শিচিয়াচুয়াংয়ের উন্মুক্ত রেস্তোরাঁ, যেখানে রাতে খেয়েছি
সে যাই হোক, 'শি বাই পুও' ছোট্ট একটি পাহাড়ি এলাকার নাম । একটি অনন্য অমর ইতিহাস । ২০০৭ সালে প্রথম ওখানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার চীনের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু লিয়াও নিং প্রদেশের রাজধানী শেন ইয়াং-এ প্রদেশ সরকারের দপ্তর লিয়াও নিং আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি বিনিময় কেন্দ্রের পরিচালক মি. চাং ই'র আন্তরিক আমন্ত্রণে । সেখানে যাওয়ার পর সরাক্ষনের হাসি খুশি প্রাণোচ্ছল কৌতুকপ্রিয় বন্ধুসহ সিচিয়াচুয়াংয়ের প্রচার কেন্দ্রের পরিচালক ড. সুং চিঁয়ানইয়ঙ ও তার বন্ধু আমাকে যেভাবে তাদের গাড়িতে করে সারা শহর এবং চীনের স্বাধীনতার তীর্থভূমি ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল তা আমৃত্যু মনে থাকবে । একটি কথা এখানে উল্লেখ না করলেই নয় যে, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের একটি সাংস্কৃতিক দলের ম্যানেজার হিসেবে ছিল আমার প্রথম চীন সফর । সেবারে দু'দেশের মধ্যেকার সংস্কৃতি ক্ষেত্রের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল পেইচিংয়ে । তখন আমাদের দলের সংগে এসেছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আজিজুর রহমানসহ দেশের খ্যাতিমান নাট্যকার ও নাট্যশিল্পী মামুনুর রশীদ ও নাট্যশিল্পী তারাণা হালিম (বর্তমানে জাতীয় সংসদ সদস্য), এবং নৃত্যশিল্পী শিবলী, নীপা, মৌ, ইশিতা ও পারভীনসহ ১৮ জন শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব । চীনের বিভিন্ন প্রদেশে অনুষ্ঠান পরিবেশনের পাশাপাশি আমরা সিচিয়াচুয়াং'র এখন যেটা আর্ট সেন্টার অর্থাত আধুনিক মিলনায়তন সেখানেও সংগিত ও নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশন করেছিলাম । এ মিলনায়তনটি তখন সবেমাত্র তৈরি হয়েছিল । সিচিয়াচুয়াং-এ তখন লাইট ও সাউন্ডের দক্ষ প্রযুক্তিবিদ না থাকায় আমাকে পুরো অনুষ্ঠানের সাউন্ড সিস্টেম এবং আমার সহকর্মী মাহফুজকে আলো প্রক্ষেপণের কাজটি নিখুঁতভাবে করতে হয়েছিল মিলনায়তনের পেছন দিকের আলো ও শব্দ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে । ভাগ্যিস আমাদের দু'জনের লাহট ও সাউন্ডের ওপর হালকা প্রশিক্ষণ ছিল । সিচিয়াচুয়াং তখন এখনকার মত এত আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে ওঠেনি । রাস্তা-ঘাটও এতটা চওড়া ও আলো ঝলমলে আধুনিক ছিল না । সে সময় আমরা একট বড় মার্কেটে গিয়েছিলাম । সেটি ছিল রাস্তার দু'পাশ জুড়ে আর মাঝখানে ছিল একটি পারাপারের সেতু । এখন সেখানে গড়ে উঠেছে প্রায় পঁচিশ -তিরিশ তলার বিশাল আধুনিক সুপার মার্কেট । আগের সিচিয়াচুয়াং আর এখনকার সিচিয়াচুয়াং-এর মধ্যে ন্যুনতম মিল খুঁজে পাওয়া যায় না । ন' বছর আগের সে কথা মনে হলে সত্যি স্বপ্নের মত মনে হয় । আমরা সেখানে দু'রাত ছিলাম । অনুষ্ঠনের রিহার্সেল ও পরিবেশনার জন্য সেবার শি বাই পুও যাওয়া হয়ে উঠেনি । ভেবেছিলাম আবারও হয়তো একদিন আসবো । এসেছিলাম ২০০৭ সালে । মুক্তি সংগ্রামের এমন তীর্থভূমিতে যতবার যাওয়া যাবে ততবারই মন ভরে যাবে শান্তি, সম্প্রীতি আর বিজয়ের গৌরবের অহঙ্কারের পরিশুদ্ধ মৌনতায় । আমার সাথে আগেই কথা হয়েছিল আমার চীনা বন্ধু চাং ই'র সংগে । তিনি আমাদের জন্য সেখানে নিজের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে হোটেল বুক করে রেখেছিলেন । বলে রেখেছিলেন ড. সুং'কে । আমি বুলবুল ভাই, মইনুল ভাই এবং আমাদের সংগী হয়েছিল পেইচিংয়ে ডাক্তারি পড়তে আসা ছাত্র ফাওয়াজ একসংগে আমার বাসভবন শিজিংশান জেলায় অবস্হিত চীন আন্তর্জাতিক বেতারের মিডিয়া সেন্টারের এপার্টমেন্ট থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ ক্যামের কাধে ঝুলিয়ে রওয়ানা দিয়ে পোঁছে যাই পেইচিং পশ্চিম রেলওয়ে স্টেশনে । এ যাত্রায় আমাদের উদ্দেশ্য চীনের সর্বোচ্চ গতির বুলেট ট্রেনে যাওয়া । কারন, মইনুল ভাই আর বুলবুল ভাই কবে আসেন ঠিক নেই । তাই দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো । সবাই খুব খুশি এক যাত্রায় দু' ফলের জন্য । বুলেট ট্রেনে চড়ে মনেই হয় নি যে ট্রেনটি এত দ্রুত চলছে । চলছিল সর্বোচ্চ ২৩৭ কিলোমিটারে । এত আধুনিক যে এতে যাতায়াত বিমানের চেয়েও আরামদায়ক । আট ঘন্টার পথ মাত্র চার ঘন্টায় শেষ করে পরন্ত বিকেলে আমরা পৌঁছে গেলাম সিচিয়াচুয়াং রেলওয়ে স্টেশনে । নেমেই দেখি আমাদের জন্য গভীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ড. সুং । হাসি মুখে তিনি সবাইকে স্বাগত জানালেন । তার গাড়িতেই আমরা নির্ধারিত হোটেলের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিলাম । ততক্ষণে দু'পাশের সড়ক আর দোকান পাটে মার্কারি ও নিয়ন বাতিগুলো একটার পর একটা রং বেরংয়ের আলোয় ঝল মল করে জ্বলে উঠতে শুরু করে দিয়েছে । ( চলবে ) --আ বা ম ছালাউদ্দিন
1 2 3 4