফলিত হয়েছে।
জার্মানী প্যাভিলিয়নের ইংরেজী নাম 'ব্যালানস সিটি' বা ভারসাম্য নগরী 'ব্যালানস' এবং 'সিটি' দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত একটি নতুন শব্দ। এর মধ্য দিয়ে এরকম তথ্য প্রকাশ করা হয়ঃ যদি একটি শহর নতুনত্ব অনুসন্ধান ও পুরনো রক্ষা, সৃজনশীলতা ও ঐতিহ্য, শহর ও প্রকৃতি, গ্রুপ ও ব্যক্তি, চাকরি ও অবকাশের মধ্যে ভারসাম্য পৌঁছে, তাহলে সেখানকার জীবনযাপন হবে সম্প্রীতিময় নগর জীবন।
জার্মানী প্যাভিলিয়ন ১২ হাজার বর্গমিটারের ভূর্জপত্র ব্যবহার করে প্যাভিলিয়নের ওপর এবং চার দিককে ঢেকে দেয়। জার্মানী প্যাভিলিয়নের ডিজাইনার ব্যাখ্যা করেছেন, ভূর্জপত্রের প্রধান ভূমিকা হলো সুর্যের আলো ও গরম প্রতিরোধ করা। ভবিষ্যতে তা কেনাকাটার ব্যাগসহ বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যে পরিণত হবে। বিশ্বমেলা শেষ হওয়ার পর জার্মানী প্যাভিলিয়নে ব্যবহৃত ১ হাজার ২শ' টনেরও বেশি ইস্পাতকেও পুনর্ব্যবহার করা যাবে।
জার্মানী প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করলে, মনে হবে বিশাল সমুদ্রে প্রবেশের মত। দর্শকরা পানির শব্দ এবং দীপালোকের নীল রঙের বিশ্বে ঘোরানো সিঁড়িতে করে ধীরে ধীরে নগরের জীবনে আসছেন। এখানে জার্মানীর সর্বশেষ উদ্ভাবন দেখা এবং জার্মানীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বয়ে আনা সুন্দর জীবন অনুভব করা যাবে।
জার্মানী প্যাভিলিয়নের সবচেয়ে বড় উজ্জ্বল বিষয় হচ্ছে 'চালিকাশক্তির উত্স'। এটা হচ্ছে একটি বিরাট ধাতব বল। বিশাল বলের ব্যাস ৩ মিটার এবং ওজন ১.২ টন। বলের বাইরে ৪ লাখ এল.ই.ডি স্থাপন করা হয়েছে। বলের ভেতরে একটি বিশেষ ড্রাইভ সেট রয়েছে। যদি কয়েকশ' দর্শক এক সাথে কণ্ঠস্বর দেয়, তাহলে বলটিকে তীব্রভাবে ঘোরাবে। সে সময় বলটি জার্মানী এবং বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার চিত্তাকর্ষক প্রতিমূর্তি দেখিয়ে শহর জীবনযাপনের প্রাণশক্তি ফুটিয়ে তুলবে। আর্তি ফেচার ব্যাখ্যা করেছেন, ধাতব বলটি জার্মানীতে তৈরী করা হয়েছে। তারপর এটাকে চীনে স্থানান্তর করা হয়। সারা বিশ্বে এ ধরনের বিশালবল একমাত্র এখানে রয়েছে। তিনি বলেন,
'চালিকাশক্তির উত্স' হচ্ছে জার্মানী প্যাভিলিয়নের সবচেয়ে উজ্জ্বল বিষয়। আমরা ডিজাইনের মাধ্যমে 'আমরা এক সাথে চেষ্টা চালাবো' এরকম তথ্য প্রকাশ করতে চাই। আমরা এক সাথে 'আরো সুন্দর শহর, আরো সুন্দর জীবন' এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা চালাই।
ভক্স ওয়াগনওয়ার্ক গ্রুপের চীনা অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট ডক্টর উইনফ্রাইড ভহল্যান্ড জার্মানীর প্যাভিলিয়ন পরিদের্শনের পর যে অনুভুতি হয়েছে তা দর্শকদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন। তিনি বলেন,
জার্মানী প্যাভিলিয়ন আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছে। প্রথমত, এর বাইরের দৃশ্যই একটি বিরাট বিস্ময়। এর আগে সে প্যাভিলিয়নের ওপর আমার কোন ধারণা ছিল না। যদিও কিছু কিছু ছবি দেখেছি, তবুও ভেতরে কি রকম তা জানতাম না। জার্মানী প্যাভিলিয়নে আপনি দেখতে পাবেন জার্মানদের জীবনযাপন কিরকম, তাদের শহর কিরকম এবং তারা কিভাবে নিজেদের জীবনযাপনকে আরো সুন্দর করে তোলেন। তাছাড়া প্রদর্শনী কেন্দ্রে জার্মানীর উন্নত প্রযুক্তি ও গাড়ি শিল্প প্রদর্শন করা হবে।
চীনা দর্শকদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং তাদেরকে আরো ভালো সেবা দেয়ার জন্য জার্মানী প্যাভিলিয়নের কর্মীরা চীনা ও জার্মানী দু'টি ভাষাই চালু রেখেছেন। জার্মানী প্যাভিলিয়নের মুখপাত্র ম্যারিয়ন কনরেডি ব্যাখ্যা করেন,
জার্মানী প্যাভিলিয়নের সব কর্মীই চীনা ভাষা ও জার্মানীর ভাষা দিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। তাদের মধ্যে কোন কোন চীনা মানুষ আগে জার্মানীতে ছিলেন বা লেখাপড়া করেছেন। চীন ও জার্মানী এমনকি দু'টি দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে তারা অনেক জানেন। পাশাপাশি তারা সবাই ইংরেজী ভাষায়ও কথা বলতে পারেন।
জার্মানী প্যাভিলিয়নে একটি সাংস্কৃতিক শিল্প-কর্ম মানুষের মনে দাগ কেটেছে। প্যাভিলিয়নের ভেতরের একটি দেয়ালে সড়কের দৃশ্য দেখা যায়। যদি কোন দর্শক সতর্কভাবে তা না দেখেন, তাহলে তাকে মিস করবেন। জার্মানীর কোন কোন বেসরকারি ব্যক্তি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় তোলা ইহুদীদের ছবির টুকরো ধাতব পাতে খোদাই করার মধ্য দিয়ে মানুষকে নিষ্ঠুর যুদ্ধের ইতিহাস ভুলে না যাওয়ার প্রত্যাশা করেন।
জানা গেছে, জার্মানী প্যাভিলিয়নে জার্মান গায়ক-গায়িকা এবং জনপ্রিয় সঙ্গীত দল বিশ্বমেলায় পরিবেশনা করবেন। জার্মানী প্যাভিলিয়নের রেস্তোঁরায় প্রতিনিধিকারী জার্মান খাবার সরবরাহ করা হয়। আশা করি আমরা ৬ হাজার বর্গমিটারের প্যাভিলিয়নে জার্মানীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ করতে পারবো।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |