Web bengali.cri.cn   
শি বাই পোও : চীনের স্বধীনতার পতাকা উড়ার পাদপীঠ – পাঁচ
  2010-01-21 21:30:59  cri

এ বাড়িতে মাও সে তুং থাকতেন

মাও সে তুং এ কথাটা মনে হতেই বুকের ভেতর একটা শির শির করা উত্তেজনা টগ বগ করতে থাকে । আসলে পৃথিবীর সব মহান মানুষের কথা ভাবলেই একটা অন্য রকম অনুভূতি জাগে হৃদয় জুড়ে । আর মাও সে তুং সে তো এক অবিস্মরণীয় মানুষ । সারা পৃথিবীর নির্যাতিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর । আপোষহীন এক নেতা । যার মূল্যায়ন তিনি নিজেই ।

আমরা মাও সে তু-এর কথা আলোচনা করতে করতে পৌঁছে গেলাম তাঁর ঘরটির কাছে । শি বাই পুও সদর দপ্তরের ঘরগুলোর মধ্যে তাঁর ঘরটি একে বারে দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে অবস্হিত । এর পরেই রয়েছে গাছ পালা ঘেরা খোলা জায়গা । এখানকার সব বাড়িগুলোর মতই এটিও একই রকম, একেবারেই সাদা মাটা । ভেতরে বা বাইরে যেখান থেকেই দৃষ্টি দেয়া যাকনা কেন বিশ্বাসই হবে না যে এখানে চেয়ারম্যান মাও সে তুং প্রায় এক বছর ছিলেন । ১৯৪৮ সালের ২৬ মে কমরেড মাও সে তুং এ ঘাটিতে আসার পর থেকে ১৯৪৯ সালের মার্চ পর্যন্ত এখানেই ছিলেন ।

এ বাড়িটির ভেতরে রয়েছে ছোট্ট একটি অঙ্গণ । অর্থাত একটুখানি খোলা জায়গা । এখানে রয়েছে চেয়ারম্যান মাও সে তুং –এর লাগানে একটি গাছ । রয়েছে বসার জন্য ছোট্ট একটি সিমেন্টের তৈরি হাতলো হেলান বিহীন বেঞ্চ । অবসর সময় মাও সে তুং এটির ওপর বিশ্রাম নিতেন । দেয়াল ঘেরা এ বাড়িটিতে ঢোকার মুখেই রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষীদের কক্ষ, এ কক্ষে খুব বেশি হলে তিন/চারজন রক্ষী থাকতে পাবে । পশ্চিম পাশে রয়েছে পানি রাখার ঘর । বাড়ির সামনের খোলা জায়গাটিতে রয়েছে একটি যাতাকল, যাতে সবার জন্য শস্যদানা ভাঙ্গা হতো । এ ছাড়া রয়েছে একটি বড় আকারের পাত্র । যাকে সাধারণত ইংরেজিতে বলা হয় পিগপেন । নিরাপত্তা রক্ষীরা অঙ্গণটি পরিস্কার রাখার জন্য এ দু'টি জিনিস সরিয়ে ফেলতে চেয়েছিল । কিন্তু মাও সে তুং দেন নি । তিনি বিনয় ও আন্তরিকতার সংগে বলেছিলেন "কমরেডস্, প্রতিদিনই চীনের বিপ্লবের উন্নয়ন ঘটছে, তা ছাড়া আমরাতো আর বেশিদিন এখানে থাকবো না, এ সব জিনিসতো সাধারণ মানুষ একদিন ব্যবহার করবে; তাই এ সব জিনিস আমরা এখান থেকে সরাবো না।" সে কারনেই সৈন্যরা এ দু'টি জিনিসকে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করেছিল । গ্রীষ্মকালে প্রায়শ:ই চেয়ারম্যান মাও সে তুং, ঝু দা এবং লিউ শাও চিসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দগণকে নিয়ে এ যাতাকলের পাশে বা গাছের ছায়ায় বসে রাস্ট্রীয় কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করতেন ।

