Web bengali.cri.cn   
ঐতিহাসিক নগর থিয়েনচিনে - ৪
  2010-04-27 20:58:44  cri

মন্দিরের সামনে লেখক

এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য আকৃতির নানান ফুলের ঘূড়ি। এসব ঘূড়িগুলো কারিগরি প্রযুক্তিতে তৈরি। এদের কোনটাই আমাদের দেশের সাবেকি আমলের ঘূড়ির মত হালকা পাতলা সাধারণ ঘূড়ি নয়। দেখলাম প্রাচীন এসব ঘূড়ি ওড়ানোর আধুনিক সরন্জাম। না দেখলে বিশ্বাসই হবে না যে এসব ঘূড়ির কোন কোনটা ওড়াতে মোটা মোটা দড়ির প্রয়োজন হয়। উড়ানোর সময় মোটা দড়িকে শরীরের সাথে শক্ত করে বেধে রাখতে হয়। এসব ঘূড়ি যখন আকাশে ওড়ে তখন পুরো আকাশটাই রংয়ে রংয়ে রঙিন হয়ে যায়। দেখছিলাম আর ভাবছিলাম, হাজার হাজার বছর আগের রাজ রাজারা কতটা আমুদে আর আনন্দ প্রিয় ছিল। একই সংগে সে সময়কালের সেনাপতিরা তাদের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের সংবাদ পৌঁছানোর জন্য ঘূড়ির মাধ্যমে সংকেত প্রদান করতো। সংস্কৃতি সড়কের এসব ঘূড়ি দেখে মনে পড়ে গেল ইতিহাসের কথা। খ্রিস্ট পূর্ব ২৩৮ সালে প্রথম ঘূড়ি আবিস্কৃত হয়েছিল। এ আবিস্কারের পেছনে কাজ করেছিল নৌকার পাল, যা বাতাসে ভর করে একটি নৌকাকে টেনে নিয়ে যায় তার গন্তব্য স্হানে। প্রথম যিনি ঘূড়ি আবিস্কার করেছিলেন তিনি হলেন চীনের মো চি। তার আবিস্কারের পথ ধরেই আজকের এই সংস্কৃতি সড়কের বর্ণিল ঘূড়ি।

মিং ডাইনাস্টির সময়কার হাতে টানা রিক্সা

হাঁটতে হাঁটতে আমরা দেখছি আর নিজেকে সমৃদ্ধ করছি অভিজ্ঞতার আলোকে। একটা জিনিস দেখে অবাক হইনি তবে মনে হয়েছিল যে চীনা জাতি একটি পাঠকের জাতি। আগে থেকেই জানি ইউরোপীয়রা বই পড়ার পোকা। যেখানেই যাক না কেন হাতে একটা ছাতা আর একটা বই থাকবেই। চীনের সব অঞ্চলের কথা হয়তো বলতে পারবো না; তবে যে সব অঞ্চল ঘুড়েছি সবখানেই দেখেছি বাসে, ট্রেনে, দোকানে এমনকি শহরের উপকন্ঠের ফুটপাতের সাইকেল মেকানিক, ফল বিক্রেতা, ফেরিওয়ালা আর কাঁচা বাজারের দোকানদারকে একটু অবসর পেলেই বই বা পত্রিকা পড়তে। অনেক ছবিও তুলেছি এর ওপর। এখানে এ সংস্কৃতি সড়কেও রয়েছে ছোট ছোট দোকান ও ফুটপাতে পলিথিনের ওপর ছড়িয়ে রেখে বিজ্ঞান, শিল্প, সাহিত্যসহ নানা ধরনের বই বিক্রির আয়োজন। পেইচিংয়ের মত এখানেও দেখলাম বই কেনার জন্য শিশু, কিশোর ও বুড়োসহ অনেক মানুষের ভীড়। ভালোই লাগলো।

কিছু কিছু খাবারের দোকানও আছে। খিদে পেলে বা ইচ্ছে হলে সংগে সংগে কিছু খেয়ে নেয়া যায়। সব সময়ই যেন উত্সব উত্সব ভাব লেগে আছে। সে এক দারুণ আনন্দ। সংস্কৃতি সড়কের আশে পাশেই রয়েছে বিভিন্ন ডাইন্যাস্টির সময় নির্মিত প্রাচীন নিদর্শনসমূহ। এর মধ্যে রয়েছে, থিয়ানহউকুং মন্দির, রাণীর স্বর্গীয় মন্দির যা ইউয়ান ডাইনাস্টির (১২৭৯ থেকে ১২৬৮) সময়কালে এবং মিং ডাইন্যাস্টির সময় ১২৭৯ থেকে ১৩৬৮ সালের মধ্যে নির্মিত কনফুসিয়াস মন্দির। এসব দর্শনীয় স্হানগুলো আমরা খুব দ্রুত দেখতে পারবো বলে আমরা দু'জন আশাবাদী হয়ে উঠলাম। সংস্কৃতি সড়ক থেকে বেরিয়ে সোজা চলে এলাম কাছাকাছি থাকা থিয়ানহউকুং মন্দিরে। বেশ বেশ বড় একটি মন্দির। এ মন্দিরকে স্বর্গীয় রাণীর মন্দির হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। এ মন্দিরটি ইউয়ান ডাইনাস্টির সময় ১২৭৯ থেকে ১৩৬৮ সালে নির্মিত হয়। মন্দিরের ভেতরে না ঢুকলে বোঝাই যায় না যে এ মন্দিরটি কত বড় বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে।। টিকিট কেটে মন্দিরে প্রবেশ করে ঘুরে ঘুরে দেখলাম স্হানীয় অধিবাসীসহ অসংখ্য লোক শ্রদ্ধাবনত চিত্তে মন্দিরের ভেতর হেঁটে হেঁটে তা পরিদর্শন করছে। ফুল দিয়ে আগরবাতি জ্বালিয়ে দু'চোখ বন্ধ করে অবনত মস্তকে শ্রদ্ধায় নিমগ্ন রয়েছে। বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের পাশাপাশি অগণিত তরুণ তরুণীরাও জানাচ্ছে তাদের শ্রদ্ধা। দেখলাম অনেক তরুণ তরুণী বিয়ের পরপরই এ মন্দিরে এসে একাগ্র চিত্তে প্রার্থনা করছে। আমার মনে পড়লো রাশিয়া ভ্রমণের সময় দেখেছি যে, চার্চে গিয়ে আনুষ্ঠানিক বিয়ের পর যুবক যুবতীরা তাদের বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয় স্বজনসহ বিয়ের পোষাকেই ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্হান এবং বিভিন্ন স্মরণীয় এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে বেরিয়ে পড়েছে। এমনকি তারা তাদের রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অবদান রাখা মনিষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেসব স্হানে যাচ্ছে। চীনে এসে দেখলাম ঠিক একই রকম। এশিয়ার যেখানেই গেছি দেখেছি পূর্ব পুরুষদের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা মেশানো শ্রদ্ধা।

ঘন কুয়াশা এখনো কাটে নি। ভেবেছিলাম সূর্য হয়তো উঁকি দেবে। তাও দিল না। তবে দু'একবার আলোর ঝিলিক দেখেছি মাত্র। সেই ফাঁকে মন্দিরের কয়েকটা ভালো ছবিও তুলতে পেরেছি বলে মনে হয়।

কনফুসিয়াস মন্দিরের গেট

হাতে বেশ সময় আছে। দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম কনফুসিয়াস মন্দিরের উদ্দেশ্যে। আমাদের কেন জানি আজকের ভাগ্যটা বিরূপ। কনফুসিয়াস মন্দিরে এসে দেখি আজ তা বন্ধ। সপ্তাহে একদিন বন্ধ আর তা হলো আজ। কি আর করা । মনটাই খারাপ হয়ে গেল। তবে আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কনফুসিয়াসের নিজ স্হান ছুইফু'তে যাওয়ার। ২০০৭ সালে সি আর আই'র বিদেশ বিভাগের পরিচালক ছিলেন নিউ তাই পিন। যার সাথে আমার বেশ সখ্য গড়ে উঠেছিল সি আর আই'তে যোগ দেয়ার পর বেইদাহে টুরের সময়। তখন আমি সেখানে চীনের ওপর আমার অভিজ্ঞতা ও চীনের প্রতি ভালোবাসার দিক উল্লেখ করে দীর্ঘ সময় নিয়ে বক্তৃতা করেছিলাম। যা সবাইকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তিনি আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন শানতুং প্রদেশের চিনানে গ্র্যান্ড ক্যানেলের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে। সেখান থেকে আমরা গিয়েছিলাম ছুইফু। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখেছিলাম মহান চিন্তাবিদ, শিক্ষক ও দার্শনিক কনফুসিয়াসের বিশাল এলাকাটি। যাই হোক পরে কোন এক সময় সেখানকার কথা আলাদাভাবে লিখবো। থিয়েনচিনের এ কনফুসিয়াস মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল মিং ডাইনাস্টির সময় ১৩৬৮ থেকে ১৬৪৪ সালে। এ মন্দিরটি ওয়েনমিয়াও নামেও পরিচিত। শহরের কেন্দ্রস্হলে অবস্হিত এ মন্দিরটি অন্যান্য মন্দিরের তুলনায় তত বড় নয়। তবে ঐতিহ্যিক নকশা এটিকে দূর থেকেই আকর্ষণ করে। এ মন্দিরে কনফুসিয়াসের অনেক পান্ডুলিপিসহ বেশ কিছু ঐতিহ্যিক পুরাকীর্তি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে একটি পাঠাগার। (চলবে) –আ.বা.ম. ছালাউদ্দিন।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040