|
ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলে এসে দেখতে পান দক্ষিণ ইউরোপের মতো পাথর গলি প্রাচীন নগরে ছড়িয়ে আছে। পাশ্চাত্য স্টাইলের গির্জা, চীনের মন্দির যথাক্রমে চোখে পড়ে। রাস্তায় হাঁটার সময় কানে ভেসে আসে কুয়াংতুং অপেরার আওয়াজ এবং কুয়াংতুং খাবারের সুগন্ধও নাকে চলে আসে। মনে হয়, বিভিন্ন সংস্কৃতি ভরা এক বিশেষ জায়গায় প্রবেশ হয়েছে।
ম্যাকাও জাদুঘরের পরিচালক চেন ইং সিয়ান জানিয়েছেন,
'আমাদের বাম দিকে প্রদর্শিত হচ্ছে চীনের সভ্যতা। ডান দিকে প্রদর্শিত হচ্ছে পাশ্চাত্য সভ্যতা। এখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে শব্দ, দর্শনশাস্ত্র চিন্তাধারা, ধর্ম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইত্যাদি।'
তিনি বলেন, ম্যাকাও প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা সংলগ্নের জায়গা। চীনের কচ্ছপের খোল ও হাড়ের ওপর লিপি আর পশ্চিমা তীরের মুখ আকারের লিপি, চীনের ছিন রাজবংশীয় আমলের সৈন্য ও ঘোড়ার টেরাকোটা আর মধ্য শতাব্দীতে পর্তুগালের সামুদ্রিক জাহাজ, লাওচির ভাবাদর্শ আর আরিস্তোতলের দর্শনশাস্ত্র জাদুঘরের দু'পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সব দিকে ম্যাকাওয়ের চীন ও পশ্চিমা সংস্কৃতির মিশ্রিত থাকার মনোহর শক্তি প্রতিফলিত হয়।
সংস্কৃতি ছাড়া ম্যাকাও জাদুঘরে দক্ষিণ চীনের বিশেষ প্রথা আর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের ভাবও দেখা যায়। জাদুঘরে একটি 'ম্যাকাও রাস্তা' আছে। রাস্তার এক পাশে রয়েছে দক্ষিণ চীনের বসতবাড়ি, এক পাশে রয়েছে পর্তুগালের বসতবাড়ি। সেখানে দাঁড়ালে প্রায়শই শোনা যায় ঐতিহ্যগত ফেরিওয়ালার কণ্ঠস্বর শোনা যায়।জাদুঘর থেকে বের হলে পর্যটকরা আবিষ্কার করবেন যে, ম্যাকাও জাদুঘর ম্যাকাওয়ের ভারী কামান বসানোর মঞ্চের নিচে লুগিয়ে আছে। এ কামান বসানোর মঞ্চ, দা সান পা স্মৃতি খিলান, মেরী রোজ গির্জা, আলোচনা হল, নোচা মন্দির, লু পরিবারের বাড়ি, বন্দর ব্যুরোর ভবনসহ ২২টি ঐতিহাসিক ভবন হচ্ছে ম্যাকাওয়ের প্রাচীন নগরের প্রধান অংশ।
২০০৫ সালের জুলাই মাসে ইউনেস্কোর ২৯তম বিশ্ব উত্তরাধিকার কমিটির অধিবেশনে চীনের 'ম্যাকাওয়ের ঐতিহাসিক নগর অঞ্চলকে' বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে 'বিশ্ব উত্তরাধিকার তালিকায়' অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটা হচ্ছে চীনের ৩১তম বিশ্ব উত্তরাধিকার। ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের পর্যটন ব্যুরোর পরিচালক জোয়াও মানুয়েল কোস্তা আনতুনেস বলেছেন,
'এ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলো হচ্ছে গত ৪০০ বছরে ম্যাকাওয়ে চীন ও পশ্চিমা সংস্কৃতি মিশ্রিত হওয়ার চিহ্ন। এ থেকে আমাদের এ শহরের বিশিষ্টপূর্ণ দিক প্রতিফলিত হয়।'
ম্যাকাওয়ের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারগুলো এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ম্যাকাওয়ে এসে প্রধান দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ ইউরোপের ঐতিহাসিক ভবন আর প্রাচ্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ঐতিহাসিক ভবন ভ্রমণ করার পাশাপাশি পর্যটকরা ৪০০ বছরে চীন ও পশ্চিমার চিন্তাধারা, ধর্ম, বাণিজ্য আর রীতিনীতিসহ নানা সংস্কৃতি ও অর্থনীতির মিশ্রিত উপলব্ধি করতে পারেন। এ ক্ষুদ্র মাটিতে এত বেশি সংস্কৃতি ও ইতিহাস বহন করতে এবং অবশেষে পরস্পরকে গ্রহণ করেছে, অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়েছে। এটা সংস্কৃতির দিকে সত্যি অবাকের বিষয়।
চীনের কোলে প্রত্যাবর্তনের আগে ম্যাকাও নিজের বহুবিধ সংস্কৃতি থাকার বিশেষ তাত্পর্য কেউ লক্ষ্য করে নি। ম্যাকাওয়ের ঐতিহাসিক নগর অঞ্চল বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার পর অনেক ম্যাকাওবাসী আবার নতুন করে নিজের এ শহরের মূল্য পর্যালোচনা করেছেন। ম্যাকাও সংস্কৃতি ব্যুরোতে কর্মরত মাদাম হো লি চুন মনে আছে, ছোট বেলা ম্যাকাওয়ের স্কুলে তিনি হংকংয়ের পাঠ পুস্তক দিয়ে লেখাপড়া করতেন। ফলে অনেক ম্যাকাওবাসী স্বদেশ চীন আর ম্যাকাওয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ওপর খুব ভালো জানতেন না। এখন তিনি মনে করেন, বিশ্ব উত্তরাধিকারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আবেদন করা আর অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মসূচীর গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য আছে।
হো লি চুন মনে করেন, চীনে প্রত্যাবর্তনের পর সংস্কৃতি বিভাগে চাকরি করা খুব আনন্দদায়ক। কারণ বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল সরকার ম্যাকাওয়ের সংস্কৃতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে বরাদ্দ দিয়েছে, তাতে তারা খুব সুষ্ঠুভাবে কাজ চালাতে পারেন। কর্মকর্তারা কাজের সাফল্য বোধ করেন। তিনি বলেন,
'প্রত্যাবর্তনের দশ বছরকে যদি কয়েকটি বাক্য দিয়ে বর্ণনা করতে চাইলে আমরা বলতে পারি, আমরা এক সমৃদ্ধ বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষা করেছি, ম্যাকাওকে পরিসেবা দেয়ার দুটি সাংস্কৃতিক ভিত্তি অর্থাত্ ম্যাকাও শিল্পী ইনস্টিটিউট আর ম্যাকাও জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেছি এবং ম্যাকাও সংগীত উত্সব, ম্যাকাও শিল্পকলা উত্সব, ম্যাকাও বাদ্যযন্ত্র দল আর ম্যাকাওয়ের চীনা বাদ্যযন্ত্র দল এ চারটি বিশ্ব মুখী সাংস্কৃতিক ট্রেডমার্ক গড়ে তুলেছি।'
চীন ও পশ্চিমা সংস্কৃতি মিশ্রণের স্থান হিসেবে ম্যাকাওয়ে ভ্রমণ করার সময় অবশ্যই স্থানীয় সাংস্কৃতিক মনোহর শক্তি অনুভব করা যায়। ম্যাকাওয়ের সংগীত উত্সব আর ম্যাকাওয়ের শিল্পকলা উত্সবসহ নাম করা কর্মকান্ডের মাধ্যমে পর্যটকরা চীনের মূলভূভাগ, ম্যাকাওয়ের স্থানীয় আর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শিল্পীদের চমত্কার পরিবেশনা উপভোগ করতে পারেন। চীন আর বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের গীতিকার ও শিল্পীরা এখনে যথাক্রমে যৌথভাবে গীতিনাট্য, সিমফনি, পিকিং অপেরা, হুনান, ফুচিন ও হোপেই প্রদেশের স্থানীয় অপেরা, লোকসংগীত আর পর্তুগীজ ভাষার নাটক পরিবেশন করেন।
তা ছাড়া ম্যাকাও পর্যটন ব্যুরো সমাধি পরিষ্কার উত্সব, বড় দিন, মাচু সংস্কৃতি উত্সব, যিশু পুনরুত্থান দিবস, দ্বৈত নবম উত্সবসহ নানা ঐতিহ্যগত উত্সবের জন্য নানা বিশিষ্ট্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
পেইচিংয়ে চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ম্যাকাওয়ের ছাত্র সিয়াও মেন বলেছেন,
'আমি সংগীত প্রচার শিখি। আসলে আমার সংস্কৃতি সম্প্রচার শেখা উচিত। ম্যাকাওয়ের সংস্কৃতি খুব মজা। ভালোভাবে তা সম্প্রচার করা উচিত।'
সিয়াও মেন বলেন, তিনি সংস্কৃতি সম্প্রচারের মাধ্যমে ম্যাকাওয়ের ওপর মানুষের ভুল বুঝাবুঝি বদলানো করতে চান। ম্যাকাওয়ে কেবল জুয়া খেলা আছে তা নয়, সেখানে একটি রঙিন সাংস্কৃতি বিশ্বও বটে। (ইয়ু কুয়াং ইউয়ে)
© China Radio International.CRI. All Rights Reserved. 16A Shijingshan Road, Beijing, China. 100040 |