Web bengali.cri.cn   
ফাংশানের 'ইউন জু' মন্দিরে একদিন-১
  2010-03-04 21:41:03  cri
প্রকৃতি আর ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্হান ঘুরে বেড়ানো আমার খুব ছোট বেলাথেকেই শখ । সময় পেলেই চলে যেতাম আমার দেশের দর্শনীয় স্হানে বা হারিয়ে যেতাম কাছা কাছি কোন প্রকৃতির মাঝে । সাথে সব সময়ই থাকতো একটা ক্যামেরা । আমার মনে আছে স্কুলে যাবার সময় মা'র কাছ থেকে এক আনা করে পেতাম । মাসে দু'একদিন অনেক অনুরোধ করে হয়তো দু' আনাও পেয়েছি । সেই সব টাকা স্কুল সঞ্চয় ব্যাংকে জমিয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ার সময় জীবনে প্রথম পাঁচ টাকা দিয়ে আগফা গেভার্টের একটি মডেল ক্যামেরা কিনেছিলাম । ছবি তুলে কুমিল্লা শহরের রূপায়ন স্টুডিওতে গিয়ে তা আবার প্রিন্ট করতাম । কানুদা ছিলেন স্টুডিওর মালিক । তিনি সেই ছোট বেলায়ই আমাকে ছবি তোলার ক্ষেত্রে যে উত্সাহ দিয়েছেন তা আজীবন স্মৃতির পাতায় লেখা থাকবে । কলেজে ভর্তি হওয়ার পর আবারও টাকা জমিয়ে তিরিশ টাকা দিয়ে কিনেছিলাম একটি রোলিফ্ল্র্যাক্স ১২০ মডেল ক্যামেরা । প্রতিবারে মাত্র ১২টি ছবি তুলতে পারতাম । সে যে কি আনন্দ ছিল তা এখন লাখ টাকার ক্যামেরা কিনেও পাই না । এখনতো ক্যানন আর নাইকনের সর্বশেষ মডেলের ক্যমেরা এবং তার সাথে বিভিন্ন ধরণের লেন্স ও ট্রাইপড ব্যবহার করছি । তারপরও অতীতের স্মৃতি আমাকে নিয়ে যায় এক অনাবিল আনন্দময় স্বপ্নের গভীরতায় ।

ফেংশানের ইউন জু মন্দিরের সামনে লেখক

চীনে আসার পর খুব যে একটা ঘুরেছি তা নয় । কাজের ফাঁকে যতটা পেরেছি আর কি । এবারে বসন্ত উত্সবের ছুটিটা বেশ লম্বাই পেলাম । আগে থেকেই ঠিক করা ছিল যে এবারের ছুটিতে পেইচিং এবং কাছা কাছি দুরত্বের দু'একটি প্রদেশ বা জেলায় যাবো । আমার প্রবীণ সহকর্মী শি চিং উ ভাই আমাকে বেশ কয়েকটি মন্দির মেলার পাশা পাশি পেইচিং-এর উপকন্ঠের একট জেলায় প্রায় দেড় হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো একটি মন্দিরের কথা বললেন । আমি সংগে সংগে তা গ্রহণ করলাম । জানালাম অবশ্যই সেখানে যাবো । সমস্যা দেখা দিল একলা যাবো কি করে । আনেক দূর আবার বাসও পরিবর্তন করতে হবে দু'বার । ভাষাও জানি না । যাও দু'একটা লাইন জানি তাও উচ্চারণগত কারণে অর্থ ভিন্ন হয়ে যায় বলে সহায়তার ইচ্ছা থাকলেও চীনারা তা বুঝতে পারে না বলে সাহায্য পাওয়াটাও খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায় । তারপরও আমার চিরকালীন অদম্য জেদ আমাকে টেনে নিয়ে গেল কাঙ্খিত দর্শনীয় স্হানে । আমার তরুণ সহকর্মী শিয়ে নান তার বাংলা নাম আকাশ আমাকে বাসের নম্বর ও কী ভাবে যাবো তা লিখে দিল । আমাদের বিভাগের পরিচালক স্বতোপ্রণোদিত হয়ে আমাকে আরো উত্সাহিত করলেন যে, তিনি নিজেই খুব ভোরে বাস স্ট্যান্ডে উপস্হিত থেকে আমাকে ফেংশান জেলায় যাবার বাসে উঠিয়ে দেবেন । সত্যিই এসব ঋণে ভরা স্মৃতিকথা ভোলার নয় ।

মন্দিরে প্রর্থনারত একজন চীনা তরুণী

২০ ফেব্রুয়ারির খুব সকালেই কাধে ক্যামেরা আর পিঠে ব্যাগপ্যাক ঝুলিয়ে একদিকে মাইনাস ছয় আর তার সাথে কন কনে উত্তরীয় ঠান্ডা বাতাসকে উপেক্ষা করে রওয়ানা দিলাম । আমি থাকি শিজিংশান জেলার বাবাওশানে রেডিওর মিডিয়া সেন্টার কাম চার তারকা হোটেলের এপার্টমেন্টে । প্রথমে আমাকে যেতে হবে পেইচিং-এর ফেং থাই জেলার লিউ লি ছিয়াও তুং-এ । সেখানে পরিচালক ইয়্যু কুয়াং ইউয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করবেন । আমার আবাসস্হল থেকে সে স্হানটি প্রায় তিরিশ কিলোমিটার দূরে । যেতে প্রায় পঞ্চাশ মিনিটের মত লাগে । কথামত তিনি আসার একটু আগেই পৌঁছে গেলাম সেখানে । বাস স্ট্যান্ডের পাশেই থাকা কেএফসি ফার্স্ট ফুডের দোকানে পরিচালকের সংগে টেলিফোনে আলোচনা অনুযায়ী এককাপ ধূমায়ীত কফির কাপ নিয়ে বসার কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি তার ছেলেকে নিয়ে চলে এলেন । তিনি আমাকে নিয়ে রাস্তা পেরিয়ে উপকন্ঠগামী বাসস্ট্যান্ডে এলেন । অবাক করার বিষয় হলো একই নম্বরের বাস যাচ্ছে বিভিন্ন যায়গায় । বিদেশীদের জন্য সেসব বাস নির্ধারণ করে যাত্রা করা সত্যিই দুসাধ্য । যদিও বাসের নম্বরের পাশেই লেখা রয়েছে সেটি কোথায় যাবে । বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আমার কাঙ্খিত বাসটি এলো । বিশাল লাইন । ভাগ্যিস আমি আগেই রোদেলা এই হীম ঠান্ডায় সবার আগেই দাঁড়িয়েছিলাম । তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠে পড়লাম । সময়ও হলো না ম্যাডামকে তার এই অকৃত্তিম সহায়তার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ দেয়ার । বাস ছুটে চললো ফেংশান জেলার উদ্দেশ্যে । যেতে হবে আরো ৭৫ কিলোমিটার দূরে । আর আমার মাথায় তখন ঘুরছে একাকী আমি কোথায় পরবর্তী বাস স্ট্যান্ড ইউন জু সি ? আমি ঠিকমত নেমে পরের ১২ বা ৩১ নম্বর বাসটি ধরতে পারবোতো ? (চলবে)

--- আ, বা. ম. ছালাউদ্দিন

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040