মাও সে তুং-এর বাড়ির পেছনের দিকেও রয়েছে অসংখ্য গাছপালা ।

কক্ষটি ছিল মাও সে তুংয়ের অফিস

বাড়িটির পশ্চিম দিকের অংশের দক্ষিণ দিকের কক্ষটি ছিল মাও সেতুং-এর মেয়ে এবং তার সেবিকার কক্ষ, মাঝখানেরটি ছিল মাও সে তুং-এর পরিবারের থাকা ও খাবার কক্ষ । উত্তর দিকের ঘরটির পূর্ব ও পম্চিমের কক্ষ দু'টি ছিল অফিস ও নিজের বেড রুম । বিমান হামলার সময় এ ঘরটির পেছন দিকের দরজা দিয়ে বেরিয়ে পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেয়া যেতো । ছোট্ট এ কক্ষ দু'টির মধ্যে বেড রুমে গা ঘেষে ঘেষে রয়েছে অতি সাধারণ মানের একটি খাট, লেপ, তোষক ও বালিস, খাটটির সংগে লাগানো বা দিকে ছোট্ট একটি আলমারি এবং ডান দিকে গোসল করার জন্য বাথ টাব । উত্তর পাশের কক্ষটি ছিল মাও সে তুং-এর স্টাডি রুম এবং তথ্য সংরক্ষণের জন্য।

পাশের অফিস কক্ষটিতে রয়েছে একসেট পুরানো দিনের ছোট সাইজের সোফা ও চায়ের টেবিল, অফিসে বসার জন্য চেয়ার ও টেবিল এবং প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র । শি বাই পুওতে তাকার সময় মাও সে দুং খুবই ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন । দিন রাত তাকে কাজ করতে হয়েছে । এ সময় তাঁর পাঁচজন সচিব প্রায়ম:ই একসাথে গোলটেবিলে বসে আসন্ন বিজয়ের জন্য নির্দেশাবলীও কৌশল নিয়ে আলোচনা করতেন । তখন মাত্র এক কিলোমিটার অগ্রগতি অর্জন করতে পারলেই বিজয় নিশ্চিত ছিল । এখান থেকেই লিয়াওশান, হুয়াইহাই এবং পিংজিন ক্যাম্পেও নির্দেশনা পাঠানো হতো । এত কর্মব্যস্ততার মাঝেও মাও সে তুং এখানে বসেই তাঁর অনেক লেখার কাজ সম্পন্ন করেছেন । এর মধ্যে রয়েছে ২০টি কবিতাও । যা পরবর্তি সময়ে তাঁর কাব্যগ্রহ্নে স্হান পেয়েছে ।

এ ছাড়াও মাও সে তুং সাধারণ সেনাদের খোঁজ খবর নেয়ার জন্য প্রায়শ:ই তাদের ক্যাম্প পরিদর্শন করতেন । এরা দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন এবং তারা কেউই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করে নি । মাও সে তুং তাদেরকে বিপ্লবের সাফল্যের লক্ষে জ্ঞান অর্জনের জন্য নির্দেশ দিতেন । এমন কি তিনি তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে কাউকে কাউকে সার্বিক জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠিয়েছিলেন । এ সময় তাদের উদ্দেশ্য মাও সে তুং বলেছিলেন, 'জনগণের সেবার জন্য সর্বন্তকরণে চেষ্টা করো' । এ ছাড়াও বলেছিলেন, 'মনোযোগ দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করো এবং ভবিষ্যতে কঠোর পরিশ্রম করবে' । চেয়ারম্যান মাও সে তুং স্মরণীয় করে রাখার জন্য তাদের সাথে গ্রুপ ছবিও তুলতেন । এ সব সেনারা তাঁর এ নির্দেশ সারা জীবন অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন ।

কম্যুনিস্ট পার্টির সপ্তম সম্মেলনের দ্বিতীয় বৈঠকের পর পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং চীনা গণবাহিনীর সদর দপ্তর পেইপিং (সে কালে পেইচিংকে পেইপিং বলা হতো) যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় । ১৯৪৯ সালের ২৩ মার্চ চেয়ারম্যান মাও সে তুং চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং চীনের গণ বাহিনীর সদর দপ্তর নিয়ে শি বাই পুও থেকে পেইচিং চলে আসেন । তখন তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, 'আমরা লি জিচাং নই, লি জিচাংকে যাওয়ার পরও পরাজিত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছিল । আমরা সেখানে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ও সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্হা নির্মণে কাজ করে যাবো, যতক্ষণ না আমরা সবাইকে সমাজতন্ত্রে দিক্ষিত করে তুলতে না পারবো । (চলবে)

আ বা ম. ছালাউদ্দিন ।

সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন
মন্তব্যের পাতা
ভিডিও চিত্র
সাক্ষাত্কার
চিঠিপত্র
Play Stop
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved.
16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040