|
শিশুরা চাকতি ছুড়ে মেরে খলছে
এবারে আমরা বেশ কিছুটা পথ হেঁটেই চলে এলাম শহরের কেন্দ্রস্হলের এ্যান্টিক মার্কেট বা প্রাচীন আমলের প্রত্ন সম্পদের বাজারে। এটিকেও পুরাকীর্তির সড়ক বলা চলে। কারণ, রাস্তার দু'পাশ জুড়ে রয়েছে অসংখ্য দোকান আর খাবার ঘরের সারি। ঘুরতে ঘুরতে ইচ্ছে হলেই আপনি কিছু একটা খেয়ে নিতে পারেন। চীনের এটা একটা দারুণ বৈশিষ্ট। ঢুকতেই দেখলাম কালো রঙের ভাষ্কর্য। যা পুরু এলাকা জুড়েই রয়েছে। এখানে দেখলাম প্রাচীনকালের সব অবিকল নকল জিনিসপত্র যার মধ্যে রয়েছে প্রাচীন মুদ্রা, ডাক টিকিট, বিভিন্ন ধরনের অলঙ্কার, নানা ধরনের চায়ের পাত্র, প্রাচীনকালের খুব ছোট আকার থেকে শুরু করে বিশাল আকারের বাক্স, আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলের অধিবাসিরা যাকে বলে সিন্দুক। এছাড়াও দেখলাম রয়েছে চেয়ারম্যান মাওসে তুং-এর ওপর কোটপিন ও ভিউ কার্ডসহ অনেক জিনিস। এ এলাকাটি এমনভাবে সাজানো রয়েছে যে, এখানে ঢুকলেই মনে হবে আমরা যেন সেই প্রাচীনকালের নগরীতে চলে এসেছি। এলাকাটি লোকে লোকারণ্য। দারুণ উপভোগের পাশাপাশি অর্জন করছি বৈচিত্রময় অভিজ্ঞতা। এখানে দেখলাম আমাদের বৈশাখী মেলার মতই এখানে আসা স্হানীয় অধিবাসি ও পর্যটকদের হালকা বিনোদনেরও অনেক ব্যবস্হা রয়েছে। রয়েছে হরেক রকমের লটারী। এর মধ্যে একটি হলো বাঁশ বা বেত দিয়ে তৈরি গোলাকার রিং উন্মুক্ত স্হানে সাজিয়ে রাখা বস্তুর উপর ছুড়ে মারা। যদি বস্তুটি রিংয়ের মধ্যে পড়ে তাহলে তা যিনি ছুড়ে মেরেছেন তা তার হয়ে যাবে। মাত্র ১০ ইউয়ান দিলেই আয়োজক ১৬ থেকে ২০টি রিং ছুড়ে মারার জন্য দেবেন। এ লটারীতে নির্ধারিত সীমারেখার বাইরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে ১ ইউয়ান থেকে শুরু করে ১০০ ইউয়ান দামের জিনিস পত্র। এক একজন আবার এক এক ধরনের জিনিষ নিয়ে বসেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই শিশুতোষ, ডেকোরেশন পিস ও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস। এছাড়াও রয়েছে আমাদের দেশের মত এয়ার গান দিয়ে বোর্ডে বেধে রাখা ছোট ছোট রঙিন বেলুন ফুটানো। কোথাও বা নম্বর দেয়া বোর্ডের টার্গেটকে লক্ষ্য করে সূচালো ছোট তীর ছুড়ে মারা, কোথাও বা বাস্কেট বলের রিংয়ে বল ছুড়ে মারা, বিভিন্ন রকমের খেলা রয়েছে। এতে শিশু, কিশোর, তরুণ ও বৃদ্ধ সবাই আংশ নিচ্ছে। মা বাবা বা আত্মীয় স্বজনের হাত ধরে আসা ছোট ছোট শিশুরাও দারুণ উত্সাহের সাথে খেলছে। আমার খুব শখ হলো খেলার; দশ ইউয়ান দিয়ে ২০টি রিং নিয়ে ছুড়ে মেরে তিনটি খেলনা পেলাম এবং তা আমার পাশে থাকা তিনটি শিশুকে দিয়ে দিলাম। ওরা নিতে চায় নি, মা বাবার কথায় নিল এবং খুব খুশি হয়ে বললো 'শিয়ে শিয়ে'।প্রাচীনকালের সেনাবাহিনীর পোষাক ' লৌহ বর্ম'
উত্তরে বললাম 'পুওয়ংশিয়ে'। এখানে আরো দেখলাম হাতে বানানো নানা রংয়ের শন পাপড়ি। আমাদের ছোট বেলায় স্কুলের সামনে এবং উত্সবে, পার্বণে আর বিভিন্ন মেলায় সাইকেলের চাকার গাড়িতে করে বিক্রি করছে। তাও আবার লটারির মাধ্যমে। এখানেও দেখলাম ঠিক তাই। যার যতটা লটারিতে উঠছে সে ততটা পাচ্ছে। তবে এখানকার শন পাপড়ি আমাদের চেয়ে অনেক বড় এবং তা বাঁশের কঞ্চির সাথে লাগানো। হাতে নিয়ে হেঁটে হেঁটে খাওয়া যায়। শুধু শিশুরাই খাচ্ছে না বয়স্করাও খাচ্ছে। দেখে আমাদেরও খেতে ইচ্ছে হলো। আসলে ঘুরে ঘুরে দেখছি আর ছবি তুলছি বলে কিছুটা খিদেও পেয়েছিল।আনন্দের সাথে শন পাঁপড়ি খাচ্ছে
আমরা তাই এবার এলাম ফুড স্ট্রিট অর্থাত খাবারের সড়কে। এখানেও একই অবস্হা। এখানে রয়েছে অসংখ্য খাবারের দোকান। এছাড়াও রয়েছে অনেক খোলা খাবারের ভ্রাম্যমাণ দোকান। সবকিছুই সাজানো আছে। ফরমাশ দিলেই রান্না করা সব সুস্বাদু গরম খাবার হাজির হয়ে যাবে। চীনা খাবার আমার ভালোই লাগে। তৃপ্তিসহকারে খেতে পারি। আমাদের রান্নার সাথে বলতে গেলে কিছুটা মিল আছে। তবে দু'একটা খাবারে তেলের গন্ধটা একটু অন্য রকম। ফুড স্ট্রিটে রয়েছে হাজারো রকম খাবার, হাজার রকম বললে ভুল হবে। তার কারণ, সামুদ্রিক খাবারই রয়েছে হাজার হাজার। বাংলাদেশের মিস্টি পানির মাছের নাম বলতে অনেকগুলোই বলতে পারবো। তবে সামুদ্রিক মাছের নাম বলা খুবই মুশকিল। বড়জোড় আট দশটা বলতে পারবো। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ডাঙ্গার প্রাণী ও পোকা মাকড়। কী নেই সেটাই হয়তো বলা যায়। আরো রয়েছে পিঠা পুলি ও ঐতিহ্যবাহী খাবারের মেলা। সেসব দৃশ্য না দেখলে বোঝানো বড় কঠিন। এখানে আসার আগে পেইচিং থেকে শুনে এসেছি এখানকার সকালের নাস্তা না কি দারুণ জমজমাট হয়। নাস্তার সময় ঘন্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে বসার জায়গা পাওয়া যায়। আমরা যখন এসেছি তখন অপরাহ্ন। তারপরও যে হারে লোকজন খাচ্ছে তাতে সত্যিই অবাক হতে হয়।(চলবে) –আ.বা.ম. ছালাউদ্দিন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |