|
এখানে আসার আগে আমার বড় ছেলে রেহানকে দিয়ে কোথায় কোথায় যাবো তার একটা তালিকা করে নিয়েছিলাম ইংরেজী ও চীনা ভাষায়। ক'দিন আগে মাত্র সে বিশ্ববিদ্যালয় উহান প্রদেশ থেকে এসে থিয়েনচিন ঘুরে গেছে। আমরা বরফ হয়ে যাওয়া নদীর পাড় দিয়ে হেঁটে ঝুলন্ত সেতু পার হয়ে ওপারে গেলাম। দু'জনে হাঁটছি আর খুঁজছি ইংরেজী জানা কাউকে। যাও দু'একজনকে পেলাম তারা চীনা ভাষা পড়েও কোন সঠিক নির্দেশনা দিতে পারলো না। তারপরও আমাদের খুব একটা খারাপ লাগছিল না। এ সড়ক ও সড়ক ধরে আমরা হাঁটছিলাম বেশ আনন্দের সংগেই। দেখছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। আমাদের উদ্দেশ্য থিয়েনচিনের তৃতীয় শতকের পুরোনো ঐতিহাসিক তাপেই ও হাজার বছরের পুরোনো তুলে মন্দির, কনফুসিয়ান মন্দির, ফুড স্ট্রিট, কালচারাল স্ট্রিট, পুরাকীর্তির মার্কেট, গ্র্যান্ড মসজিদ, হুয়াংইয়া পাসের গ্রেট ওয়াল, শিল্পকলার প্রতি আমার আসক্তি থাকায় আর্ট মিউজিয়াম, ঐতিহাসিক গণগ্রন্হাগার, রেডিও ও টিভি টাওয়ারে ওঠা, সমুদ্র বন্দরে যাওয়া এবং হাতে সময় থাকলে সাগর তীরের দৃষ্টিনন্দন পার্ক সুইশাংসহ পেইনিং ও সেন্ট্রাল পার্কে ঘুরে বেড়ানো। থিয়েনচিন পেইচিংএর মত অতবড় বিশাল শহর নয় তারপরও ভাষা না জানা মূর্খ লোকের মতই এখানে ঘুরে বেড়ানোও একটি সাহসী অভিযানের শামিল। সময়তো আর কারো জন্যে বসে থাকে না। এত জায়গায় যেতে হবে এভাবে চলতে থাকলে দু'দিন কেন এক সপ্তাহেও দেখে শেষ করা যাবে না। হাঁটতে হাঁটতেই দেখা পেয়ে গেলাম কাঙ্খিত ইংরেজী জানা একজনের।
তখন আমরা একজনের সাথে কথা বলছিলাম। ঠিক তখন সে এসে হাজির আমাদের সামনে । এ যেন না চাইতেই বৃষ্টি। এ মেয়েটির নাম সিসি শিয়ে শিয়ে। মেয়েটি বেশ ভালো ইংরেজী জানে। একট বড় কম্পিউটার কোম্পানিতে কাজ করে। দেখে সহজ, সরল ও বিনয়ী তবে বেশ আধুনিক। কথা বার্তার একপর্যায়ে সে জানালো যে, সে ইতোমধ্যেই চীনের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়াও পার্শ্ববর্তি দু' তিনটি দেশ একাই ঘুরে এসেছে। ভ্রমণে তার দারুণ সখ। তাই তার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের দেখে মনে হয়েছে আমাদের সহায়তা করা দরকার। সত্যিই চীনারা বন্ধু প্রতীম জাতি। যারা চীনে আসেন নি আর ঘুরে বেড়ান নি তাদের পক্ষে হয়তো দূরে থেকে এটা বোঝা একটু কষ্টকর হবে। সে আমাদের জানালো যেখানে তোমাদের এখন আমি পাঠাচ্ছি তার আশে পাশেই রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্হান। তার কাজ থাকায় সে আমাদের সংগে নিয়ে যেতে না পারায় উল্টো দু:খ প্রকাশ করলো। সিসি আমাদের একটি তিন চাকার গাড়ি ঠিক করে দিল, যাকে আমরা বলি বেবি ট্যাক্সি । পেইচিং-এর উপকন্ঠে এসব গাড়ি মাঝে মাঝে চলাচল করতে দেখা যায়। সিসি শিয়েকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা রওয়ানা দিলাম ঐতিহাসিক কালচারাল স্ট্রিট অর্থাত্ কি না সংস্কৃতি সড়কের উদ্দেশ্যে।
বন্ধুরা, সংস্কৃতি সড়কে ঘুরে বেড়াবার আগে এ শহরের ওপর কিছু কথা আপনাদের জানিয়ে দিই। শহরটি পেইচিং থেকে ১৩৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্হিত থিয়েনচিন মূলত বোহাই উপ সাগর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে গড়ে উঠেছে । চীনের মধ্যে এটি বাণিজ্যিক শিল্প ক্ষেত্রের অন্যতম একটি বড় শহর, একই সংগে বৃহত্তম বন্দর শহরও বটে। অতীতকালে এই বন্দরের কারণেই বিদেশীদের ললুপ দৃষ্টি এর ওপর পড়েছিল। ব্রিটিশ, ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানরা বহুদিন এ শহরটিকে তাদের উপনিবেশ করে রেখেছিল। পরবর্তি সময় ইউরোপরে অন্যান্য দেশসহ জাপানও এ শহরটিকে নিজেদের ব্যবসার কেন্দ্রস্হল হিসেবে করায়ত্ত্ব করে রাখে। এ কারণে শহরটি জুড়ে এখনো এসব দেশের নিজ নিজ স্হাপত্যকলা দেখা যায়। এ শহরটির আয়তন ১১৯১৯.৭ বর্গ কিলোমিটার। সরাসরি চীনের কেন্দ্রীয় সরকার শাসিত তিনটি মিউনিসুপালিটির মধ্যে এটি একটি অন্যতম শহর। মূলত এ শহরটি গড়ে উঠেছিল ছিং ডাইনাস্টির সময় (১৬৪৪ – ১৯১১) একটি ছোট্ট জেলা হিসেবে। ১৯২৮ সালে এটি মিউনিসুপালিটিতে পরিণত হয়। এ শহরটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে গেছে উল্লেখযোগ্য পাঁচটি নদী। এর মধ্যে রয়েছে, ইয়ুংতিং Yongding, তাছিং Daqing, যিয়া Ziya, নানইয়ুনহা Nanyunhe এবং ছাওপাই Chaopai নদী। এসব নদী এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে হাইহা Haihe নদীর মাধ্যমে তাকুখৌ Dagukou দিয়ে বোহাই উপ সাগরে এসে মিশেছে। শহরটি চীনের অন্যান্য শহরের মত অতটা পাহার বেস্টিত নয়। তবে অনেক পাহাড়ও এখানে রয়েছে। (চলবে) –আ.বা.ম. ছালাউদ্দিন।
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |